বঙ্গনিউজ ডটকমঃ ‘যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর জেট বিমান থাকলেও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর তা নেই। এমনকি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীরও নেই। তাই আমাদের বিদেশ সফরে যেতে হলে বাণিজ্যিক বিমানে করেই যেতে হয়। তখন অন্যদের মতো আমাদের বিভিন্ন দেশে ট্রানজিট নেয়ার জন্য ২-৩ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করতে হয়।
সেক্ষেত্রে আমাদের সফরকালীন সময়ের ব্যাপ্তি বেড়ে যায়।’
সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি জাতীয় দৈনিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিদেশ সফর নিয়ে যে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে সে প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি একথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমার এ বিষয়ে কোনো আক্ষেপ নেই বা আমি আমার সাথে ইউএস পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কোনো তুলনাও করতে চাচ্ছি না। যেহেতু আমার সফরের সাথে সেদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের তুলনা করা হয়েছে তাই এ কথাগুলো আমাকে বলতে হচ্ছে।’রবিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি একথা বলেন।তিনি বলেন, ‘ইউএস পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের একটা শহর থেকে আরেকটা শহরে গেলেও তার জেট বিমান ব্যবহার করেন। আর আমাকে দেশের টাকা সাশ্রয় করতে রাত তিনটায়ও বিমানবন্দরে গিয়ে বসে থাকতে হয়। নিজের মতো কোনো সিডিউল তৈরি করতে পারি না।’তিনি বলেন, ‘আমার বিদেশ সফরের বিষয়টি অসত্য, বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ প্রতিবেদনটির বিরুদ্ধে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যে প্রতিবাদ পাঠানো হয়েছে তাও ঠিকভাবে ছাপানো হয়নি। একজন নাগরিক হিসেবে এর বিরুদ্ধে আমি ব্যবস্থা নিবো।’এ সময় তাকে অনেকটা বিমর্ষ দেখাচ্ছিল।দীপু মনি তার সফরের সংখ্যা এবং কোন কোন বিষয়ের ওপর কতবার সফর করেছেন তার বিবরণ দেন।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাফল্যের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সাফল্য থাকলে জনগণের তোপের মুখে বেশি পড়তে হয়। আমাদের সাফল্য আছে বলেই আমাদের এতো বেশি তোপের মুখে পড়তে হচ্ছে। এ সময় তিনি জানান, খুব শিগগিরই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাফল্যের ওপর একটি বই প্রকাশ করা হবে।’অনুপচেটিয়া প্রসঙ্গে তিনি জানান, ‘অনুপচেটিয়াকে ভারতের হাতে তুলে দেয়ার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে কোনো তথ্য নেই। এ বিষয়ে আমি কোনো তথ্য পেলে আপনাদের জানাবো।’জিএসপি সম্পর্কে দীপু মনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রও জিএসপি স্থগিতকরণের বিষয়টি দ্রুত প্রত্যাহার করতে আগ্রহী। আমরা আশা করছি, খুব শিগগিরই আমরা জিএসপি সুবিধা ফিরে পাবো।’বাংলাদেশের গার্মেন্ট শ্রমিকদের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দাবির করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের দাবিগুলোর বিষয়ে যেমন শ্রম অধিকার, কর্ম পরিবেশসহ যেসব উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে তা রানা প্লাজার দুর্ঘটনার আগেই নেয়া আরম্ভ হয়েছে।’টিকফা নিয়ে দীপু মনি বলেন, টিকফা চুক্তি যথাসময়ে স্বাক্ষরিত হবে। তবে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কিছু নির্ধারিত হয়নি।ভারতের সাথে স্থল সীমানা চুক্তি, তিস্তা চুক্তি প্রসঙ্গে দীপু মনি বলেন, ‘এই চুক্তিগুলো স্বাক্ষরিত হয়নি একথা ঠিক। কিন্তু এর মানে আমরা ব্যর্থ তা নয়। এ চুক্তিগুলোকে এই জায়গায় নিয়ে আসা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাড়ে চার বছরের সাফল্যগুলোর একটি।’এ সময় তিনি জানান, ‘এই চুক্তিগুলো এখন পর্যন্ত না হওয়ার পরও আমি আমার আগামী ভারত সফরের সময় এ বিষয়ে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সাথে কথা বলবো।’উল্লেখ্য, ২৫ জুলাই ভারতীয় থিংক ট্যাঙ্ক ‘অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন ‘(ওআরএফ) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তিন দিনের ভারত সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে। সফরকালে ২৬ জুলাই ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাথে তার সাক্ষাতের কথা রয়েছে। এছাড়াও তিনি সেদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ, বিরোধীদলীয় নেতা সুষমা স্বরাজ, রাজ্যসভায় বিরোধীদলীয় নেতা অরুণ জেটলির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:১৯:৪৮ ৪৪৪ বার পঠিত