বঙ্গ-নিউজ:.
৮৮ তম পর্ব–
সপ্তপদী মার্কেট শাখা ,বগুড়া —- ,অস্থায়ী গোডাইন কিপার -বাকী বিল্লাহ(১)
সদ্যই স্বেচ্ছায় ম্যানেজারি ত্যাগ করে সপ্তপদী মার্কেট শাখায় এসেছি আমি । জানতাম মুকুট পরা সহজ; কিন্তু মুকুট ত্যাগ করা কঠিন। সদ্য সাবেক ম্যানেজার হলেও অন্য ম্যানেজারের কমান্ডে চলতে মনে হয়না সে সময় আমার তেমন অসুবিধা হয়েছিল। প্রথম থেকেই নিজের কাজের মাধ্যমে স্ট্যান্ড-আউট করে নিজের বেস্টটা উপস্থাপন করার চেস্টা করতে থাকলাম।
সকাল বেলা হাঁটার সঙ্গী পাওয়া যেমন সৌভাগ্যের ব্যাপার তেমনি নতুন কর্মস্থলে একজন পরামর্শক পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার। আমি অবশ্য সৌভাগ্যবান যে রফিক সাহেবের মত একজন পরামর্শক পেয়েছিলাম। একই ব্যাংকের বিভাগ/শাখা হলেও প্রতিটিবিভাগ/ শাখার একটা আলাদা সংস্কৃতি থাকে । সেটা বোঝার চেস্টা করলাম।
নতুন শাখা নতুন পরিবেশ । সেখানে আমি যদি প্রাণবন্ত না থেকে মনমরা থাকি তাহলে প্রথমেই আমার প্রতি অন্যদের নেতিবাচক ধারণা তৈরি হতে পারে । তাই নিজেকে সবসময় প্রাণবন্ত ও হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করতাম। এতে আমি নিজে এবং অন্যরাও আমার সাথে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করত। তবে কোনোভাবেই কোনো কিছুতে সীমা লঙ্ঘন যেন না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতাম। অফিসে অট্টহাসি বা কারো সাথে অতিরিক্ত দুষ্টুমি করা থেকে সর্বদা বিরত থাকতাম।
অন্য কোনো কর্মকর্তার সাথে অহেতুক প্রতিযোগিতায় কখনই লিপ্ত হই নাই। সবসময় চেষ্টা করতাম শাখার প্রতিটি কর্মচারী-কর্মকর্তাদের সাথে বন্ধুভাবাপন্ন সম্পর্ক তৈরি করে দলবদ্ধ হয়ে প্রতিটি কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে।
কবি বলেছেন-
‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে…
কিন্তু আমি ভাবতাম-
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে প্রেষনা দিয়ে তাকে সাথে নিয়ে এস রে।
সপ্তপদী মার্কেট শাখায় অনেক মহিলা কর্মকর্তা-কর্মচারি ছিল । এসব মহিলা সহকর্মীদের যথাযথ সম্মান করে কথা বলতাম । স্পর্শকাতর বিষয়গুলো নিয়ে উৎসাহ প্রকাশ করতাম না।
শুধু পুরুষ নয় কর্মক্ষেত্রে অনেকসময় নারীরাও নারীদের শত্রু হয়ে যায়। এটা জানতাম। তাই একজন মহিলা আরেক জন মহিলার নামে নালিশ নিয়ে এলে সাবধানে যাচাই করতাম।
ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব ভুলে থাকতাম। তাবৎ বিশ্বের সব অফিস-আদালতেই নাকি এ সমস্যাটা আছে। পরনিন্দা, পরচর্চা কিংবা সবকিছু বাঁকা দৃষ্টিতে দেখার অভ্যাস অনেক অফিসের পরিবেশকে দূষিত করে তোলে। এসব বদভ্যাস থাকলে কখনোই সহকর্মীদের মন জয় করা যায় না। বরং কোনো একটি ঘটনা শুনলেই তা পাঁচ কান করার অভ্যাস সহকর্মীদের মধ্যে বিরক্তির উদ্রেক ঘটায়।
তবে আমি কাজের ফাঁকে রসিকতা করে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করার চেস্টা করতাম , এতে আমিও ভাল থাকতাম । অন্যদের মনও হয়ে উঠত চনমনে।
এ সব কারনে নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়াতে আমার কোনও সমস্যা হলো না। ব্যাংকারদের বদলির চাকরি। এ সব কথা তাদের নতুন কর্মস্থলে খাপ খাওয়াতে সহায়তা করতে পারে বিধায় এখানে উল্লেখ করলাম।
সপ্তপদী মার্কেট শাখায় যোগদানের পরে আমাকে প্রথমে ঋণ বিভাগের দ্বায়িত্বে দেয়া হলো। ৩টি সিসি প্লেজ অর্থাৎ গোডাউন ভিত্তিক লোন ছিল। অন্য সর্বপ্রকার ঋণতো ছিলই। ঋণ বিভাগে আমার সাথে থাকল শাহজাহান নামের গোডাউন কিপার এবং সামাদ নামের গোডাউন চৌকিদার। আরো বোধহয় দুজন গোডাউন চৌকিদার ছিল নাম আজ আর মনে নাই। জাঁদরেল একমহিলা সেকেন্ড অফিসার নাম আনোয়ারা বেগম ছিলেন ম্যানেজারের পরেই সর্বময় কর্তৃত্বে। আমার রুম সংলগ্ন অন্যরুমেই বসতো ম্যানেজার স্বয়ং। মাঝখানে স্বচ্ছ কাঁচের দেওয়াল। এসব নিয়েই আবর্তিত আমার সেকালের সপ্তপদী মার্কেট শাখার ঋণ বিভাগের ঘর-সংসার।
পরে আরও একজন গোডাউন কীপার জয়েন করল । নাম মোঃ আব্দুল বাকী (বাকী বিল্লাহ) । উচ্চ মাধ্যমিক পাশ। হালকা পাতলা গড়নের । সর্বদা পাজামা পাঞ্জাবী পরে থাকত। মুখে সামান্য দাগ ছিল। পরহেজগার। তবে বেজায় রসিক। সে ছিল আবার বগুড়ার তৎকালীন জোনাল হেড /ডিজিএম এর ভাগ্নী জামাই। তবে কখনোই সে জোনাল হেড এর পরিচয় দিয়ে চলত না। কিছুদিনের মধ্যেই কেন জানিনা রসিক বাকীর সাথে তার সাথে আমার অসম্ভব ধরনের এক প্রকার বন্ধুত্ব হয়ে গেল । তার সাথে ঘটলো কিছু মজার মজার ঘটনা। আপাতত তার ৩টি ঘটনা খুব মনে পড়ছে।
(১) লেজার ব্যালান্সিং -এ এক টাকা কম;
(২) তবলীগ জামাত;
(৩) চাকুরিচ্যুতি এবং নিখোঁজ ।
বাকীকে নিয়ে সংঘটিত ঘটনাগুলোকে আমার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে মজার মজার বললাম বটে , কিন্তু আসলেই কি মজার ছিল ? (ক্রমশ)
///////////////////////////////////////////////////////////////////////////////////////////////////////////////////////////////
বাংলাদেশ সময়: ২১:০০:১৬ ৭৩৬ বার পঠিত #রঙ্গে ভরা ব্যাংকিং জীবন. জালাল উদ্দীন মামুদের স্মৃতি কথ