৯৭ তম পর্ব–(৩য় খন্ড ১২ তম পর্ব)
সপ্তপদী মার্কেট শাখা ,বগুড়া —-
চরিত্রের অপবাদ-৫-
মিন্নাতকে ভুলভাবে চরিত্রহীন হিসেবে চিহ্ণিত করার প্রচেষ্টার পর প্রায় ত্রিশ বছর গত হয়েছে। সে সব স্মৃতিকে আমি ত্রিশ বছর নয়নের জলে তরতাজা না রাখলেও হৃদয়ের জলে তরতাজা রেখেছি। তাই হয়তো সে সব কাহিনি লিখতে পারছি। আজ হঠাৎ মনে হচ্ছে কেন সে সময় চরিত্রহীন পুরুষ চিহ্নিত করার কোন উপায় আমি খুঁজে পাইনি। আচ্ছা চরিত্রহীন বিবাহিত পুরুষ চেনার উপায় কি ? এটা জানার জন্য গত কয়েকদিন যাবৎ আমি অস্থির হয়ে উঠলাম। সপ্তপদী মার্কেট শাখায় যোগদানের আগে আমি অফিসে মহিলা সহকর্মীর দেখা পাইনি। এর পর অনেক অনেক মহিলা সহকর্মীর সাথে কাজ করেছি। আমার চোখে তো -
আমার চোখে তো সকলই শোভন,
সকলই নবীন, সকলই বিমল, সুনীল আকাশ, শ্যামল কানন,
বিশদ জোছনা, কুসুম কোমল— সকলই আমার মতো ।
তারা কেবলই হাসে, কেবলই গায়, হাসিয়া খেলিয়া মরিতে চায়—
না জানে বেদন, না জানে রোদন, না জানে সাধের যাতনা যত ।
সকলই শোভন, সকলই বিমল হলে আমার চোখে খারাপ কিছু ধরা পড়বে কেমনে ?
আচ্ছা চরিত্রহীন বিবাহিত পুরুষ চেনার উপায় কি -এ কথাটি ঐ আনোয়ারা আপাকে জিজ্ঞাসা করলে কেমন হয় ? আনোয়ারা আপা ১৯৭৭ সালে ব্যাংকে যোগদান করে কয়েক বছর আগে অবসরে গেছেন। অবসরে গিয়েও অবসরে নাই।একটা রিয়েল স্টেট কোম্পানীতে চাকুরি করছেন। বাহিরের জগৎ নিয়ে অনেক অভিজ্ঞতা আপার। মিন্নাতের চরিত্র নিয়ে তিনিই ৩০ বছর আগে একদিন আমাকে বিব্রত করেছিলেন। আপার সাথে আমার ফোনে ফোনে যোগাযোগ আছে ।
তো হঠাৎ একদিন মনে হল ক্যারেক্টার টেস্ট নিয়ে আপার মতামত নিলে কেমন হয় ? একদিন সাহস করে তার বাসায় হাজির হলাম। ছুটির দিন। আপা দেখলাম বেশ খোশ মেজাজে আছেন। তার সামনে বসে ত্রিশ বছর আগের সে কথা তুললাম। আপা স্মরণ করতে পারলেন না। ঘটনাটাই তো দেখি তার মনে নাই। আমাকে বলল- বাদ দাও ও সব কথা , কেমন আছ তাই আগে বলো। আমি দমে গেলাম। ও সব প্রসঙ্গ বোধ হয় আর তোলা যাবেনা।
তবুও শেষ পর্যন্ত লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে দু হাত কচলে অনেক ভনিতা করে বললাম আপা বহুযুগ আগের মিন্নাতের কথা না হয় বাদ থাক । কিন্তু আমার মনে আজ একটা প্রশ্ন জেগেছে অফিসে চরিত্রহীন পুরুষ চেনার উপায় কি ? একদিন এ দায়িত্বটা আপনি আমাকে দিয়েছিলেন আর আমি বিষয়টির কোনও কূল-কিনারা না পেয়ে একটা গোজামিল দিয়ে রেহাই পেয়েছিলাম। আজ আমি আপনার কাছেই বিষয়টি জানতে চাচ্ছি। প্রশ্নটি করে উত্তরের আশায় আমি চুপ মেরে গেলাম।
আপার চোখের দিকে তাকালাম –অসীম শূন্যতা সেখানে। মুখের দিকে তাকালাম -সেই টকটকে চেহারা কবেই শেষ হয়ে গেছে। বছর দুয়েক আগে মুখের ত্বকে যে বলিরেখা দেখেছিলাম এখন সে রেখার সংখ্যা আর না বাড়লেও সেগুলি গভীর হয়েছে । এখন রেখাগুলি খুব সহজেই চোখে পড়ছে। আপা টেবিলে রাখা ক্রিমের কৌটা বের করে মুখে- হাতে মাখলেন। বাতাসে সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ল। আমাকেও নিতে বললেন কিন্তু ৩০ বছর আগেও আমি নিতে রাজি হইনি। আজকেও আমি রাজি হলাম না। কিন্তু কি আশ্চর্য ত্রিশ বছর আগে যে সুগন্ধ পেয়েছিলাম আজও মনে হলো ঐ একই সুগন্ধ। মস্তিস্ক কি গন্ধের স্মৃতিও ধরে রাখে ? নাকি সবই কাকতালীয় সবই মনের ভুল। আপাও কি একই কথা ভাবছে। আপা তো পুরানো সে দিনের কথা মনে রাখার মত নয়। স্মৃতি-পাগল না , কাজ পাগলমানুষ , সংসার পাগল মানুষ আপা।
কিন্তু আমি তো স্মৃতি পাগল। ফেলে আসা জীবনের স্মৃতিগুলো আমাকে অক্টোপাসের মত ঘিরে রাখে। আসলে বোধ হয় কিছু মানুষই থাকে,তারা স্মৃতি পুষতে ভালোবাসে । সেটা কষ্টের হলেও তবু সেইটুকুই বড় যত্নে, আগলে বয়ে বেড়াবে দিনের পর দিন,রাতের পর রাত। অতীতে ব্যবহৃত কোন পারফিউম/সাবান/শ্যাম্পু বা এধরনের কিছু গন্ধ নাকে আসলে আমি সেই পুরোনো দিনটাকে ফিল করতে পারি এখনও। এসবে আমার খুব কষ্ট লাগে তবু এ রুপ সুখ সুখ বুক ব্যথা টাকে আমি খুব করে পেতে চাই।
আপা উদাস উদাস ভাব নিয়ে অনেকক্ষণ চুপ করে থাকলেন। তারপর কোন প্রকার সূচনায় না গিয়ে সরাসরি বললেন- দেখো জালাল, প্রায় সকল খারাপ পুরুষ মহিলা সহকর্মী পটানোর একটা কমণ ফর্মূলা ব্যবহার করে।
-কমণ ফর্মূলা ? আমি আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। (ক্রমশঃ)
****************************************
ডিসক্লেইমারঃ-রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন অনেক পুরানো স্মৃতিনির্ভর আত্মজীবনীমূলক লেখা। স্মৃতি-বিভ্রাট তো ঘটতেই পারে , তাছাড়া মূল ঘটনা বর্ণনা করতে কাল্পনিক সংলাপ বা ঘটনা ,ইত্যাদি সন্নিবেশিত হয়ে থাকতে পারে।জ্ঞানমূলক আলোচনা সহজ করতে কল্পিত ঘটনাও থাকতে পারে। তাই বইটির প্রকাশিত এবং প্রকাশিতব্য খন্ড /পর্ব সমূহকে উপন্যাসধর্মী আত্মজীবনী হিসেবে গণ্য করতে হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছদ্মনামও ব্যবহার করেছি। এ সব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কারো কোন আপত্তি থাকলে আমাকে জানালে তা সংশোধন করে নিব।
/&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&
বাংলাদেশ সময়: ১১:২৪:৫৭ ৮৪০ বার পঠিত #রঙ্গে ভরা ব্যাংকিং.স্মৃতিচারণ মূলক #সাহিত্য. জালাল উদ্দীন মাহমুদের লেখা