প্রকৃতি দেখে আর শৈশব কৈশোরের কথা ভাবে কবির সাহেব - মোজাফফর বাবু

Home Page » সাহিত্য » প্রকৃতি দেখে আর শৈশব কৈশোরের কথা ভাবে কবির সাহেব - মোজাফফর বাবু
শুক্রবার, ১ মে ২০২০



লেখক মোজাফফর বাবু

সারা বিশ্বের মানবকূল এমনকি হাজার হাজার মাইল দূরে ভূমধ্যসাগরে রনতরী আজ সবই এক কাতারে , থরেথর কম্পন । বিষাক্ত  করোনা ভাইরাসে (কোভিড- ১৯) আক্রান্তে ,জীবন বাচানোর তাগিদে আবদ্ধ ফ্লাটের ভিতর পায়চারী করে কবির সাহেব ফ্লোরে ,টাইলস ওয়ালে সাদা ডেকোরেশন এ সাজে সজ্জিত কয়েকটি টবে বাহারি ফুলের গাছ লাগিয়েছিলেন গ্রিল দেওয়া ঘেরা।
এখন আর ব্যস্ততা নেই অফিস কবে খুলবে তার ও ঠিক নেই কখন শনিবার রবিবার কখন দিবা রাত্র ওয়াল ঘড়িটা টিক টিক করে কটা বাজলো ক্যালেন্ডারের তারিখ সব কিছু যেন একই মনেহয়, বেলকুনি বসে বসে চা খাওয়া পায়চারি করা আর টিভি পেপারে পারে চোখ বুলানো মাঝে মাঝে ভাবে আর কত !
কখনো কখনো মন মনের সীমানা বাদ দিয়ে পাখি ভূপ্রকৃতি জলবায়ুর সান্নিধ্যে জীবনের আঙ্গিনায় কত না কিছুই দোল খায় , দাঁড়িয়ে আমার আঁখি যখন তপবন( বন বাদড়ের) দিকে যায়।গাছ গাছালি হেলে দুলে আলিঙ্গন করে ।ওদের মধ্যে কতই না ভাব প্রকাশ পায়।যেন ওরা সকলে সকলেরই বন্ধু।গাছের পাড়ে বসে দোয়েল ঘুঘু কতই না বাহাস করে।এ ওর বিলি কাটে ,ও ওর বিলি কাটে। কাঠবিড়ালী এ গাছ থেকে ও গাছ ওঠে, পুকুড়ে মাছ যেন কলকল স্রোতে উথাল পাথাল করে,যেন সুখ ও সুখনভর ইতিহাস তুলে ধরে।
তারই মাঝে কোকিলের কুহুকুহু ডাক, যেন নতুন দিনের নতুন বার্তা দেয়।
মনের জানালার বারান্দা নিয়ে যায় পিছন থেকে পিছনে আরও পিছনে সেই শৈশবে মনের মাধুরির সন্ধিখনে রুপালী সুখ ও সুখনভ সোনালী দিন, আজ ও তাকে উদ্ভাসিতা করে তুলে।
কাচা হলুদের মত রং দৃষ্টি নন্দন করা একহারা চেহারা , সব কিছু সে সাবলীল ভাবে নিত । ছিল না কোন রাগ অনুরাগ, চাওয়া পাওয়া , নোট খাতা নিয়ারছলে ,কত না বাহাস হতো !

“মধ্য দুপুরের নিরজন কোনো খানে
কথা হতো না শেষ
উৎদ্বেগ উৎকন্ঠায় সুর ও ছন্দে
লাগতো বেশ”

আর পাঠশালা যাওয়ার কতস্মৃতি দোল খায় , দলবেঁধে সহপাঠীদের সাথে যাওয়া আসা মা-র সাথে বায়না রাগ অনুরাগের শেষ ছিল না । পাঠশালায় যাওয়ার সময় মা বলতেন খোকা বাড়ীর কাজ গুলো ঠিকমত করে নিয়ে আসিস, । পন্ডিত মশাই যা বলবে তায় শুনিস , ক্লাসে গল্প করিস না । স্কুলে যাওয়ার সময় শাড়ীর আঁচল থেকে আধুলি দিয়ে বলতেন ‘ টিফিনের সময় কিছু কিনে খাস ‘ ।
অনেক সময় দুরান্ত সাথীদের নিয়ে , টিফিন বেলায় স্কুল পালিয়ে আজ ও দৌড় কাল ও দৌড় , তপ্ত দুপুরে সদলবলে স্টেডিয়ামের পাশে জলকল পুকুরে . ।, দীর্ঘক্ষণ গোসল করে বাড়ী ফিরলেই , মা চেহারা দেখেই সবকিছু বুঝে যেতেন । ” আসুক তোর বাবা একে তোর টনসিলের ব্যাথা , আবার পুকুরে ভিজে আসলি ” খুব ভয়ে ভয়ে থাকতাম , অবশ্য বাবা আসলে কিছু বলতো না।
পরের দিন বিধিবাম , বাবার হাত থেকে তো বাঁচলাম কিন্তু ক্লাস টিচারের হাত থেকে তো বাঁচার উপায় নেই , স্কুল পালানোর অপরাধে ক্লাস টিচার হাই বেঞ্চে কান ধরাতেন । সেসব দিনগুলো যেন হারিয়ে গেছে, পরে আছে এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ! এসব মধুর স্মৃতি মনে যখন উঁকিঝুঁকি মারছে ।
কবির সাহেবের একমাত্র মেয়ের নাম আদুরিনী।”বাবা, বাবা ! তোমার মোবাইল বাজচ্ছে ।” আরেক হাতে গরম কফি দিয়ে বললো আমি রান্নাঘরে চললাম।নাহলে বিড়ালে সব মাছ খেয়ে যাবে।কবির সাহেব বললো,”মা, বিড়ালেরও তো হক আছে।” “আর আমাদের তো হক নেই তাই না বাবা”,বলেই রান্নাঘরের দিকে রওনা হয়ে গেল।মোবাইল ফোনটা নিয়ে দেখে সেই মোবাইল কোম্পানীর একই প্যাচাল।সেই অতীতের স্বর্ণালী দিনের কথায় যেন ছেদ পড়ল।হিমেল বাতাস গায়ে লাগলো।নিজেকে বেশ প্রফুল্ল লাগছিল।

আবহমান বাংলায় বৈশাখীর প্রকৃত বৈশিষ্ট্য , গগনে মেঘের ঘনঘটা ঝড় ঝন্জা মুসল ধারায় বৃষ্টি ।তার মেজাজি রুপ , রুক্ষতার মধ্যে তেতো গরমের উপর ঝড় বৃষ্টির পর প্রকৃতি রুপ বদলায় , সময়ে সময়ে রংধনু আবীর ছড়ায় যে হিমেল পরশে এক ঘেঁয়ে জীবনের শরীরে স্বস্তির পরশ বুলায় এ যেন আবহমান বাংলায় বিধাতার রুপের এক অপরুপ সৃষ্টি ।

এ হাওয়ায় মন প্রান জুড়িয়ে যায়। ওই দূর থেকে দূর নীলিমায় ,খন্ড খন্ড শ্বেত মেঘ ভেসে ভেসে চলে।তারই পাশ দিয়ে মেঘের দল যেন প্রকৃতির সৌন্দর্যকে আরও উদ্ভাসিত করে তোলে ।প্রকৃতি প্রেমীরা এই নৈসর্গিক দৃশ্য দেখেজীবনের সুর ও ছন্দ খুঁজে পায়।নিত্য নতুন মনোভাব আবেগ অনুভূতি প্রেম জন্মায়,সেও যেন প্রকৃতির অংশীদার হতে চায় ।ওই শ্বেত মেঘের পাশ দিয়ে যখন সাদা সাদা বকগুলো দলবেঁধে ওড়ে ।ওরা যেন নতুন স্বজনের বাসায় উড়ে উড়ে চলেছে । আর আমরা বদ্ধ ঘরেবসে আছি দিনর পর দিন, দিন যেন পার হয় না ।

সেই আর্য দ্রাবিড় সভ্যতার মধ্য দিয়ে মানুষের জীবন যাত্রা স্বর্ন শিখরে পৌছাল, মানুষ আজ ৭০০০ হতে ১০০০০ অব্দে — বিংশ শতাব্দীতে এসে , আলোক বর্ষ ও
ব্ল্যাকহোল আবিস্কার করে ।সেই সভ্যতার ক্রমবিকাশের বুকে তীর ছুড়ে করোনা ভাইরাস (কোভিড- ১৯) । তার কাছে আত্মাসম্পরপন করে চারদিয়ালের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে , ফ্লাটের ঐ বেলকুনিতে আতংকিত হয়ে বশে আছি আনমনা হয়ে ।

আমরা মানবজাতি আজ বন্দী। রাজা , মহারাজা , উজিড় , নাজীর , শ্রমজীবী
সবাই যেন একই কাতারে ।এই মাধ্যমে মানুষের মধ্যে দন্দ সংঘাত ছেড়েমানুষ যেন নতুন সমাজ তৈরীর কথা মনে আঁকুপাঁকু করছে। করোনা ভাইরাস যেন শিখিয়ে গেলো জাতপাত ভেদাভেদ ভুলে মানুষ মানুষের জন্য ,
মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়াবে বিপদ আপদে থাকবে , এখান মানব কূল নতুন তত্ত্ব উপাত্তের মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে ও হিমশিম খাচ্ছে ।
আর পাখপাখালি ,গাছগাছালি ,প্রকৃতি মানবের উপর চেয়ে ক্রু্র হাসি হাসছে তারা যেন আজ মুক্ত স্বাধীন ,ভাইরাসের কারনে মানুষ আজ বন্দী সেই খবর তাদের জানতে বাকি নেই।
তাই নিজেদের নিরাপদ ভেবে গভীর সমুদ্র থেকে বের হয়ে বিরল প্রজাতি কচ্ছপরা বাচ্চা দেওয়ার জন্য থাইল্যান্ড সুমুদ্র উপকূলে আসছে, আবার ডলপিনরা চলমান প্রক্রিয়ার কক্সবাজারে এসে ক্রিয়া কসরত দেখিয়ে যাচ্ছে । চলমান পৃথিবীতে এ সার্বিক সংকট কাটিয়ে বহুত চড়াই উৎরাই পার করে ইবোলা , টিবি , পোলিও এর ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়ে মানুষ তার ভালোবাসার জীবনে ফিরেছে ।আমরা আশাবাদী মানুষ ,আশায় বাঁধি ঘর ।এ করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে অবশ্যই পরিত্রান পাব ।নতুন চলমান পৃথিবীতে প্রকৃতির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রত্যেকে যে এই সমাজের অংশীদার তাদের স্ব স্ব স্থানকে ছেড়ে আমরা সুখ ও সুখনভ করে তুলব ।

এই ফাকে আদুরিনী মা এসে বলে ” বাবা আজকে কিন্তু টবে ফুল গাছে তোমার পানি দেওয়ার কথা, তোমারতো ভুলা মন জানো বাবা গোলাপ গাছে কলি আর পেয়ারা লেবু গাছে ফল আসছে । কবির সাহেব বলে আচ্ছা মা আর মনে মনে ভাবে ডায়বেটিস এর রোগী কিছু কর্মসম্পাদন করলে শরীর ও মন উভয়ই প্রফুল্ল থাকে!!!

বাংলাদেশ সময়: ১৮:২৪:১১   ১১২৪ বার পঠিত   #  #  #




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

সাহিত্য’র আরও খবর


সাধক কবি রামপ্রসাদ সেন: স্বপন চক্রবর্তী
ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা “আমি তো গাঁয়ের মেয়ে ”
৫০ বছরের গৌরব নিয়ে জাবির বাংলা বিভাগ বিশাল ‘সুবর্ণ জয়ন্তী’ উৎসব আয়োজন করেছে
অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা- ‘তোমার খোঁজে ‘
অতুলপ্রসাদ সেন: ৩য় (শেষ ) পর্ব-স্বপন চক্রবর্তী
অতুলপ্রসাদ সেন;পর্ব ২-স্বপন চক্রবর্তী
অতুলপ্রসাদ সেন-স্বপন চক্রবর্তী
অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা ” যাবে দাদু ভাই ?”
বাদল দিনে- হাসান মিয়া
ইমাম শিকদারের কবিতা ‘ছোট্ট শিশু’

আর্কাইভ