আজ মহান মে দিবস।১৮৮৬ সালের ১লা মে উত্তর আমেরিকার শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ফল আজকের মে দিবস।ঐদিন শ্রমিকেরা তাদের ন্যায্য মজুরী ও দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের জন্য স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন করে।অবশেষে এ আন্দোলনে শ্রমিকেরা সফল হয়।
কিন্তু আসলেই কি তারা তাদের ন্যায্য মজুরী পাচ্ছে?
তারা কি তাদের প্রাপ্র্য দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজ করছে নাকি এর থেকে বেশি সময় কাজ করতে তাদের বাধ্য করা হচ্ছে?
যদি আমরা চোখ খুলে তাকাই তবেই দেখতে পাই শ্রমিকেরা তাদের ন্যায্য মজুরী থেকে বঞ্চিত।তাদের নির্ধারিত সময় থেকে অতিরিক্ত সময় কাজ করতে হচ্ছে।শুধু তাই নয়।সমাজের সবচেয়ে নিপীড়িত-নির্যাতিত ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষ হচ্ছে এই শ্রমিকেরা।অথচ এই শ্রমিকেরাই দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখে।দিনের পর দিন কঠোর পরিশ্রম করে সমাজ তথা দেশকে উন্নতির শিখরে নিয়ে পৌঁছায়।রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রতিনিয়ত হাড় ভাঙা কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে এই শ্রমিকেরা।শিল্প,কারখানা,গার্মেন্টস,ফ্যাক্টরী সব জায়গাতেই আজ শ্রমিকেরা তাদের ন্যায্য মজুরী তথা সব ধরনের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত।বিদেশের মাটিতে যারা দিনের পর দিন কঠোর পরিশ্রম করে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাচ্ছে তাদেরও দেয়া হয় না প্রাপ্য সম্মানটুকু।অথচ তাদের পাঠানো রেমিটেন্সে দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখে।নয়তো বা দেশের অর্থনৈতিক চাকায় জঙ ধরে মাঝপথেই আটকে যেত বিশ্বে মাথা উচু করে দাঁড়াবার স্বপ্ন।
যাদের হাড় ভাঙা শ্রমের টাকা দিয়ে আমরা বিশ্বে মাথা উচু করে দাঁড়াবার স্বপ্ন দেখি তারাই আজ অবহেলিত।আর ঐ শ্রমিকের শ্রমের টাকা দিয়ে যারা মাসের মাস লক্ষ লক্ষ টাকা বেতন পায় তারাই দেশের ভিআইপি।
কি আশ্চর্য ব্যাপার!
যারা টাকা আয় করে তারা অবহেলিত,তারা নিচু শ্রেণীর মানুষ।
আর যারা ঐ নিচু শ্রেণীর মানুষের অর্জিত অর্থ দিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছে তারাই দেশের ভিআইপি।তাদের জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক রয়েছে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা।কিন্তু ঐসব শ্রমিকদের নেই সরাসরি রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সুযোগ সুবিধা।
আজ বিবেক জাগ্রত করুন।সুস্থ মস্তিষ্কে ভেবে দেখুন কারা দেশের ভিআইপি।সরকারি চেয়ার দখল করা আপনি ভিআইপি নাকি যাদের ত্যাগের ফলে গঠিত এই চেয়ার তৈরি তারা ভিআইপি।আপনি এই চেয়ারে বসার ফলে মাসের মাস বেতন পাচ্ছেন।অধিক মূল্যের গাড়িতে ছড়ছেন।কারা দিচ্ছে আপনার বেতনের টাকা?কাদের উপার্জিত অর্থ দিয়ে আপনি দামি গাড়িতে ছড়ছেন?
ভেবেছেন কি কখনো?
আপনি এই চেয়ারে বসার ফলে বেতন পাচ্ছেন।আর এই চেয়ারটিই তৈরী করেছে ওরা।আর ওদের চেয়ারে বসেই আপনি ভিআইপি!
দারুণ ব্যাপার তো!
শুনুন- ভিআইপি আপনি নন।ভিআইপি হচ্ছে এসব শ্রমজীবী মানুষেরা।যারা দিনের পর দিন হাড় ভাঙা কঠোর পরিশ্রম করে আপনার বেতন দিচ্ছে।যাদের হাড় ভাঙা পরিশ্রমের ফলে দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল থাকে।তারাই ভিআইপি।রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বাকৃতি দিতে হলে একমাত্র তাদেরকেই ভিআইপি হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে।রাষ্ট্রের সর্বোচ্ছ সুযোগ সুবিধা একমাত্র তাদেরই কাম্য।
বন্ধ করুন সবধরনের তামাশা।সুবিধা বঞ্চিত এসব শ্রমিকদের মর্যাদা দিতে শিখুন।দেখুন বর্তমান পরিস্থিতে যদি এই শ্রমিকেরা কাজ না করে তাহলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে।আজ মৃত্যুর ভয়কে উপেক্ষা করে এই শ্রমিকেরাই হাড় ভাঙা কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে।আর ঐ চেয়ারে বসে দেশের এই করুণ পরিস্থিতে আপনারা ভিআইপি হয়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মর্যাদা পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।সরকারকে ইন্দন জোগাচ্ছেন আপনাদের সর্বোচ্চ মর্যাদা দিতে।কিন্তু একটিবারও ঐসব শ্রমিকদের কথা ভাবেননি।
দয়াকরে ঐসব শ্রমিকদের কথা ভাবুন।ওদের সাথে মিশতে চেষ্টা করুন।ওদের দুঃখ বুঝতে চেষ্টা করুন।দেখবেন দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়।আর যখন দেশ উন্নতির দিকে ধাবিত হবে,তখন আপনার মর্যাদা এমনিতেই বাড়বে।আপনি শুধু এখন ঐসব শ্রমিকদের মর্যাদা দিন।তাদের ন্যায্য মজুরীটুকু দিতে আপনি অগ্রণী ভূভিকা রাখুন।তাদের নির্ধারিত সময় দৈনিক ৮ ঘণ্টার অধিক যেন কেউ কাজ করাতে না পারে তার জন্য আপনি আপনার অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখুন।মনে রাখবেন তারাও তো মানুষ।আপনার যেমন বিশ্রামের প্রয়োজন, ভ্রমণের প্রয়োজন,রাষ্ট্রের সুযোগ সুবিধা পাওয়ার প্রয়োজন।ঠিক তাদেরও এমনটাই প্রয়োজন।
সবশেষে- স্যালুট জানাই ঐসব শ্রমিকদের যাদের হাড় ভাঙা শ্রমের ফলে দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল।বিদেশের মাটিতে দিনের পর দিন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যাদের প্রেরিত রেমিটেন্সের ফলে দেশের অর্থনৈতিক চাকা ঘুরে তাদের।অন্তরের অনস্তল থেকে তাদের প্রতি জানাই শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
।রাষ্ট্র কর্তৃক ওদেরকেই ভিআইপি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হোক।রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধার আওতায় তাদের আনা হোক।
মহান মে দিবস অমর হোক।সবাইকে মে দিবসের শুভেচ্ছা।
লেখক-
হাসুসিয়ান আবু তালহা বিন মনির,
কবি ও প্রাবন্ধিক,
সাধারণ সম্পাদক-
হাওর সাহিত্য উন্নয়ন সংস্থা(হাসুস)-বাংলাদেশ,সুনামগঞ্জ জেলা শাখা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:২৯:২৭ ৭৬১ বার পঠিত