টুঙ্গিপাড়ার খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু - গুলশান আরা রুবী
Home Page » সাহিত্য » টুঙ্গিপাড়ার খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু - গুলশান আরা রুবীগোপালগঞ্জ জেলার এক প্রত্যন্ত অঞ্চলের সবুজ শ্যামল ছায়ঘেরা গ্রামের নাম টুঙ্গিপাড়া। ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ এই গ্রামে জন্ম নেন একটি ছেলে। পরবর্তী তিনি হয়ে ওঠেন বাঙালির চেতনার অবিসংবাদিত নেতা, বাঙালি জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু তিনি হলেন সর্বশেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমান । ছোটবেলা থেকেই বেড়ে উঠেছেন টুঙ্গিপাড়ায়।যৌবন থেকে শুরু করে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাঁর জীবন কেটেছে বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ে। আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। সারাজীবন ধরে চেয়েছেন বাঙালির জন্য পৃথক আবাসভূমি বাংলা নামক দেশের জন্য।তার পিতা বাবা শেখ লুৎফর রহমান এবং মা সায়েরা খাতুনের খুবই আদরের ছেলে ছিলেন তিনি। ডাক নাম ছিল খোকা। টুঙ্গিপাড়ার গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাকে ভর্তি করা হয় সাত বছর বয়সে। বাবা স্কুলে যাবার পথে খোকা যাতে বৃষ্টিতে না ভেজে তার জন্য ছাতা কিনে দিয়েছিলেন। খোকা তো আর নিজের কথা ভাবে না। সবার দুঃখকষ্ট লাঘবের জন্য তাঁর জন্ম হয়েছে। খোকা সেই ছাতাটা একদিন দান করেন গরীব বন্ধু গোপাল কে । বন্ধুটি চোখ উজ্জ্বল করে তাকিয়ে ছিল খোকার দিকে। বন্ধুর খুশিই যেন খোকার খুশি। একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে খোকা দেখতে পায় এক গাছের নীচে বসে একজন ভিখারি বুড়ি ভিক্ষে করছেন। বুড়ো মানুষ শীতে কাঁপছেন থরথর করে। খোকা নিজের গায়ের চাদর বুড়োর গায়ে জড়িয়ে দিয়ে বলেছিল, ‘এই চাদরটা তোমাকে দিলাম।’ মানুষের প্রতি খোকার ভালোবাসা দেখে বাবা শেখ লুৎফর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন ছেলেটি সবার মতো না। ছেলেটি অন্যরকম। সবার থেকে আলাদা। এই ছেলেই একদিন দেশ গড়ে তুলবে, বিশ্ব খ্যাতি অর্জন করবে।গ্রামে তখন একটি মাত্র ইংরেজি স্কুল ছিল, যা পরে হাইস্কুল হয়। সেই স্কুলে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা শেষে চতুর্থ শ্রেণীতে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৩৪ সালে যখন সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র, তখন ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। সে সময়ের স্মৃতিচারণ করে বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘ছোট সময়ে আমি খুব দুষ্টু প্রকৃতির ছিলাম। খেলাধুলা করতাম, গান গাইতাম এবং খুব ভাল ব্রতচারী করতে পারতাম। হঠাৎ বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হয়ে আমার হার্ট খুব দুর্বল হয়ে পড়ে। আব্বা আমাকে নিয়ে কলকাতায় চিকিৎসা করাতে যান। কলকাতার বড় ডাক্তার শিবপদ ভট্টাচার্য, একে রায় চৌধুরী আরও অনেককেই দেখান এবং চিকিৎসা করাতে থাকেন। প্রায় দুই বছর আমার এভাবে চলে।
যদি আমরা তার জীবনের গল্পের দিকে থাকাই তাহলে আমাদের ভাষা আন্দোলন থেকে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আমরা একটি আলাদা রাষ্ট্র পেয়েছি।
পাকিস্তানীরা দু’বার বাঙালি জাতির কাছে পরাজিত হয়েছে। ৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে এবং ’৭১-এ স্বাধীনতা যুদ্ধে। ভাষা আন্দোলনে যদি হেরে যেতাম তাহলে উর্দুতে কথা বলতে হতো আবার স্বাধীনতা যুদ্ধে হেরে গেলে পাকিস্তানে বসবাস করতো হতো। অথচ এই দুই আন্দোলনেই বঙ্গবন্ধু মুজিব কারাগারে বন্দি ছিলেন।১৯৭১ সালের ৭ মার্চে প্রায় ১০ লক্ষ জনসমক্ষে এবং ২৬ শে মার্চ প্রথম প্রহরে লিখিতভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করার কারণে ওই রাতেই শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের লায়ালপুর সামরিক জেলে দন্ড বিধি ১২১ ধারামতে রাষ্ট্রদ্রোহীর মামলায় বঙ্গবন্ধুর গোপন বিচার করে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয় এবং সেলের পাশে কবর খোঁড়া হয়। ২৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি প্রদানের দাবি জানানো হয়। ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য পাকিস্তান সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে বলা হয়, শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। তিনি বাংলাদেশের স্থপতি, কাজেই পাকিস্তানের কোন অধিকার নেই তাকে বন্দি করে রাখার। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে বহু রাষ্ট্রের স্বীকৃতি লাভ করেছে। ফলে বিশ্ব চাপে শেষ পর্যন্ত ৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তান কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেয়।
বঙ্গবন্ধু কখনো অন্যায়ের কাছে কখনো আপোষ করেনি।তিনি সবসময়ই বাঙালির কথা ভাবতেন।বাঙালি জাতির জন্য তিনি সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন।১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগষ্ট খন্দকার মোশতাকের নির্দেশে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে সপরিবারে গুলি করে তাঁকে হত্যা করেছিল।যাহা বাঙালির ইতিহাসে একটি কংলক জনক অধ্যায়।
জন্মশতবার্ষিকীর মূল আয়োজন শুরু হবে ১৭ মার্চ সূর্যোদয়ের ক্ষণ থেকেই। ওইদিন সকালে ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনীর তোপধ্বনির মাধ্যমে শুরু হবে মূল অনুষ্ঠান। ঢাকা ও গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় একই সঙ্গে অনুষ্ঠান শুরু হবে। ওইদিন সকালে টুঙ্গিপাড়ায় থাকবে জাতীয় শিশু দিবস নিয়ে নানা আয়োজন। এরপর বিকালে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হবে মূল আয়োজন, যাতে প্রকাশ করা হবে জন্মশতবার্ষিকীর বিভিন্ন স্যুভেনির, স্মারক বক্তৃতা, দেশী-বিদেশী শিল্পীদের সমন্বয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আয়োজন করা হবে আনন্দ শোভাযাত্রা। রাজধানীসহ সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, সড়কদ্বীপকে সাজানো হবে রঙিন সাজে। ১৭ মার্চ অনুষ্ঠানের মূল পর্বে বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান, বঙ্গবন্ধুর সমসাময়িক সময়ের রাজনৈতিক, সামাজিক ব্যক্তিত্বরা উপস্থিত থাকবেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, ইউনেস্কোর সাবেক মহাসচিব ইরিনা বুকোভা ও আরব লিগের সাবেক মহাসচিব আমর মুসা এ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারেন। আমন্ত্রণের তালিকায় থাকা আন্তর্জাতিক নেতাদের মধ্যে রয়েছেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, ভারতের কংগ্রেস পার্টির গুরুত্বপূর্ণ নেতা সোনিয়া গান্ধী, বিজেপির নেতা ও ভারতের সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী এলকে আদভানি, জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেল, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ প্রমুখ।
১৮ মার্চ জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশন বসবে, যাতে উপস্থিত থাকবেন বিভিন্ন দেশ থেকে আসা আমন্ত্রিত অতিথিরা। ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস, ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার দিবস ও ৭ জুন ছয় দফা দিবস উদযাপন নিয়ে থাকবে নানা আয়োজন।
আগামী ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রোজ গার্ডেনে হবে সেমিনার। এছাড়া ওইদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হবে সমাবেশ ও আনন্দ শোভাযাত্রা। এরপর জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আগস্টজুড়ে থাকছে আওয়ামী লীগ ও উদযাপন কমিটির উদ্যোগে নানা আয়োজন।
সবিশেষে বলতে হয় ‘” যতদিন রবে পদ্মা যমুনা
গৌরি মেঘনা বহমান,
ততকাল রবে কীর্তি তোমার
শেখ মুজিবুর রহমান
দিকে দিকে আজ রক্তগঙ্গা
অশ্রুগঙ্গা বহমান
তবু নাহি ভয় হবে হবে জয়
জয় মুজিবুর রহমান। “
বাংলাদেশ সময়: ১৬:৪৯:২৮ ১০১৬ বার পঠিত # #আমার পিতা শেখ মুজিব #সুত্র///অসমাপ্ত আত্মজীবনি
পাঠকের মন্তব্য
(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)সাহিত্য’র আরও খবর
সাধক কবি রামপ্রসাদ সেন: স্বপন চক্রবর্তী
ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা “আমি তো গাঁয়ের মেয়ে ”
৫০ বছরের গৌরব নিয়ে জাবির বাংলা বিভাগ বিশাল ‘সুবর্ণ জয়ন্তী’ উৎসব আয়োজন করেছে
অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা- ‘তোমার খোঁজে ‘
অতুলপ্রসাদ সেন: ৩য় (শেষ ) পর্ব-স্বপন চক্রবর্তী
অতুলপ্রসাদ সেন;পর্ব ২-স্বপন চক্রবর্তী
অতুলপ্রসাদ সেন-স্বপন চক্রবর্তী
অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা ” যাবে দাদু ভাই ?”
বাদল দিনে- হাসান মিয়া
ইমাম শিকদারের কবিতা ‘ছোট্ট শিশু’
-
সালাম, আমান, রিজভী, খোকন, শিমুল ও এ্যানিসহ গ্রেফতার শতাধিক
বুধবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০২২ -
ভারতকে হারিয়ে টাইগারদের সিরিজ জয় নিশ্চিত
বুধবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০২২ -
নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ ,নিহত ১
বুধবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০২২ -
জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কারে ভূষিত ওসমানীনগরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিক
বুধবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০২২ -
বিয়েবর্হিভূত যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ: প্রতিবাদে বিক্ষােভ ইন্দোনেশিয়ায়
মঙ্গলবার ● ৬ ডিসেম্বর ২০২২ -
আড়াইহাজারে অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
মঙ্গলবার ● ৬ ডিসেম্বর ২০২২
আর্কাইভ
Head of Program: Dr. Bongoshia
News Room: +8801996534724, Email: [email protected] , [email protected]