বঙ্গ-নিউজ: আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে শিখদের একটি গুরুদুয়ারায় ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিদের হামলায় ২৫ জন নিহত হয়েছে।
বুধবার বন্দুকধারী ও আত্মঘাতী হামলাকারীরা গুরুদুয়ারাটিতে চড়াও হয় এবং পরে নিরাপত্তা বাহিনী সব হামলাকারীকে হত্যা করে বলে আফগানিস্তানের সরকারের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
কাশ্মীরের ভারতীয় অংশে মুসলিমদের সঙ্গে দিল্লির আচরণের প্রতিশোধ হিসেবে হামলাটি চালানো হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে আইএস, আরও হামলার হুমকি দিয়েছে তারা।
আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তারিক আরিয়ান সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো এক বার্তায় বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে হামলাটি শুরু হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন।
আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী কাবুলের পুরনো অংশের শোরবাজার এলাকায় অবস্থিত ওই গুরুদুয়ারাটি ঘিরে রেখে হামলা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
এর বেশ কয়েক ঘণ্টা পর আরিয়ান জানান, নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান শেষ হয়েছে আর সব হামলাকারী নিহত হয়েছে। তবে হামলাকারী কতোজন ছিল তা জানাননি তিনি।
আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, গুরুদুয়ারাটিতে ২৫ জন নিহত ও আট জন আহত হয়েছেন এবং ৮০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।
আফগানিস্তান পার্লামেন্টে শিখদের প্রতিনিধিত্বকারী সদস্য নরেন্দ্র সিং খালসা জানান, হামলার সময় গুরুদুয়ারাটিতে ২০০ জনের মতো লোক ছিল বলে খবর পেয়েছেন তিনি।
“তিন আত্মঘাতী বোমারু ধর্মশালায় প্রবেশ করে। ধর্মশালা তখন প্রার্থনাকারীতে পূর্ণ ছিল, তখনই হামলা শুরু করে তারা,” বলেন তিনি।
শিখ সম্প্রদায়ের লোকজনের ভাষ্যমতে, দিনটি অন্যান্য দিনের মতোই স্বাভাবিকভাবে শুরু হয়েছিল, মন্দিরেই বাস করা শতাধিক লোক ভোর ৬টা থেকে প্রার্থনা শুরু করে, বাইরে থেকেও অনেকে এসে যোগ দেয়।
ঘণ্টাখানেক পর মন্দিরের প্রবেশ পথে হামলাকারীরা এক রক্ষীকে খুন করায় প্রার্থনায় বাধা পড়ে, এরপরই তারা গুলি শুরু করে আর প্রার্থনাকারীরা আশ্রয়ের জন্য মন্দিরের এদিকে ওদিকে পালাতে শুরু করে।
৩০ বছর বয়সী প্রত্যক্ষদর্শী গুরনাম সিং বলেন, “শিশুরা আতঙ্কিত হয়ে কান্না ও চিৎকার শুরু করে, এখনও কাঁদছে তারা। এ ঘটনা ভুলবে না তারা, তাদের মানসিক অবস্থা ভালো নেই।”
এ হামলায় হরিন্দর সিংয়ের পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য নিহত হন।
তিনি বলেন, “হামলাকারীরা সিঁড়িতে এসেই নারীদের হত্যা করা শুরু করে। আমার ভাইপো চিৎকার করে আমাকে বলে, ‘চাচা, নিচে চলে যান’, আমি নিচে নামার চেষ্টা করতেই তারা আমার ভাইপোর মাথায় গুলি করে।”
এ ঘটনায় হরিন্দরের স্ত্রী, বাবা ও যুবতী কন্যাও নিহত হয়। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, “আমার আদরের কন্যাটি আহত হয়েছিল, মারা যাওয়ার আগে সে বারবার ‘বাবা’, ‘বাবা’ বলে ডাকছিল।”
এর আগেও আইএস দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে শিখদের ওপর হামলা চালিয়েছিল।
১৯৮০-র দশকের শেষ দিকে আফগানিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় পাঁচ লাখের মতো শিখ ছিল, কিন্তু দেশটিতে বছরের পর বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে কারণে ও তালেবানের উত্থানের পর তাদের অধিকাংশই দেশ ছেড়ে চলে যায়। এখন আফগানিস্তানে তিনশটিরও কম শিখ পরিবার আছে।
এক টুইটে তালেবানের এক মুখপাত্র তালেবান এ হামলায় ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় বলে জানিয়েছেন।
এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে অধিকার আন্দোলনকারী গোষ্ঠীগুলো, আফগানিস্তানের কর্মকর্তারা এবং যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তানসহ বেশ কয়েকটি দেশ।
আফগানিস্তানে থাকা নেটো মিশনের এক কর্মকর্তা জানান, গুরুদুয়ারার হামলা প্রতিরোধ ও অভিযানে আফগানিস্তানের বাহিনীগুলোই নেতৃত্ব দিয়েছে, নেটো কিছু পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়েছে।
চলতি মাসে আফগানিস্তানের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর ওপর আইএসের চালানো দ্বিতীয় বড় ধরনের হামলা এটি। এর আগে ৬ মার্চ এক অনুষ্ঠানে হামলা চালিয়ে আইএস জঙ্গিরা ৩২ জনকে হত্যা করেছিল যেখানে শিয়া হাজারা সম্প্রদায়ের অনেক সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১:১৪:৫৮ ৬৯৮ বার পঠিত #আইএস হামলা #আফগানিস্তান #গুরুদুয়ারা.কবুল