বঙ্গনিউজ ডটকমঃ খালাস না করায় মংলা বন্দরে নষ্ট হচ্ছে আমদানি করা সাড়ে তিন হাজার রিকন্ডিশন্ড গাড়ি। তিন বছর আগে এই বিপুলসংখ্যক গাড়ি আমদানি করা হয়। কিন্তু কর ফাঁকি দিতেই এতদিন পেরিয়ে গেলেও এগুলো খালাস করেন নি আমদানিকারকরা। গাড়িগুলোর বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে গেছে। আর এসব গাড়িই এখন খালাসের চেষ্টা চলছে।এদিকে মংলা পোর্টের কাস্টমস বিভাগ জানায়, কর ফাঁকি দিয়ে এগুলো খালাসের আর কোনো সুযোগ নেই। খালাস করতে হলে আমদানি করার সময় যে কর ছিল তা-ই পরিশাধ করতে হবে। যদিও এগুলো অবচয় সুবিধায় খালাস করার জন্য ব্যবসায়ীরা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন বলে জানায় কাস্টমসের সংশ্লিষ্ট সূত্র।
সরেজমিনে জানা যায়, মংলা বন্দরে আমদানি করা রিকন্ডিশন্ড গাড়ির চাপ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এ মুহূর্তে বন্দরে তিন হাজার ৬৯৬টি গাড়ি খালাসের অপেক্ষায়। ফলে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা দিতে হিমশিম খাচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। পার্কিং ধারণক্ষমতার চেয়েও কয়েক গুণ বেশি গাড়ি জেটিতে পড়ে থাকায় সেগুলো রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে রঙ, ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তারপরও বাজারে প্রবেশ করলে সরকার একদিকে রাজস্ব হারাবে, অন্যদিকে ক্রেতারা নষ্ট গাড়ি কিনে পড়বেন বিপাকে।
মংলা বন্দরের আবহাওয়ায় লবণাক্ততা বেশি হওয়ায় সেখানে কোনো গাড়ি দীর্ঘদিন পড়ে থাকলে এর স্থায়িত্ব বা আয়ুষ্কাল কমে যায়।
সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের ৩ জুন জাপান থেকে আমদানি করা ২৫৫টি রিকন্ডিশন্ড গাড়ি মংলা বন্দর দিয়ে খালাসের মাধ্যমে প্রথম রেকর্ড গড়ে গাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হকস বে অটোমোবাইলস। তখন এ বন্দর দিয়ে গাড়ি খালাস প্রক্রিয়ায় বন্দর কর্তৃপক্ষ ও কাস্টমসের আন্তরিক সহযোগিতা, খরচ চট্টগ্রামের তুলনায় তিন ভাগের এক ভাগ হওয়ায় এবং শেডের ভেতরে নিরাপদে গাড়ি রাখার সুবিধা আমদানিকারকদের আকৃষ্ট করে। এ সকল সুবিধার কারণে হকস বে অটোমোবাইলসহ একাধিক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এ বন্দর ব্যবহারে ঝুঁকে পড়ে। এরপর থেকে মংলা বন্দরে আমদানি ও গাড়ি খালাসের পরিমাণ বাড়তে থাকে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী ট্রাফিক ম্যানেজার মোস্তফা কামাল জানান, ২০০৯ থেকে ২০১৩ সালের জুলাই পর্যন্ত এ বন্দর দিয়ে ২৬ হাজার ৬৯০টি গাড়ি আমদানি করা হয়েছে। যার মধ্যে তিন হাজার ৬৯৬টি গাড়ি খালাসের অপেক্ষা বন্দর জেটিতে পড়ে আছে। সর্বশেষ ১৭ জুলাই এখান থেকে বিভিন্ন আমদানিকারকের ৩২টি গাড়ি খালাস করা হয়েছে।
বর্তমানে বন্দরের শেডের ভেতরে এবং বাইরে খোলা আকাশের নিচে অরক্ষিত রয়েছে-টয়োটা করোলা, টয়োটো এক্স করোলা, টয়োটা এলিয়ন, প্রাডো, এফ প্রিমিও, নোয়াহ, হায়েস, প্রবক্স, নিশান এবং র্যাভ ফোর গাড়ি।
এসব গাড়ির আমদানিকারক হচ্ছে- হকস বে আটোমোবাইলস, মরিয়ম এন্টারপ্রাইজ, অটো স্টোর, আজাদ ট্রেডিং, কার নেট, সালসাবিন, কার সিলেকশন। এছাড়া এ বন্দর দিয়ে র্যাংকস মোটরস নতুন গাড়ি আমদানি করে।
অভিযোগ রয়েছে জালিয়াতির সুযোগ, নিলামে না তোলা ও চট্টগ্রাম বন্দরের তুলনায় ভাড়া কম হওয়ায় মংলা বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানিতে ঝুঁকছেন ব্যবসায়ীরা।
শেড ভাড়া কম থাকায় অনেকেই বন্দরের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় গোডাউনের পরিবর্তে মংলা বন্দরে গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা লুফে নিচ্ছে। একটি সূত্র দাবি করছে, এ সুবিধাটি বেশি ব্যবহার করছে হকস বে অটোমোবাইলস।
জালিয়াত চক্রের বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে গাড়ি আমদানি করায় সংকটে পড়েছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। আইন অনুযায়ী পাঁচ বছরের চেয়ে বেশি পুরনো গাড়ি আমদানি করা নিষিদ্ধ হলেও এ আইনটি অমান্য করছে প্রভাবশালী কয়েকটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। তারা গাড়ির বয়স কম দেখিয়ে মংলা বন্দর দিয়ে তা আমদানি করছে।
অভিযোগ রয়েছে–আমদানি করা গাড়ি চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে নামানোর পর এক মাসের মধ্যে খালাস না করলে নিলামে তুলে বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়। যে নিয়মটি মংলা বন্দরেও আছে, কিন্তু ব্যক্তি বিশেষের ক্ষেত্রে তা কার্যকর করা হচ্ছে না।
মংলা কাস্টমস হাউজের সহকারী কমিশনার সাইদুল আলম বলেন, ‘আমদানিকারকরা যখন ট্যাক্স দিয়ে গাড়ি খালাস করে, তখন আমরা গাড়িটির ইঞ্জিন ও চ্যাসিস নম্বর পরীক্ষা করি। যদি অমিল পাই, তবে গাড়ি আটকে দিই।’ তিনি জানান, কোনোভাবেই ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নেই।
তিনি আরও জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে মংলা দিয়ে গাড়ি আমদানি করতে পাঁচ গুণ খরচ কম লাগে। একারণে গাড়ি আমদানিকারকদের এ বন্দরের প্রতি ঝোঁক বেশি।
মংলা পোর্টের সহকারী কাস্টমস কমিশনার (ট্রান্সপোর্ট) মাহফুজ আহমেদ জানান, মংলা বন্দর দিয়ে আনা গাড়িতে কর ফাঁকি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১২:৩৯:৫১ ৪৪৬ বার পঠিত