স্ট্যানফোর্ডের গবেষণা: করোনাভাইরাস সংক্রমণ অন্তত ১১ কোটি মানুষে!

Home Page » প্রথমপাতা » স্ট্যানফোর্ডের গবেষণা: করোনাভাইরাস সংক্রমণ অন্তত ১১ কোটি মানুষে!
রবিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২০



নতুন করোনাভাইরাসের উৎসস্থ চীনের উহান থেকে ফিরে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন পর্ব শেষ করার পর নিরোগ থাকায় উল্লসিত ক্যালিফোর্নিয়ার একদল বাসিন্দা। ফাইল ছবি: রয়টার্স

স্বপন চক্রবর্তী,বঙ্গ-নিউজ:  চীনের উহান প্রদেশে উৎপত্তিস্থল হলেও সারা বিশ্ব এখন কোভিড-১৯ এ কমবেশী আক্রান্ত। বিশ্বে এখন পর্যন্ত নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২৩ লাখ বলে জানা গেছে; তবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকদের কথা ঠিক হলে এই সংখ্যাটি কম করে হলেও ১১ কোটি ৫০ লাখ।

এই সংখ্যাটি এত বেশি কীভাবে?- উত্তরে তারা বলছেন, অনেকের দেহে ভাইরাস সংক্রমিত হলেও তার কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায়নি, অর্থাৎ তিনি অসুস্থ হননি। ফলে তার হাসপাতালে যাওয়ারও প্রয়োজন পড়েনি, পরীক্ষা না করায় রোগীর হিসাবের মধ্যেও তিনি আসেননি।

নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্তের মোট সংখ্যা শনাক্ত রোগীর সংখ্যার চেয়ে বেশি বলে বিশেষজ্ঞরা বলে এলেও তা যে এত বেশি হতে পারে, তা জানা গেল যুক্তরাজ্যের দৈনিক গার্ডিয়ান এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায়।

গার্ডিয়ান জানিয়েছে, স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকদের এই গবেষণাপত্র শুক্রবার প্রকাশিত হলেও তা এখনও বিশেষজ্ঞদের দ্বারা মূল্যায়িত হয়নি।

ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা ক্লারা কাউন্টির ৩ হাজার ৩৩০ জন ব্যক্তির উপর পরীক্ষা চালিয়ে এই গবেষকরা বলছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা জানা সংখ্যার চেয়ে ৫০ থেকে ৮৫ গুণ বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের করোনাভাইরাসের প্রথম প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় ক্যালিফোর্নিয়াতেই, এখন অবশ্য নিউ ইয়র্কসহ পূর্বাঞ্চলই বেশি বিপর্যস্ত।

ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা এখন ৩০ হাজারের মতো; এর মধ্যে সান্তা ক্লারায় সরকারি হিসাবে আক্রান্ত ১ হাজার ৮৭০ জন, তার মধ্যে ৭৩ জন মারা গেছেন। তবে গবেষণাটি যখন চালানো হয়, তখন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ হাজারের মতো, আর মারা গিয়েছিলেন ৫০ জন।

স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকদের দাবি, সান্তা ক্লারায় আসলে ৪৮ হাজার থেকে ৮১ হাজার মানুষের দেহে নতুন এই করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঘটেছে, যা শনাক্ত সংখ্যার চেয়ে বহু গুণ বেশি।

গবেষকগণ বলছেন মানবদেহের প্রাকৃতিক সুরক্ষা ব্যবস্থা অ্যান্টিবডি  যা পরীক্ষা করেই তারা বিপুল সংখ্যকের আক্রান্ত হওয়ার দাবি করছেন।

যে কোনো রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা মানুষের দেহে সব সময়ই কার্যকর থাকে।

মানুষের দেহে যখন বাইরে থেকে অচেনা কিছু প্রবেশ করে, শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা যদি তাকে ক্ষতিকর সন্দেহ করে, তখন তা ঠেকাতে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। সেই অ্যান্টিবডি তখন নির্দিষ্ট ওই জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে থাকে। এই লড়াইয়ে জীবাণু জিতলে মানুষ অসুস্থ হয়।

এই অ্যান্টিবডি তৈরি হয় বলেই প্রতিনিয়ত নানা রোগ-জীবাণুর মধ্যে থেকেও মানুষ অসুস্থ না হয়ে সচল থাকে। তবে যার প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হয়, তিনি অসুস্থ হন।

স্ট্যানফোর্ডের এই গবেষক দল সান্তা ক্লারার বাসিন্দাদের মধ্যে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পরীক্ষা করে রোগীর সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি বক্তির মধ্যে তা দেখতে পেয়েছেন। অর্থাৎ কোনো না কোনো পর্যায়ে তাদের দেহেও ভাইরাস সংক্রমণ ঘটেছিল, কিন্তু সুবিধা করে উঠতে পারেনি বলে তাদের হাসপাতালে যেতে হয়নি।

এর ভিত্তিতে তারা বলছেন, নতুন করোনাভাইরাস (সার্স সিওভি-২) সার্স কিংবা মার্সের চেয়ে ভয়ানক অবস্থা তৈরি করলেও যে মাত্রায় ভয়ঙ্কর বলা হচ্ছে, আসলে ততটা না। যেমন এখন শনাক্ত আক্রান্তের সংখ্যার সঙ্গে তুলনা করে যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের হার ৪ দশমিক ১ শতাংশ বলা হলেও অশনাক্ত ব্যক্তিদের হিসেবে ধরলে মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক ১২ থেকে শূন্য দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসবে।

শুধু জেলার মতো একটি এলাকায় এই গবেষণা চালিয়ে এলেও বড় এলাকাজুড়ে একই গবেষণা চালালে একই ফল আসবে বলে মনে করেন স্ট্যানফোর্ডের গবেষক দল; যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ ইতোমধ্যে ১০ হাজার মানুষের দেহে করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে।

স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির মেডিসিনের সহযোগী অধ্যাপক এরন বেনডেভিড গার্ডিয়ানকে বলেছেন, “আমরা মহামারীর কোন পর্যায়ে আছি, তা বুঝতে এই গবেষণাটি একটি পথ দেখাবে।”

ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে এখন যে অবরুদ্ধ অবস্থা চলছে যুক্তরাষ্ট্রে, তা তোলার যে দাবি উঠছে দেশটিতে, এ্ই গবেষণা তার পালে হাওয়া দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে গবেষকরা বলছেন, তা এখনই নয়, অন্তত এ নিয়ে আরও গবেষণার আগে নয়।

একই সতর্কতার সুর যুক্তরাজ্যের সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ আর্থার রেইনগোল্ডেরও।

তিনি বলেন, “কেউ যদি ভাবে এটা লকডাউন ভেঙে এখনই কাজে নেমে পড়ার ছাড়পত্র, তবে দুটো জায়গায় তা আটকে যাবে।

“এক আমরা এখনও জানি না যে এই অ্যান্টবডি মানুষকে সুরক্ষা দেবে কি না? দুই, এখনও অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পাওয়া গেছে খুব অল্প মানুষের মধ্যে।”

বাংলাদেশ সময়: ১০:১৯:৪৫   ৪১০ বার পঠিত   #  #  #  #




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

প্রথমপাতা’র আরও খবর


সালাম, আমান, রিজভী, খোকন, শিমুল ও এ্যানিসহ গ্রেফতার শতাধিক
ভারতকে হারিয়ে টাইগারদের সিরিজ জয় নিশ্চিত
 নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ ,নিহত ১
বিয়েবর্হিভূত যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ: প্রতিবাদে বিক্ষােভ ইন্দোনেশিয়ায়
আড়াইহাজারে অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
কোয়ার্টারে ব্রাজিল ক্রোয়েশিয়া মুখোমুখি
ব্যাংকে টাকা নিয়ে গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তির লটারি ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর
২০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে করোনা টিকার চতুর্থ ডোজ
সউদী আরব তৈরি করবে বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবন্দর

আর্কাইভ