অগ্নিঝরা মাস মার্চ

Home Page » জাতীয় » অগ্নিঝরা মাস মার্চ
রবিবার, ১ মার্চ ২০২০



ফাইল ছবি

বঙ্গ-নিউজ-

অগ্নিঝরা ১লা মার্চ শুরু হলো। এবারের মার্চ আলাদা তাত্পর্যে অভিষিক্ত। ‘মুজিববর্ষে’র এই মার্চ সারা বিশ্বে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে উন্নীত করবে আলোকিত সাম্রাজ্যে। অবশ্য ১৯৭১ সালের মার্চের ইতিহাস বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ও আমাদের অস্তিত্বের অনন্য নজির।

১৯৭১ সালের মার্চে এই প্রথম স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রস্তুতির প্রধান ধারা নিয়মতান্ত্রিক স্বায়ত্তশাসনের পরিবর্তে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যয় ঘোষিত হয়। ১ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আহবানে সারাদেশে শুরু হয় ব্যাপক অসহযোগ আন্দোলন। এর পরদিন দাঙ্গা হয়। বিহারিরা হামলা করেছিল শান্তিপূর্ণ মিছিলে। এর থেকে আরো গোলযোগের সূচনা হয়েছিল। ২ মার্চ পূর্ব পাকিস্তানে ছিল স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল।

৬ মার্চ রাতে ইয়াহিয়া বঙ্গবন্ধুকে টেলিফোনে বলেন—এমন পদক্ষেপ দয়া করে নেবেন না, যেখান থেকে ফিরে আসা যাবে না। এরপর ইয়াহিয়া টেলিপ্রিন্টারে একটি বার্তা প্রেরণ করেন, যার একটি কপি সামরিক আইন সদর দপ্তরেও পাঠানো হয়।

ইয়াহিয়া সেই বার্তায় উল্লেখ করেন— ‘আমার কাছে একটি পরিকল্পনা আছে যা আপনাকে ছয় দফা থেকেও বেশি খুশি করবে।’ তবে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ইয়াহিয়া (এমনকি তত্কালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মি. ফারল্যান্ড পর্যন্ত) যে সব আলোচনা হয়েছে, তার ভাষা ছিল একই রকম এবং তা ছিল আন্তরিকতাশূন্য।

ঘটনা হলো—বঙ্গবন্ধুই স্বাধীনতা আন্দোলনের মৌলস্তম্ভ। তাকে আটক করতে পারলে এবং ‘রাজি করাতে পারলে’ পাকিস্তানের অসত্ উদ্দেশ্য অনেকটাই সফল হয়। সেক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও বাঙালির জীবন বাঁচাতে। অবশ্য বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পনা ছিল নিখুঁত। মার্চ মাসের গোড়ার দিকে তিনি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নূরুল্লাহকে একটা বেতার ট্রান্সমিটার বানিয়ে রাখতে বলেন যাতে চরম মুহূর্তে নির্দেশ দিয়ে যেতে পারেন। এখান থেকেই তার সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনা বোঝা যায়। তবে পাকিস্তানি বর্বর বাহিনী যে গণহত্যা চালিয়েছিল, তা বঙ্গবন্ধুর ধারণায় ধরা দেয়নি সেসময়।

৭ই মার্চ সকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মি. ফারল্যান্ড বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করেন। পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। ফারল্যান্ড বঙ্গবন্ধুর কাছে আমেরিকার নীতিমালা পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেন। বলেন—একতরফাভাবে স্বাধীনতা বা বিচ্ছিন্নতাবাদী ঘোষণা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পাবে না এবং এ জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যের আশায় যেন তাকিয়ে না থাকেন। যুক্তরাষ্ট্র অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষে। তবে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ঘোষণা বাঙালির কাছে ছিল গ্রিন সিগন্যাল।

৭ই মার্চের ভাষণের পর সারাদেশে স্বাধীনতা আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে; আর ৮ মার্চ থেকে সাতটি সেনানিবাস বাদে বঙ্গবন্ধুর শাসন সমগ্র প্রদেশে বিস্তার লাভ করে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের শাসন সংহত করার জন্য ৩১টির ওপর নির্দেশ জারি করা হয়। নির্দেশাবলি সমাজের সর্বস্তরে যথা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অফিস-আদালত, কলকারখানা, রাষ্ট্রীয় ও বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ, রেডিও-টিভি সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ছিল।

ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাসভবন থেকে প্রাদেশিক সরকারের কাজ চলছিল। মূলত বঙ্গবন্ধু সরকারের নিয়ন্ত্রণ দখল করেছিলেন। বাস্তবে একটি সমান্তরাল সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। রেডিও-টিভির পর কারাগার কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ প্রধান আওয়ামী লীগের প্রতি আস্থা প্রকাশ করে। ১২ মার্চ সকল বাঙালি সিএসপি ও ইপিসিএস অফিসাররা বঙ্গবন্ধুর প্রতি আনুষ্ঠানিক সমর্থন ঘোষণা করেন এবং আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের কাছ থেকে নির্দেশ গ্রহণের ইচ্ছার কথা জানান।

বঙ্গবন্ধু ঘোষিত অহিংস-অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে খাজনা-ট্যাক্স বর্জন এবং অন্যান্য কর্মসূচিসহ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশব্যাপী সংগ্রাম পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত দেশের মানুষের কাছে খুবই যথার্থ ছিল। ১২ মার্চ লন্ডনের ‘ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ড’ পত্রিকায় বলা হয়, জনগণের পূর্ণ আস্থাভাজন শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানের প্রকৃত শাসনকর্তা বলে মনে হয়।

সরকারি অফিসার, রাজনীতিবিদ, ব্যাংকার, শিল্পপতি এবং অন্যান্য মহলের লোকজন তার সঙ্গে দেখা করার জন্য ৩২ নম্বরের বাড়িতে গিয়ে ভিড় জমাচ্ছে। ১৪ মার্চ বঙ্গবন্ধু এক বিবৃতির মাধ্যমে হরতাল অব্যাহত রাখাসহ ৩৫টি নির্দেশ জারি করেন। এই নির্দেশের মধ্য দিয়ে তার সর্বময় ক্ষমতা গ্রহণের সব দিক সম্পন্ন হয়। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ১৫ মার্চ ঢাকা এসে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার নামে প্রহসন চালাতে থাকে। অন্যদিকে হানাদাররা ২৫ মার্চ এদেশের মানুষের ওপর হামলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলে।

এরই মধ্যে ২১ মার্চ ভুট্টোর ঢাকায় আগমন, ২৩ মার্চ আওয়ামী লীগের প্রতিরোধ দিবস পালন, ২৪ মার্চ শাসনতান্ত্রিক কনভেনশনের প্রস্তাব প্রদান, ২৫ মার্চ ইয়াহিয়ার ঢাকা ত্যাগ সবই বঙ্গবন্ধুর কর্তৃত্বের বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছে। ২৩ মার্চ নিজের গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে প্রেসিডেন্ট হাইজে যাওয়া বঙ্গবন্ধুর সেই কর্তৃত্বেরই অংশ ছিল।

সেসময় মুজিবের নির্দেশ ছিল বাইবেলের বাণীর মতোই পবিত্র। পহেলা মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত অসহযোগসহ অন্যান্য কর্মসূচি শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছিল। জনগণের সমর্থন নিয়ে সর্বাত্মক ঐক্য সৃষ্টির অভূতপূর্ব নজির সৃষ্টি হয়েছিল এদেশে। একাত্তরের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু তার জন্মদিনে বলেছিলেন, ‘আমার জনগণের জন্যই আমার জীবন।’

১৩ মার্চ শুরু হলো বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনা। সবাই ক্ষণিকের জন্যে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছিল। আশা করেছিল পাকিস্তানি নেতারা যুক্তি মানবে এবং পরিস্থিতির উন্নতি হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে পাকিস্তানিদের সামরিক প্রস্তুতি হ্রাস না পেয়ে দিন দিন বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। প্রতি দিনই পাকিস্তান থেকে সেনা আমদানি করা হয়। বিভিন্ন স্থানে জমা হতে থাকে অস্ত্রসস্ত্র আর গোলাবারুদ। সিনিয়র পাকিস্তানি সামরিক অফিসাররা সন্দেহজনকভাবে বিভিন্ন গ্যারিসনে আসা-যাওয়া করতে থাকে।

চট্টগ্রামে নৌ-বাহিনীতে শক্তি বৃদ্ধি করা হয়। ২১ মার্চ জেনারেল আব্দুল হামিদ খান যান চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে। এক সন্ধ্যায় পাকিস্তানি বাহিনী জাহাজ সোয়াত থেকে অস্ত্র নামানোর জন্য বন্দরের দিকে যাবার সময় পথে জনতার সঙ্গে তাদের কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়। এরপর এলো ২৫ও ২৬ মার্চের মধ্যবর্তী কালরাত। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা বিশ্ববাসী শুনতে পেল ২৬ মার্চ ও তার পরের দিন থেকে।

বাংলাদেশ সময়: ২১:০৫:০৩   ১০৪০ বার পঠিত   #  #  #  #




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

জাতীয়’র আরও খবর


সালাম, আমান, রিজভী, খোকন, শিমুল ও এ্যানিসহ গ্রেফতার শতাধিক
ভারতকে হারিয়ে টাইগারদের সিরিজ জয় নিশ্চিত
 নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ ,নিহত ১
বিয়েবর্হিভূত যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ: প্রতিবাদে বিক্ষােভ ইন্দোনেশিয়ায়
আড়াইহাজারে অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
কোয়ার্টারে ব্রাজিল ক্রোয়েশিয়া মুখোমুখি
ব্যাংকে টাকা নিয়ে গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তির লটারি ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর
২০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে করোনা টিকার চতুর্থ ডোজ
সউদী আরব তৈরি করবে বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবন্দর

আর্কাইভ