স্বপন চক্রবর্ী,বঙ্গ-নিউজ: কোভিড-১৯ রোগের কোনো ওষুধ এখনও নেই বলে জানিয়ে আসছে ; বিভিন্ন দেশ ওষুধ তৈরির চেষ্টা চালিয়ে গেলেও এখনও বলতে পারেনি যে সফল হয়েছে।
এর মধ্যেই ‘বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের ওষুধ তৈরি হচ্ছে’ বলে খবর ছড়িয়েছে সোশাল মিডিয়ায়, তার ভিত্তি আবার কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ। যা দেখে অনেকেই এই মহামারী থেকে পরিত্রাণ পাওয়ায় আশাবাদী হয়ে উঠেছেন।
এই অবস্থায় বাংলাদেশের ওষুধ অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর বলেছে, তারা পরীক্ষামূলক ব্যবহারের জন্য কয়েকটি ওষুধ উৎপাদনের অনুমতি দিলেও তা নিয়ে ভুল বার্তা যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন সম্পর্কিত জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব মনে করেন, করোনাভাইরাসের ওষুধ নিয়ে এই অপপ্রচার উদ্দেশ্যমূলক।
এর পেছনে কর্পোরেট বাণিজ্যিক স্বার্থ কাজ করছে বলেও মনে করেন স্বাস্থ্য খাত সংশ্লিষ্টরা।
নতুন ধরনের এক করোনাভাইরাস বিশ্বে মহামারী নামিয়ে আনার পর তা নিরাময়ে প্রচলিত কিছু ওষুধ ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন দেশে।
এই ধরনের কিছু ওষুধ যেমন হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন, ফ্যাভিপিরাভির ও রেমডেসিভির পরীক্ষামূলক উৎপাদন করতে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান।
এই খবরটিই ছড়িয়েছে ‘করোনাভাইরাসের ওষুধ তৈরির দারুণ সুসংবাদ’, ‘করোনাভাইরাসের ওষুধ তৈরি করছে বেক্সিমকো-বিকন’, ‘করোনাভাইরাসের ওষুধ এখন হাতের মুঠোয়’, ‘সুখবর: করোনার ওষুধ অ্যাভিগান এবার তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশেই’, ‘দেশেই তৈরি হচ্ছে করোনার ওষুধ, রোববার থেকে বিনামূল্যে সরবরাহ’- এমন সব শিরোনামে।
এসব খবর অনেকেই তাদের ফেইসবুক ওয়ালে শেয়ার করছেন, সেইসঙ্গে কোম্পানিগুলোকে ধন্যবাদও দিচ্ছেন।
বিষয়টি স্পষ্ট হতে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কয়েকটি দেশের স্টাডিতে এসব ওষুধ ব্যবহার করে কিছুটা ফল পাওয়া গেছে। আমাদের পরীক্ষায়ও যদি ভালো ফলাফল আসে, তখন যেন আমাদের দেশে অ্যাভেইলেবল হয় তার পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে কিছু কোম্পানিকে আমরা অনুমতি দিয়েছি।”
হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন, ফ্যাভিপিরাভির ও রেমডেসিভি উৎপাদনের অনুমতি পেয়েছে স্কয়ার ফার্মা, এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, জিসকা ফার্মাসিউটিক্যালস এবং ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস।
তবে এই কোম্পানিগুলো এই ওষুধ উৎপাদন করে বাজারে বিপণন করতে পারবে না জানিয়ে মেজর জেনারেল মাহবুবুর বলেন, সেগুলো তারা সরকারের কাছে দেবে। যখন সরকারের প্রয়োজন হবে, তখন গাইডলাইন অনুসারে তা ব্যবহার হবে অথবা ট্রায়াল দেবে।
“ট্রায়ালের জন্য যেন ওষুধটা পাই, এই প্রস্তুতি হিসেবে আমরা তৈরি করতে বলেছি। কিন্তু বাজারে বিক্রি করার জন্য নয়, আমাদের পক্ষ থেকে সবাইকে চিঠি দেওয়া আছে এই ওষুধ বাজারে বিক্রি না করার জন্য।”
ঔষধ প্রশাসনের মহাপরিচালক বলেন, “চিঠিতে সবগুলো কোম্পানিকে বলে দেওয়া হয়েছে- এই ওষুধ করোনার রোগীর জন্য- এই দাবি কেউ করতে পারবে না।
“কিন্তু বিষয়টি নিয়ে অন্যপথে হাঁটার চেষ্টা করা হচ্ছে। তারা যা করছে এটা ঠিক না। সরকার ট্রায়াল দেবে, অথবা সরকার যেভাবে ব্যবহার করবে, সেভাবে হবে। এখানে অন্য কিছু করার সুযোগ নেই।”
বিষয়টি নিয়ে অধ্যাপক রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের কোনো ওষুধ বিশ্বের কোথাও বাজারে আসেনি। তারপরও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
“প্রথম হচ্ছে করোনাভাইরাসের স্পেসিফিক কোনো ওষুধ নাই, এটা স্পষ্ট। দ্বিতীয়ত হল, কোনো কোনো জায়গায় ওষুধ ব্যবহার করে তারা বলছে, এতে তারা কিছু বেনিফিট পেয়েছে, যেটা সর্বজনগ্রাহ্য নয়। তারপরও করোনাভাইরাসের ওষুধের প্রাপ্যতা নিয়ে যেসব খবর আসছে, সেগুলো দুর্বুত্তায়িত, ফেইক নিউজ।”
দীর্ঘদিন স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করেন এমন একজন সাংবাদিক লিখেছেন, “এসব ওষুধ নিয়ে মিথ্যা বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে। করপোরেট ইন্টারেস্ট আছে, এমন খবরের পৃষ্ঠপোষকতা করা ঠিক না।
“আমাদের ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলোর আমাদের দেশের মানুষের সম্পর্কে ভালোই ধারণা আছে। এজন্য তারা এই প্রচারণার জন্য গণমাধ্যমকে কাজে লাগাচ্ছে। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপর চাপ বাড়াতে তারা পাবলিক সেন্টিমেন্ট এবং মিডিয়াকে ব্যবহার করার কৌশল নিয়েছে।”
করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় জাপানি ফ্লুর ওষুধ কার্যকর।: চীন অনুমতি দেওয়া হয়েছে তারমধ্যে একটি হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন। যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ তাদের ইমার্জেন্সি ইউজ অথোরাইজেশন, ইইউএ আইনে কোভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে এটি ব্যবহারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেসকে গত ২৮ মার্চ চিঠির মাধ্যমে অনুরোধ জানায়।
সেখানে বলা হচ্ছে, হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন সালফেট এফডিএ অনুমোদিত ম্যালেরিয়ার ওষুধ। এটি কোভিড-১৯ এর কোনো ওষুধ নয়। এফডিএ ৫৫৪ (সি) ধারা অনুযায়ী মানুষের জীবন বাঁচাতে জরুরি ভিত্তিতে কোভিড-১৯ জন্য ব্যবহারের অনুরোধ করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখে ওষুধটির নাম বারবার আসায় তা আলোচনায় এলেও এর কার্যকারিতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মধ্যেও রয়েছে সংশয়।
রেমডেসভির ইবোলার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি আরএনএ ভাইরাসের প্রতিলিপিকরণ বন্ধ করে দেয়। ঠিক একইভাবে কাজ করে ফ্যাভিপিরাভিরও কাজ করে।
যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি মনে করছে, এই ওষুধটি সার্স-কোভ-২ কোষের ভিতরে ও বাহিরে পরীক্ষায় ভালো কাজ দিচ্ছে। এটি এখন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে রয়েছে।
ফ্যাভিপিরাভির ইনফ্লুয়েঞ্জার ওষুধ। জাপান সরকার ২০১৪ সালের মার্চে ওষুধটি কেবল জাপানে জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের অনুমতি দেয়।
সম্প্রতি চীনের কয়েকটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফল বলছে, ফ্যাভিপিরাভির ব্যবহারে ৭ দিনে ৭১ শতাংশ রোগীর জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট ভালো হচ্ছে।
জাপান ওষুধটি তাদের দেশের বাইরে তৈরি ও বিপণনের কোনো অনুমতি দেয়নি। সম্প্রতি দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ঘোষণা দিয়েছেন, তারা ২০ লাখ ট্যাবলেট উৎপাদন করছে। পাশাপাশি তৃতীয় ধাপে ক্লিনিক্যাল স্টাডিও করছে। দেশটির সরকার বলছে, তারা মানবিক বিপর্যয়ে ওষুধটি বিভিন্ন দেশে বিনামূল্যে সরবরাহ করবে।
বাংলাদেশ সময়: ৮:৫৯:৪৮ ৫৫৯ বার পঠিত # #করোনা ভাইরাস #মহামারি আকারে করোনা ভাইরাস #সারা বিশ্বে করোনা