বঙ্গ-নিউজ: শর্তসাপেক্ষে খালেদা জিয়ার মুক্তি দিল সরকার। খালেদা জিয়ার মুক্তিতে স্বস্তিবোধ করলেও নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর এই সময়ে তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্নও বিএনপি।
খালেদার মুক্তির সিদ্ধান্ত সরকার জানানোর পর মঙ্গলবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠকের পর এই প্রতিক্রিয়া জানান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, “আমরা কিছুটা আবেগ আপ্লুত তো বটেই, কিছুটা স্বস্তিও বোধ করছি। আবার কিছু আমরা আতঙ্কিতবোধ করছি এই ভয়ঙ্কর সময়ে তার এই মুক্তি … তার কোনো ক্ষতি না ঘটে।”
নভেল করোনাভাইরাস যখন বৈশ্বিক মহামারী আকার ধারণের পর বাংলাদেশেও ৩৯ জনকে আক্রান্ত এবং চারজনের মৃত্যু ঘটিয়েছে, তখন মুক্তি পাচ্ছেন নানা রোগে আক্রান্ত ৭৫ বছর বয়সী খালেদা।
দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ড নিয়ে দুই বছর আগে কারাগারে যাওয়া খালেদা জিয়া অসুস্থতার জন্য এক বছরের বেশি সময় ধরে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে।
নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে এসময় জনসমাগম এড়ানোর নির্দেশনা রয়েছে সরকারের; সংক্রমণের ভয় রয়েছে বিএনপি নেতাদের মধ্যেও।
ফখরুল বলেন, “উনি অত্যন্ত অসুস্থ, উনি ডায়াবেটিকস রোগী, আর্থারাইটিসে ভুগেছেন, উনার অ্যাজমারও সমস্যা আছে। এসব সমস্যাগুলো করোনাভাইরাসের জন্য মারাত্মক সমস্যা অর্থাৎ সবচেয়ে ভালনারেবল হয়ে যায়।”
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “মুক্তি পেলে সবাই আবেগে আপ্লুত হবে তাকে এক নজর দেখার জন্য, তার কাছে যাওয়ার জন্য। কিন্তু আজকে সমগ্র বিশ্বে ভয়ঙ্কর মহামারীতে ইতোমধ্যে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত।
“এই অবস্থার প্রেক্ষিতে উনি যদি বেরিয়ে আসেন, আমাদের নেতা-কর্মী সবাইকে আমরা আবেগের বশবর্তী না হয়ে ম্যাডামের স্বাস্থ্যের জন্য, ম্যাডামের জীবনের জন্য, অন্যান্য সকলের নিরাপত্তার জন্য আমরা শান্ত থাকতে এবং দূরে থাকতে আহ্বান করছি।
“নেতা-কর্মীর প্রতি অনুরোধ, আপনারা স্বস্তি পেয়েছেন, আমাদেরকেও দায়িত্বশীল হতে হবে। পিজি হাসপাতালের সামনে এবং ম্যাডামের বাসার সামনে দয়া করে কেউ ভিড় করবেন না। এতে ম্যাডামের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।”
মুক্তি পেলে খালেদার চিকিৎসার বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “ম্যাডামের ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা চিকিৎসা আগে থেকে করেছেন, উনারা আছেন। আমরা তাদের সাথে যোগাযোগ করছি।
“ম্যাডাম হাসপাতালে চিকিৎসা নেবেন, না বাসায় চিকিৎসা নেবেন, সেটা তার সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে। সেটা এখন আমরা জানি না। তার সাথে আমরা এখনও যোগাযোগ করতে পারি নাই।”
খালেদা জিয়ার মুক্তির নথি এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে অনুমোদিত হওয়ার পর কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আদেশ তা যাবে, যা বুধবারের আগে হচ্ছে না।
দণ্ডের কার্যকারিতা স্থগিত, শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পাচ্ছেন খালেদা
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, দুর্নীতির মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনের দণ্ডের কার্যকারিতা স্থগিত করে সরকার সদয় হয়ে তাকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
শর্ত হল- এই সময়ে খালেদা জিয়াকে ঢাকায় নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে, তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না; যদিও বিএনপি তাদের নেত্রীর নিঃশর্ত মুক্তি চেয়ে আসছিল।
ফখরুল বলেন, “এটা (শর্তসাপেক্ষে মুক্তি) আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। বোধগম্য নয় এজন্য যে, পরিবার যে আবেদনটা করেছিল, তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মুক্তি।”
“যাই হোক তারপরেও বিএনপি নেতা-কর্মীরা, দেশের মানুষ স্বস্তিবোধ করছেন। দীর্ঘকাল পরে আজকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার যেটা প্রাপ্য আইনগতভাবে, সাংবিধানিকভাবে, এই সাময়িকভাবে হলেও মুক্তি পেয়েছেন। আমরা আশা করি তিনি ঠিক সময়মতোই কারাগার থেকে বেরুতে পারবেন।”
বিকালে সরকারের সিদ্ধান্ত জানার পর সন্ধ্যায় গুলশানে খালেদার কার্যালয়ে দলে জরুরি বৈঠকে বসেন বিএনপির নীতি-নির্ধারণী ফোরামের সদস্যরা, যাতে স্কাইপে লন্ডন থেকে যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
মহাসচিব ফখরুল ছাড়াও বৈঠকে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
বৈঠকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নাল আবেদীন, এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও আব্দুল কুদ্দুসও বৈঠকে যোগ দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১:২৪:৪৫ ৫৫৭ বার পঠিত #খালেদা জিয়া #ছয় মাসের জন্য দন্ড স্থগিত #শর্তযুক্ত মক্তি