বঙ্গ-নিউজ: দেশে দ্রুতগতিতে বেড়ে চলেছে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। অসংখ্য চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মি ইতিমধ্যেই করোনায় অক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত হয়েছেন বিপুল সংখ্যক পুলিশ। এমন পরিস্থতিতে চিকৎসাকেন্দ্র বৃদ্ধি করা খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে। দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকায় বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসার অনুমতি দিতে শুরু করেছে সরকার। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্নের সুরাহা এখনও হয়নি।
সরকারি হাসপাতালগুলো কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসা দিচ্ছে বিনা খরচে। বেসরকারি হাসপাতালে রোগীর খরচ কীভাবে নির্ধারণ হবে, সরকার কীভাবে কতটা সহযোগিতা দেবে, হাসপাতালে ব্যবস্থাপনার ধরন কেমন হবে, সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় সেখানে কতটা থাকবে- সেসব প্রশ্নের উত্তর এখনও মেলেনি।
বেসরকারি হাসপাতালগুলো বলছে, তারা কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসা দিতে প্রস্তুত, সেজন্য সরকারের সহযোগিতা তাদের দরকার। কিন্তু সহযোগিতার প্রশ্নে একেক হাসপাতালের চাহিদা একেকরকম।
আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি হাসপাতালে না কুলালে বেসরকারি হাসপাতালের সহায়তা নিতেই হবে। তার আগেই তারা বিষয়গুলোর সুরাহা করবেন।
বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য হাসপাতাল বানানোর কাজ শেষের পথে। সরকারি হিসেবে ইতোমধ্যে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা সাত হাজার ছাড়িয়ে গেছে। মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৬৩ জন হয়েছে।
আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুশতাক হোসেন বলেছেন, রোগীর চাপ যেভাবে বাড়ছে তাতে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতেই হবে।
তিনি বলেন, “যেসব হাসপাতাল কোভিড-১৯ এর চিকিৎসা করবে তাদের রোগ নির্ণয়ের সুবিধা থাকতে হবে। তা না হলে রোগীদের এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে দৌড়াতে হবে।”
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেবা দিতে ইচ্ছুক হাসপাতালগুলোর কয়েকটি এখনও প্রস্তুতি শেষ করতে পারেনি। আর যারা অনুমতি পেয়েছে, তাদের ব্যবস্থাপনা নিয়ে ইতোমধ্যে অভিযোগ এসেছে রোগীদের কাছ থেকে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলছেন, যেসব হাসপাতাল কোভিড-১৯ এর চিকিৎসা দিতে চায়, তাদের ব্যবস্থাপনার বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি চুক্তিতে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খরচের বিষয়টাও সেখানে নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।
“এটা আলোচনার ভিত্তিতে হবে। আমরা একটা চুক্তিতে আসব, যাতে উভয়পক্ষের স্বার্থ ঠিক থাকে। এটা অলরেডি মন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে।”
চুক্তির অগ্রগতি জানতে চাইলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান খান বলেন, “মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা কোভিড চিকিৎসায় কয়েকটি হাসপাতাল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।”
তিনি জানান, সাজেদা ফাউন্ডেশন, রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় এখন কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
হলিফ্যামিলি হাসপাতাল, আনোয়ার খান মডার্ন, ইউনিভার্সাল মেডিকেল প্রস্তুতি শেষ করেছে।
ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা সেই হাসপাতালেই চলবে । ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতাল (সাবেক অ্যাপোলো), স্কয়ার হাসপাতাল ও ইউনাইটেড হাসপাতাল শুধু তাদের ভর্তি রোগীদের নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার অনুমতি পেয়েছে।
আর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ইউএস-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতাল বাইরের রোগীদের নমুনাও পরীক্ষা করতে পারবে।
সিলেট, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি করে বেসরকারি হাসপাতালও কোভিড-১৯ চিকিৎসায় নির্ধারিত করার প্রস্তাব রয়েছে বলে হাবিবুর রহমান জানান।
তিনি বলেন, “এখনও সরকারি হাসপাতাল খালি আছে, এ কারণে বেসরকারি হাসপাতালের সহায়তা অত বেশি এখনই লাগছে না। যদি রোগটি আরও ছড়াতে থাকে তাহলে আরও হাসপাতাল নিতে হবে। তখন তাদের সঙ্গে কথা বলে নেব।”
বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীর খরচ কীভাবে নির্ধারণ করা হবে সেটা ঠিক করতে কাজ চলছে বলে জানান হাবিবুর রহমান।
তিনি বলেন, “একেক হাসপাতালের চাহিদা একেক রকম। কেউ পরিচালন ব্যয়ের কথা বলছে। কেউ বলছে কর্মীদের বেতন দিয়ে দেওয়ার জন্য। আমরা বলেছি পরিচালন ব্যয় এ কারণে যেটুকু আসে সেটা আমরা দেব। চিকিৎসক-নার্সের বেতন তো হাসপাতাল বন্ধ থাকলেও মালিকদের দিতে হত।”
সমন্বয়ের কাজটি কীভাবে হবে- সেই প্রশ্নে অতিরিক্ত সচিব বলেন, বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করবে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিষয়টি তদারক করবে।
ইতোমধ্যে কোভিড-১৯ রোগী ভর্তি শুরু করা রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহেদ বলেন, এ রোগের চিকিৎসায় যেসব সরঞ্জাম আর ওষুধ লাগছে, তারা তা সরকারের কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে পাচ্ছেন। হাসপাতালের বেডের কোনো ভাড়া তারা রোগীদের কাছ থেকে নিচ্ছেন না। অন্যান্য খরচ রোগীর কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে।
“আমাদের প্রচুর টাকা খরচ হচ্ছে। একজন রোগীর পেছনে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। আইসিইউ সাপোর্ট লাগলে সেটা আমরা বহন করছি। আমরা এখনও আশ্বাসের মধ্যেই আছি। চিকিৎসা বাবদ এখনও কোনো টাকা আমরা পাইনি।”
বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এ মুবিন খান বলছেন, পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে প্রয়োজনে সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোও কাজে লাগাতে পারে। তবে সেজন্য সরকার ব্যয় নির্বাহের একটি‘যৌক্তিক অংক’ ঠিক করে দেবে বলে তার প্রত্যাশা।
“এখানে দর কষাকষির কোনো ইস্যু নেই। শুধু চিকিৎসার খরচ দিলেই আমরা কাজ করতে পারব।”
তবে বেশিরভাগ বেসরকারি মেডিকেলে স্থায়ী চিকিৎসক না থাকায় তাদের পক্ষে সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন সম্পর্কিত জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি রশিদ-ই-মাহবুব।
তিনি বলেন, “দুয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালের নিয়মিত চিকিৎসক আছেন। বেশিরভাগই ক্লিনিক। তাদের তো বেশিরভাগ চিকিৎসকই অন-কলে আসেন। যদি ডাক্তারই না থাকে, তাহলে তারা কীভাবে চিকিৎসা দেবেন?”
বাংলাদেশ সময়: ১০:১৪:০৫ ৫৫৮ বার পঠিত # #করোনা ভাইরাস #মহামারি আকারে করোনা ভাইরাস #সারা বিশ্বে করোনা