স্বপন চক্রবর্তী, বঙ্গ-নিউজ:করোনাভাইরাসের আক্রমণে সারা বিশ্বে বেড়েই চলেছে মৃত্যুর সংখ্যা। এ যেন এক বল্গাহীন অশ্ব। কিছুতেই তাকে লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। পনের দিনে এক লক্ষ বেড়ে বিশ্বজুড়ে নতুন করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়েছে; আর এই মৃত্যুর এক-চতুর্থাংশই ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে।
চীনে প্রাদুর্ভাবের ৯০ দিন পর গত ১০ এপ্রিল কোভিড-১৯ মহামারীতে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা লক্ষ ছুঁয়েছিল।
তার আট দিন পর ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু এই সংখ্যাকে দেড় লাখ ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। তার পরের ৫০ হাজারের মৃত্যু ঘটেছে সাত দিনে।
জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির শনিবার রাতে হালনাগাদ করা তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে নতুন করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৬৯৮ জন।
এই সময়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ লাখ ৬৫ হাজার ৯৩৮ জন। আর সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৮ লাখ ১০ হাজার ৩২৭ জন।
মৃত্যুর মতো আক্রান্তের সংখ্যায়ও বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র; মোট কোভিড-১৯ রোগীর এক-তৃতীয়াংশই ওই দেশটির নাগরিক।
বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯ লাখ ১৯ হাজার; আর মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫২ হাজার। দেশটিতে আক্রান্তদের মধ্যে ৫ দশমিক ৭ শতাংশেরই মৃত্যু ঘটেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বিপর্যয়কর অবস্থা নিউ ইয়র্কে; শুধু এই শহরেই মৃতের সংখ্যা ১৬ হাজারের বেশি।
যে দুই লাখের মৃত্যু ঘটিয়েছে করোনাভাইরাস, তার অর্ধেকের বেশি মানুষ ইউরোপের।
লক্ষ প্রাণ কেড়ে নিল করোনাভাইরাস
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে মানবদেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রথম ঘটনা শনাক্ত হয়। তার প্রায় এক মাস পর প্রথম মৃত্যুটি চীনে ঘটেছিল ১১ জানুয়ারি।
চীনের বাইরে প্রথম মৃত্যুটি ঘটেছিল প্রায় এক মাস পর ২ ফেব্রুয়ারি ফিলিপিন্সে। সেদিন মোট মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৩৬২।
মৃতের সংখ্যা ১ হাজারে পৌঁছেছিল ১০ ফেব্রুয়ারিতে। অর্থাৎ প্রথম মৃত্যুর পর মৃতের সংখ্যা ১ হাজারে পৌঁছতে লেগেছিল ঠিক এক মাস। এরপর মৃতের সংখ্যা দুই হাজারে যেতে সময় লাগে ৮ দিন।
তার এক মাস পর ১৯ মার্চ মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়ায়। এরপর ইউরোপে কাবু হয়ে যাওয়ায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে মৃত্যু। প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার মৃত্যু ঘটতে থাকে।
ইতালির একটি হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন এক রোগী ধরতে চাইছেন এক চিকিৎসাকর্মীর হাত। ছ এরপর এখন যুক্তরাষ্ট্র করোনাভাইরাসে নাকাল হলেও ইউরোপে মৃত্যু ও আক্রান্তের গতি বৃদ্ধি কমে আসছে। এই কারণে তারা লকডাউনও শিথিলের পথে হাঁটছে।
এরপর আফ্রিকা এই মহামারীর নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে বলে ইতোমধ্যে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)।
করোনাভাইরাস মহামারীর শুরুতে ডব্লিউএইচও আক্রান্তদের মধ্যে ২ শতাংশের মৃত্যুর আশঙ্কার কথা জানিয়েছিল।
সেটা ছিল ফেব্রুয়ারি মাসের ঘটনা; তারপর পরিস্থিতির ভয়াবহতা দেখে ৩ মার্চ বলেছিল, মৃত্যুর হার ৩ দশমিক ৪ শতাংশে যেতে পারে।
কিন্তু মৃতের সংখ্যা যখন লাখ ছাড়ায়, তখন দেখা যায় আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৬ শতাংশ মৃত্যুর করাল গ্রাসে পড়ছে। এই সংখ্যাটি যখন দুই লাখ ছাড়াল, তখন হারটি বেড়ে ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ১০ দিনে মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে ৫০ হাজার ছাড়ায়। গত ২৪ ঘণ্টায় ৮১৩ জনের মৃত্যু যুক্তরাজ্যেও মৃতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে নিয়ে গেছে।
তবে মৃতের সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের পর এখনও রয়েছে ইতালি, স্পেন ও ফ্রান্স। তারপরই যুক্তরাজ্যের অবস্থান। এর পরে রয়েছে বেলজিয়াম, জার্মানি, ইরান, চীন ও নেদারল্যান্ডস।
বাংলাদেশ সময়: ৯:৫৫:০২ ৬৮৫ বার পঠিত # #করোনা ভাইরাস #মহামারি আকারে করোনা ভাইরাস #সারা বিশ্বে করোনা