বঙ্গ- নিউজ ডটকমঃ তীব্র গ্যাস সঙ্কটে নাকাল রাজধানী রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় রান্নার চুলা জ্বলছে না। সেহরি ও ইফতারি তৈরির সময় গ্যাস না পেয়ে সঙ্কটে পড়ছেন রোজাদাররা
রমজানে জ্বালানি গ্যাস সঙ্কটে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকরা। গ্যাসের চাপ কম থাকায় অধিকাংশ এলাকায় রান্নার চুলা জ্বলছে না। সেহরি ও ইফতারি তৈরির সময় গ্যাস না পেয়ে সঙ্কটে পড়ছেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ। এছাড়া অনেক এলাকায় দুপুর থেকে রান্না শুরু করেও ইফতারির আগে তা শেষ করা যাচ্ছে না।এদিকে, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অতিরিক্ত সরবরাহ করায় গ্যাস সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিতাত গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিসট্রিউশন কোম্পানি লিমিটেডের উপমহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মসিউর রহমান। তিনি বলেন, সারাদেশে ১ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দরকার। কিন্তু সরবরাহ হচ্ছে মাত্র ১ হাজার ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এখানে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস কম সরবরাহ হচ্ছে। তিনি বলেন, রমজানে এক সঙ্গে চাহিদা থাকার কারণে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কারণ বিকালে হোটেল, বাসা ও কারখানায় একসঙ্গে গ্যাস দিতে হচ্ছে। এ কারণে এ সময় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। রমজানের মধ্যে গ্যাস সঙ্কটের সমাধান হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা এক সপ্তাহ পরে বুঝা যাবে। তবে সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।কবে নাগাদ গ্যাস সঙ্কটের সমাধান হবে তার সঠিক কোনো উত্তর দিতে পারেননি প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরীও। রোববার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এ সঙ্কট সাময়িক। আশা করেন শিগগিরই গ্যাস সঙ্কট কেটে যাবে। রমজানের মধ্যে এ সঙ্কট কাটবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা হলে ভালো হতো।জানা গেছে, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রে অতিরিক্ত গ্যাস সরবরাহ করতে গিয়েগৃহস্থালিতে সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে বাঙ্গুরা ক্ষেত্র সংস্কারের কারণে তিতাস এমনিতেই প্রতিদিন ৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট কম সরবরাহ পাচ্ছে। এতে সঙ্কট আরো বেড়েছে। জুন থেকেই ধারাবাহিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। ৬ জুন ৬ হাজার ৪১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে পিডিবি বছরের সর্বোচ্চ উৎপাদনের দাবি করেছিল। এক মাস পর ৪ জুলাই ৬ হাজার ৫৭৬ মেগাওয়াট উৎপাদন করে আবারো রেকর্ড করার দাবি করেছিল পিডিবি। এর ছয় দিনের মধ্যে পিডিবি আবারো বিদ্যুৎ উৎপাদনের নতুন রেকর্ড দাবি করে। ১০ জুলাই রাতে ৬ হাজার ৬৪০ মেগাওয়াট সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের নতুন রেকর্ড সৃষ্টির দাবি করা হচ্ছে। রমজানে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ দিতে সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ জন্য বেশি পরিমাণে গ্যাস সরবরাহ করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে পেট্রোবাংলাকে।সূত্র জানায়, জুনে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড়ে ৯১৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হলেও এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনে এক হাজার মিলিয়নের ওপরে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। গত রোববার রাতে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ১ হাজার ৩২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করতে হয়েছে। যা গত মাসের গড় ব্যবহারের চেয়ে ১১৩ মিলিয়ন ঘনফুট বেশি।পিডিবি বলছে, রমজানে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ১ হাজার ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সরবরাহ প্রয়োজন। পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে প্রতিদিন তারা ১ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ করতে পারবে। এমনিতে তিতাসের চাহিদা এবং সরবরাহের মধ্যে প্রতিদিন ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট ঘাটতি রয়েছে। এর ওপর রমজানে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরবরাহ বৃদ্ধি করা হয়েছে আরো ৭০ মিলিয়ন ঘনফুট। ফলে বাসাবাড়িতে সরবরাহ কমছে।সূত্র মতে, রাজধানী এবং আশপাশের এলাকার তাদের বৈধ গ্রাহক সংখ্যা বর্তমানে ১৫ লাখ ৫৬ হাজার ৫৬৩টি। এর মধ্যে আবাসিক ১৫ লাখ ৩৯ হাজার ৬৯১ এবং বাণিজ্যিক গ্রাহকের সংখ্যা ১০ হাজার ৮৯৩টি। সিএনজি স্টেশন রয়েছে ২৭৭টি। শিল্প কারখানাগুলোয় রয়েছে ৪ হাজার ৫৫৭টি সংযোগ। এছাড়াও ১ হাজার ৪৩টি ক্যাপটিভ (ক্ষুদ্র) বিদ্যুৎকেন্দ্র, ৪টি সার কারখানা ও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে তারা গ্যাস সরবরাহ করে। বিপুল পরিমাণ এই গ্রাহকদের জন্য তাদের দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ১৮০ কোটি ঘনফুট। এর বিপরীতে দৈনিক বিতরণ করছে ১৫৪ কোটি ঘনফুট গ্যাস।রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম সুমন যায়যায়দিনকে জানান, ওই এলাকায় সকাল ৮টার দিকে গ্যাস চলে যায়, আর আসে ২টার দিকে। এরপর চাপ কিছুটা বাড়লেই সারাদিনের রান্না সারতে সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়েন। ফলে অল্প সময় পরই আবারো গ্যাসের চাপ কমে যায়। এ অবস্থায় ওই এলাকার বাসিন্দাদের কেউ কেউ গভীর রাতে উঠে রান্নার কাজ সারলেও নগরীর অধিকাংশ এলাকার বাসিন্দাদের গ্যাস সঙ্কটের নিত্য ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তিনি বলেন, রমজানের কারণে এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। অনেকে ঠিক মতো ইফতার ও সেহরি রান্না করতে পারছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে মানুষকে না খেয়ে থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।একই অভিযোগ হাতিরপুল, বকশীবাজার, লালবাগ, চকবাজার, মগবাজার, উলন রোড, রামপুরা, চৌধুরীপাড়া, বনশ্রী, খিলগাঁও, তালতলা, গোড়ান, মোহাম্মদপুর, সাতমসজিদ রোড, শেখেরটেক, বেড়িবাঁধসহ জিগাতলা, সিপাইবাগ, ধানম-ি, মেরাদিয়া, নয়াটোলা, জুরাইন, হাজারীবাগ, বাড্ডা, কুড়িল, জোয়ার সাহারা, উত্তরা, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, শনির আখড়া, মুগদা, মান্ডা, মানিকনগর, ধলপুর, শাহজাহানপুর, বাসাবো, বসুন্ধরা, মিরপুর, দারুস সালাম, আসাদগেট, কল্যাণপুর, শ্যামলী, আদাবর, লালমাটিয়া, কলেজগেট, আসাদগেট, আগারগাঁও, শেওড়াপাড়া, পীরের বাগ, কাজীপাড়া, কচুক্ষেত, আশুলিয়া, ধানম-ি ও কেরানীগঞ্জের বাসিন্দাদেরও।স্থানীয়রা জানান, তাদের এলাকায় গ্যাস মাঝেমধ্যে আসে। গ্যাস না থাকায় সময়মতো রান্নাবান্না করতে পারছেন না তারা। গ্যাস সঙ্কটের কারণে দৈনন্দিন রান্নাবান্না দূরের কথা, এখন শুধু সেহরি ও ইফতারি প্রস্তুত করা যাচ্ছে না। আবার যেসব এলাকায় সিএনজি পাম্প বেশি সেসব এলাকার গ্রাহকদের দুর্ভোগও অন্যদের চেয়ে বেশি। ইফতারির সময় গ্যাস না থাকায় রোজদাররা একদিকে যেমন কষ্টের মধ্যে আছেন তেমনি বাইরে থেকে ইফতার কেনায় তাদের বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে।তারা জানান, গ্যাস সঙ্কট এতটাই তীব্র হয়ে উঠেছে বিকল্প উপায়ে রান্নাসহ জরুরি কাজ সারতে হচ্ছে। গ্যাস না পেয়ে অনেকে সিলিন্ডার বা কেরোসিনের চুলাও ব্যবহার করছেন। রাত ১০টার পর গ্যাস আসে, আবার সকাল ৭টার আগেই চলে যায়। আর সারাদিন গ্যাসের দেখা পাওয়া যায় না। অনেক সময় ইফতারের রান্না করতে হয় ভোররাতে। দীর্ঘদিন গ্যাস না পেয়ে অনেক এলাকায় বাসা ছেড়ে দিচ্ছে ভাড়াটিয়ারা।তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তারা বলছেন, বিদ্যুৎ-ব্যবস্থা উন্নত রাখার জন্য পিডিবি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে বেশি হারে গ্যাস দিতে হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে আবাসিক গ্যাস সরবরাহে। এমনকি সিএনজি স্টেশন ছয় ঘণ্টা বন্ধ রেখেও পরিস্থিতি উন্নত করা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৪৯:১৩ ৫৭৯ বার পঠিত