স্বপন চক্রবর্তী, বঙ্গ-নিউজ:: করোনা ভাইরাসে গত চার মাসে মৃত্যু বরণ করেছিল এক লক্ষ লোক। আর সেটা এখন অপ্রত্যাশিত দ্রুতই বেড়ে চলেছে। গত এক সপ্তাহে বিশ্বে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার। মোট মৃতের সংখ্যা এখন প্রায় দেড় লক্ষ। প্রাদুর্ভাবের চার মাস পর গত ১০ এপ্রিল কোভিড-১৯ রোগে বিশ্বেজুড়ে মৃতের সংখ্যা লক্ষ ছুঁয়েছিল; তার মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে আরও ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু এই সংখ্যাকে দেড় লাখ ছাড়িয়ে নিয়ে গেছে।
নভেল করোনাভাইরাস মহামারী নিয়ে জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির শুক্রবার রাতে হালনাগাদ করা তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে মৃতের সংখ্যা এখন ১ লাখ ৫০ হাজার ৯৪৮।
এই সময় পর্যন্ত বিশ্বের ১৮৫টি দেশ ও অঞ্চলে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২২ লাখ ৪ হাজার ৫১১ জন। আর এর মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৫ লাখ ৬৪ হাজার ৫২৫ জন।
এই করোনাভাইরাসের উৎসস্থল চীনের উহানে মৃত্যুর সংখ্যা পর্যালোচনার আগের সংখ্যা পরিবর্তিত হওয়ায় একদিনে মৃত্যুর তালিকায় যোগ হয় ১ হাজার ২৯০ জন।
এই ভাইরাস প্রতিরোধে এখনও নেই টিকা, নেই নির্দিষ্ট কোনো ওষুধও; ফলে থমকে যাওয়া বিশ্বে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মিছিল ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে, যা কতদূর যাবে তা এখনও অনিশ্চিত।
ইউরোপে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতির পর এখন যুক্তরাষ্ট্র বিপর্যস্ত নভেল করোনাভাইরাসে; এরপর আফ্রিকা এই মহামারীর নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)।
নভেল করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্রে পুঁজিবাদবিরোধী স্লোগান বাড়ির দেয়ালে। করোনাভাইরাস মহামারীর শুরুতে ডব্লিউএইচও আক্রান্তদের মধ্যে ২ শতাংশের মৃত্যুর আশঙ্কার কথা জানিয়েছিল।
সেটা ছিল ফেব্রুয়ারি মাসের ঘটনা; তারপর পরিস্থিতির ভয়াবহতা দেখে ৩ মার্চ বলেছিল, মৃত্যুর হার ৩ দশমিক ৪ শতাংশে যেতে পারে।
কিন্তু মৃতের সংখ্যা যখন লাখ ছাড়াল, তখন দেখা যাচ্ছে আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৬ শতাংশ মৃত্যুর করাল গ্রাসে পড়ছে।
আর মৃতের সংখ্যা যখন দেড় লাখ ছাড়াল, তখন দেখা যাচ্ছে আক্রান্তদের ৬ দশমিক ৮ শতাংশ মারা যাচ্ছে।
মৃতের সংখ্যায় শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র; দেশটিতে প্রায় ৩৩ হাজার মানুষ ইতোমধ্যে মারা গেছে কোভিড-১৯ রোগে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইতালির চেয়ে এই সংখ্যা ১০ হাজার বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রে গত এক সপ্তাহে মৃত্যুর সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়েছে। ইতালিতে ও স্পেনে এই এক সপ্তাহে মৃতের সংখ্যা বেড়েছে ৪ হাজার করে।
ভারতের নয়া দিল্লিতে এক কোভিড-১৯ রোগীর মৃত্যুর পর তাকে কবর দেওয়া হচ্ছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে মানবদেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রথম ঘটনা শনাক্ত হয়। তার প্রায় এক মাস পর প্রথম মৃত্যুটি চীনে ঘটেছিল ১১ জানুয়ারি।
চীনের বাইরে প্রথম মৃত্যুটি ঘটেছিল প্রায় এক মাস পর ২ ফেব্রুয়ারি ফিলিপিন্সে। সেদিন মোট মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৩৬২।
মৃতের সংখ্যা ১ হাজারে পৌঁছেছিল ১০ ফেব্রুয়ারিতে। অর্থাৎ প্রথম মৃত্যুর পর মৃতের সংখ্যা ১ হাজারে পৌঁছতে লেগেছিল ঠিক এক মাস। এরপর মৃতের সংখ্যা দুই হাজারে যেতে সময় লাগে ৮ দিন।
তার এক মাস পর ১৯ মার্চ মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়ায়। এরপর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে মৃত্যু। বিপর্যন্ত ইউরোপ ও আমেরিকায় মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হওয়ায় প্রতি দুই দিনে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার করে বাড়তে থাকে।
গত ২ এপ্রিল বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়ায়; তা থেকে এক লাখে যেতে সময় লেগেছিল আট দিন। মৃত্যুর মিছিলে আরও ৫০ হাজার যোগ হতে সময় একদিন কম লাগল।
গত সাত দিনে মৃত্যুর সংখ্যা ৫০ হাজার বাড়ায় এই সপ্তাহে গড়ে প্রতি দিন সাত হাজার করে মানুষের মৃত্যুর কারণ ছিল নভেল করোনাভাইরাস।
বাংলাদেশ সময়: ৯:৪৬:২৩ ৫৭৪ বার পঠিত # #করোনা ভাইরাস #মহামারি আকারে করোনা ভাইরাস #সারা বিশ্বে করোনা