ত্রাণ নিয়ে যা হচ্ছে তা ভাষায় প্রকাশ যোগ্য না।বিশ্বের কোথায় দানের একটি ছবি আছে দেখান?আপনারা নিজেরা দানগুলো সাথে নিয়ে ছবি তুলতে পারেন।কারন আপনার দান প্রচার দরকার আছে।আপনি নিজেকে দানবীর হিসেবে জাহির করতে পারবেন।তাই বলে গরিব অসহায় মানুষগুলো যারা কোন দিনই আপনার কাছে হাত পাতেনা।তারা রাস্তায় কাজ করে,রিক্সায় প্যাডেল দিয়ে বা অন্যের বাড়িতে কাজ করে যেভাবেই হোক উপার্জন করে খায়।অন্তত আমি মনে করি ওরা আমার চাইতে মর্যাদায় কম তো নয়-ই বরং একটু বেশিই।কারন জীব বিজ্ঞানে পড়েছিলাম মানুষ পরভোজী প্রানী,আর কিছু উদ্ভিদ স্বভোজী প্রাণী।কোন ক্রমে স্বভোজী উদ্ভিদগুলো মরে গেলে পরভোজী প্রাণীগুলো মুহুর্তেই নিঃশ্বেষ।কিন্তু পরভোজী প্রাণীগুলো মরে গেলো স্ব ভোজীরা কখনো তো মরবেই না বরং একটু স্বতেজ হবে শীগ্র।তাই স্বভোজীরা পরভোজীর চাইতে অবশ্যই এক ধাপ এগিয়ে রয়েছে কার্যক্ষেত্রে।ঠিক তেমনি আমি চাকরিজীবি।আমার বেতন আসে ঐ সব গরীব লোকদের হাঁড়খাঁটুনি পরিশ্রমে উপার্জনের টাকার ট্যাক্স থেকে।ওদের ট্যাক্স দেয়া বন্ধ হলে আমার বেতন বন্ধ হতে বেশি সময় লাগার কথা নয়।সেদিক থেকে তাঁদেরকে ছোট করে দেখার কোন সুযোগ আছে বলে আমি মনে করিনা।আর এই সব লোকদের নিয়ে বিপদ বেলায় আপনারা,সেল্ফি,লাইভ ভিডিও করছেন সেটা আপনাদের কোন মানসিকতাকে প্রকাশ করছেন তা আপনারাই নির্ণয় করুন।বলবেন জীবন কৃষ্ণ, তুমি নিজেই তো খেয়ে বাঁচার সাধ্য নাই তাহলে তুমি দানই করবে কোথেকে আর সেল্ফিই তুলবে কোথেকে।আমি সানন্দে মেনে নিচ্ছি আপনার কথা।আমি সামান্য একজন শিক্ষক,জগণ্য কোন উদ্যোগ আমার পক্ষে সম্ভব নয়।বলবেন জগন্য উদ্যোগ কিভাবে হলো? একজন ব্যক্তিকে ১ মগ চাল দিতে যদি ১০ জনের হাত ধরে ছবি তুলতে হয়,২ কেজি চাল দিতে যদি ২ ঘন্টা লাইভ ভিডিও করতে তাদেরকে অপেক্ষা করাতে হয় তাহলে এগুলোকে নগন্য না জগন্য বলে সমাজ নির্ণয় করোক।ছিঃএকটু লজ্জ্বা থাকা উচিত।আমাদের প্রিয় নবী রাসুল(সাঃ) বলে গেছেন ডান হাতে দান করলে বাম হাতে যেনো না জানে।বিভিন্ন দেশে দান হচ্ছে খোঁজ নিন।সেদিন প্রবাসী এক ভাই জানালো সকালে দরজা খোলে দেখে চাল,ডাল,তেল,সবজি।কিন্তু কে দিল তা টেরো পেলোনা। সেটাকে বলা যায় দান।দানের প্রতি যদি টানই থাকলো তাহলে সে দানের কি মাহিত্য সেটা আমার বোধগম্য নয়।জানি সেটা আপনারা কোনদিনও করতে পারবেননা।করতে বলবোও না।তাই আমি বলবোনা আপনারা দানের প্রচার করবেননা।প্রচার অবশ্যই করুণ।তবে প্রচার করুণ নিজেকে নিজের দানকৃত জিনিস সহ।আপনারা যাদেরকে(সাঙ্গপাঙ্গ) সাথে নিয়ে বিতরণ করবেন,তাদেরকে নিয়ে আপনারা ঐসব জিনিস সহ ছবি তুলে, নিউজ করে ঢাকঢোল পিঠিয়ে, লাইভ করে প্রচার করতে পারেন বিন্দু মাত্র কষ্ট পাবোনা।জাতি আপনাদেরকে ভালো ভাবে চিনে রাখবে দানবীর হিসেবে।ভবিষ্যতে বিয়ে করতেই হোক আর ভোটে দাঁড়াতেই হোক কাজে আসবে।তবু জাতির এই দুর্দিনে ঐসব সাধারণ লোকদের নিয়ে আর দানের নামে তামাসা করবেননা।সাময়িকভাবে পেটের ক্ষুধায় ওরা দান নেবে কিন্তু সময় বদলালে যখন আপনাদের এইসব ফন্দি,ফিকির বুঝবে, জানবে তখন ওদের অভিশাপ থেকে কেউ বাঁচতে পারবেননা।আপনারা হবেন ঘৃণিত,লাঞ্চিত।
তাই আসুন এই দুর্দিনে আমরা তামাসা না করে একে অপরের পাশে দাঁড়াই,একে অপরকে সাথে নিয়ে চলি।
লেখক
জীবন কৃষ্ণ সরকার
সভাপতি,
হাওর সাহিত্য উন্নয়ন সংস্থা(হাসুস) বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৪০:০৭ ৭৭৫ বার পঠিত