সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাসের আক্রমনে বিপর্যস্থ অনেক দেশ।বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়।তবে হঠাৎ করেই একটা শ্রেণী চাকরিজীবিদের বেতন কর্তনের কথা চাউর করে বেড়াচ্ছেন যা খুবই দুঃখ জনক।সেটা যিনি বা যারা চাউর করছেন তারা অতি উৎসাহি কিছু নামধারী শিক্ষক।ওদের জন্যই শিক্ষকদের আজ এই দুরবস্থা। বর্তমান সরকার অনেক শক্তিশালী এবং পরিপূর্ণ একটি সরকার।বলা চলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের জন্য এক রোল মডেল।সে হিসেবে আশা করছি এই মহাবিপর্যয় তিনি দক্ষ হাতেই মোকাবিলা করবেন।তবে যাই হোক স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা দেশ দ্রুত মহা বিপর্যয় মুক্ত হোক।কিন্তু যদি কোন কারণে বিপর্যয় শীঘ্র দূর না হয় তবে বেসরকারি শিক্ষক সহ সকল চাকরিজীবিরাই আশা করি মানবতার ডাকে সারা দেবেন এতে কোন সন্দেহ নেই।কিন্তু শুরুতেই যদি সরকার বেতন কর্তন করতে যান তাহলে তো সরকারে ভাবমূর্তি নষ্ট হবে।আমরা যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হলাম এগুলো তো প্রশ্ন বিদ্ধ হবে? এতে সরকারের দেওলিয়াত্বপনা প্রকাশ পেতে পারে।তাই কিছু সংখ্যক হুজুগে মানুষের ইন্দনে এধরনের কাজ দেশের জন্য অমঙ্গল বয়ে আনতে পারে।প্রসঙ্গক্রমেই এসে যায় বেসরকারি শিক্ষকদের কথা।কর্তনের এই নিউজ চাউর হওয়ার পর থেকে রাগে ফেটে পড়ছেন ওরা।এটাকে একশ্রেনীর লোকেরা শিক্ষকদের মানবতাবোধহীন বলে উপহাস করছেন।ভাইরে “পেটের ক্ষুধা আইন বুঝেনা,পেটের ক্ষুধা বুঝে কেবল অন্ন আর অন্নসম অন্য কিছু” তাই বলতেই হয় বেসরকারি শিক্ষকদের ও তো পেট রয়েছে,বাচ্চা কাচ্চা কমবেশি আছে।একটি প্রবাদ আছে “হাতির পেট কর্তন করলে হাতি মারা যায়,আর বেড়ালের পেট কর্তণ করলে বেড়াল মারা যায়”। তাই বেসরকারি শিক্ষক বলে ওদের কি পেট থাকতে নেই? ওদেরে পেটের বুঝি অনুভুতি নেই? আপনারা অনেকে প্রশ্ন করছেন তাহলে দিনমজুরদের কি হবে?তাদের চেয়ে তো শিক্ষকরা ভালো? একটু খেয়াল করলে দেখবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর জাতির উদ্যেশ্যে ভাষণে অতি দরিদ্রদের জন্য বাজেট ঘোষণা করেছেন। দরিদ্রদের জন্য ১০ টাকা কেজি করে চাল দেবেন। সেখানে কি বেসরকারি শিক্ষকরা লাইনে দাঁড়াতে পারবে? আর না বললেই নয়, বেসরকারি সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত মাস্টার্স পাশ একজন শিক্ষকের বেতন সারে বারো হাজার টাকা যা একটা সরকারি পিয়নের বেতনের সমান ও না।তাছাড়া এই স্কেলের একজন শিক্ষক দিনাতিপাত করে ঋণ করে করে।সে হিসেবে ওই শিক্ষকদের ক্ষোভ প্রকাশ করাটা খুবই স্বাভাবিক। তবে বাজে ভাষায় নয় অবশ্যই শালীন ভাষায়।সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টেরই একটা শ্রেণী আছে যারা প্রায়ই একটা কথা দিয়ে বুঝ দেন যে আপনাদের এতো যোগ্যতা থাকলে এখানে আসছেন কেন? তাদেরকে আমি বলি সকল মানুষ এখানে অযোগ্যতা নিয়ে আসেনা।কেউ কেউ শিক্ষকতাকে ভালোবেসেও অনেক উচ্চ ডিগ্রী নিয়ে, যোগ্যতা নিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেও এখানে আসে।বিনয়ের সাথে বলছি, আপনারা যদি এভাবে মন্তব্য করেন তাহলে যোগ্য ব্যক্তিরা শিক্ষকতায় আসবে কিভাবে? তাছাড়া গত এনটিআরসিএর নিয়োগে ৩২ লক্ষ আবেদন থেকে সম্পূর্ণ কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে স্বচ্ছ নিয়োগে ৩০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ পেয়ে দেশ সেরা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে পাশ করে নিয়োগ নিয়েছেন অনেক মেধাবী।আপনাদের এমন মন্তব্যগুলোতে ওই সব ছেলেমেয়েরা যদি অন্য পেশায় চলে যায় এতে কি দেশের লাভ হবে? বরং ভয়ংকর ক্ষতি হবে কারণ আজকের জ্ঞানী,গুণী যারা তৈরি হয়েছেন তারা যেমন কোনও না কোন শিক্ষকই তৈরী করেছেন, ঠিক তেমনি অদূর ভবিষ্যতেও দেশে মেধাবী তৈরী করতে সেই শিক্ষকদেরই লাগবে।তার পরও যদি মনে করেন এরা মেধাবী নয়,তাহলে আপনার কথাই মেনে নিলাম।কিন্তু মেধাহীনদের পেট থাকবেনা,বউ থাকবেনা,বাচ্চা থাকবেনা সেটা কেমন কথা? তাই ওদেরও তো মা বাবা,ভাই বোন সকলকে সাপোর্ট দিতে হয়! আপনি আবার বলবেন সেই দিন মজুরের কথা। আরে ভাই দিনমজুর যে কাজটা করতে পারে সেটা কি শিক্ষকরা করতে পারে? একটা দিনমজুর রাস্তায় ঠান্ডা পানি বেঁচে,সবজি বেঁচে, মাছ বেঁচে যে টাকা উপার্জন করে সেটা আমি আপনি দুজনেও করতে পারি কিনা সন্দেহ।আপনি বলবেন শিক্ষকদের কি দিন মজুরের সাথে তাল দেয়া ঠিক? আমি বলবো না।তবে ধ্রুব সত্য হলো শিক্ষকরা জাতির কর্ণধার।কিন্তু ওরা এখন না পারতেছে উপরে উঠতে, না পারতেছে নিচে নামতে, মাঝখানে ধূঁকে ধূঁকে চলছে, কোথায় যাবে ওরা।অনেক না বলা কথাগুলো ও তো আপনাদের বুঝে নেবার কথা? তাই শিক্ষকদের নিয়ে এমন হাস্যরস্য করা সমাজপতি বা অন্য পেশার লোকদের কি বুদ্ধিমানের কাজ?।মনে রাখবেন দেশের ক্রান্তি কালে বেসরকারি শিক্ষকরা যে দেশের পাশে দাঁড়াবেনা তা নয়।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আহ্বান করলে সকল পেশাজীবিদের পাশাপাশি বেসরকারি শিক্ষকরাও অবশ্যই দাঁড়াবেন।প্রয়োজনে বেতনও দেবেন তবে এই মুহুর্তে ওই শিক্ষকরা এমনিতেই ৪% কর্তনের মনোকষ্টে আছে তার মাঝেই আবার কর্তণের আশংখা সেই বিষয়টাতে অবশ্যই তারা মর্মাহত হয়েছে,হওয়ারই কথা। সেক্ষেত্রে শিক্ষক ভাই বোনদের বলবো কোন কিছু বললে আপনারা মার্জিত ভাষায় বলবেন।কারণ আপনারা জাতির বিবেক।অন্যের বিবেক আছে কিনা সেটা আপনাদের বিবেচ্য বিষয় নয়।সকলের সমান অনুভুতি থাকতে নেই।
আর আশা করি সমাজপতি সহ অন্যনান্যরাও শিক্ষকদের ব্যাপারে অবহেলা,ঠাট্টা না করে ইতিবাচক দৃষ্টি ভঙ্গি রাখবেন।কারণ ওরা একদিন আপনাদের সন্তানদের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলে বিনির্মাণ করে দেবে আগামীর ভবিষ্যৎ।তাই ওদেরকে ভালোবাসুন,ওরাও আপনার সন্তানকে ভালোবেসেই মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে।
সব শেষে স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা,
দেশ করোনা মুক্ত হোক,
দেশ মহা বিপর্যয় কাটিয়ে উঠুক
সকলের মঙ্গল হোক।
লেখক
জীবন কৃষ্ণ সরকার
সভাপতি,
হাওর সাহিত্য উন্নয়ন সংস্থা (হাসুস) বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৪৭:০৪ ১২১১ বার পঠিত