প্রাথমিকে বেতন বাড়লো আর মাধ্যমিকে কমলো এই লজ্জ্বা কার?

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » প্রাথমিকে বেতন বাড়লো আর মাধ্যমিকে কমলো এই লজ্জ্বা কার?
রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২০



---

 

বড় আশা করে শিক্ষকতার চাকরি করতে এসেছিলাম। বড় স্বপ্ন নিয়ে কাজ করা শুরুও করেছিলাম।কিন্তু সেই উদ্ধিপনাটাকে ঘুণে ধরে ফেলেছে একটি অবাক হওয়ার মত ঘটনায়।আর সেটি হলো ৪% কর্তন।একটা স্বাধীন দেশের শিক্ষকের বেতন শিক্ষকের অনুমতি ব্যতিত কিভাবে কাটতে পারে তা আজও আমার বোধগম্য নয়।চাকরির শুরু থেকেই লক্ষ করলাম মন্ত্রনালয় থেকে একের পর এক পরিপত্রের চাপে শিক্ষকবৃন্দের ওষ্ঠাগত প্রাণ।তবুও শিক্ষকরা সব কিছু সহ্য করে নিচ্ছিল অনেকটা পেটে খেলে পিঠে সয় অবস্থার মতো ভেবে।কিন্তু ৪% কর্তনের ফলে সেই অবস্থাটাও আর থাকলোনা।মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী মহোদয়া,হে আপনাকেই বলছি,একটা নির্দিষ্ট সেক্টরের মন্ত্রী কি ঐ পরিবারের সদস্য নয়? শিক্ষকদের বেতন কেটেছে আপনার কি একটুও মনে আছড় লাগেনি? নিজের বেতন কাটা যায়নি বলেই বুঝি অনুভব করা যাচ্ছেনা?আপনি আমাদের সর্বতো অভিভাবক,মা জননী,আমাদের দুঃখের ভাগিদার আপনিও হবেন এটাই আমাদের বিশ্বাস।যখন খবরে একজন শিক্ষকের মেয়ে শিক্ষা মন্ত্রী হচ্ছে দেখলাম, ভেবে আনন্দে বুকটা ভরে গিয়েছিল।কিন্তু আজ আর সেই আনন্দটা খুঁজে পাইনা।অবসর ভাতার কথা বলে টাকাটা কেটে নিলো ভালো কথা বাড়ি ভাড়ার নাম করেও তো আপনি কর্তনকৃত টাকাটা ফেরতের ব্যবস্থা করতে পারতেন? ১০০০ টাকায় কোথায় বাড়ি ভাড়া পাওয়া যায় কেউ জানা থাকলে জানাবেন কি? মানলাম টাকা ফেরানোটা আপনার অসাধ্য।শিক্ষার উন্নয়নে জাহাজ পরিকল্পনা নিয়ে আপনি দৈনিক মিডিয়ায় বয়ান দিয়ে যাচ্ছেন। এই শোনা যায় শিক্ষক বিদেশ থেকে আনবেন ট্রেনিংএর জন্য,এই শোনা যায় পাঠ্যবই বদলাবেন,কারিগরি ঢোকাবেন,ছাত্রদের বেতন দেবেন,শিক্ষকদের উচ্চতর ট্রেনিং দেবেন,টাইম মেন্টেইনিং হাজিরা মেশিন আনবেন আরো কতোকি।এই কাজগুলো নিংসন্দহে শিক্ষার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।তবে এই কাজগুলো বাস্তবায়ন কারা করবে একবার ভেবেছেন কি? নিশ্চই শিক্ষকরা? আর তাদের যে গাদা গাদা কাজ বাড়িয়ে যাচ্ছেন বিনিময়ে তাদের বেতন বৃদ্ধির প্রয়োজনট অনুভব করছেন কি? নাকি টাকা কাটাটা ফরজ কাজেরই অংশ হয়ে গিয়েছিল?বলবেন সচিবরা কেটেছে আপনি নন,তাই বলে আপনি একটু হাই হুতাশও করতে পারলেননা? নাকি নতুন ধারনা নিতে হবে যে  সচিবদের কাছে মন্ত্রীরা অসহায়? গাছের গুড়ি কেটে পাতায় পানি দিচ্ছেন গাছ সতেজের জন্য, একজন ক্ষুদ্র লেখক হিসেবে বলে গেলাম আপনার হাজারো পরিকল্পনা কতটু বাস্তবায়িত করতে পারবেন সময় বলে দেবে।

 

এখনো শিক্ষকরা মুজিব বর্ষ উপলক্ষে আপনি একটা বিশাল কিছু বর্ষণ করবেন বলে তীর্থের কাকের মত তাকিয়ে আছে।কিন্তু আমি নিশ্চিত আপনি একজন শিক্ষকের মেয়ে বলেই মুজিব বর্ষে শিক্ষকদের কল্যানে কিছুই করবেননা আপাতত আমার কাছে এটাই মনে হচ্ছে।এর অনেক কারন রয়েছে যা আজ আর বলতে পারছিনা।সময়ে সব বলবো।শিক্ষক হয়ে আজ আমরা যেনো নেহায়েত প্রাণীতে পরিনত হয়েছি।আমাদের না আছে বল,না আছে দল,না আছে বলার ভাষা তাই চারিদিক থেকে দেখছি কেবল তামাসা,দিন দিন পাচ্ছি আরো হতাশা,তবু বলে গেলাম এই পথে হবোনা কভু নিরাশা। ক্ষমা করবেন মাননীয় মন্ত্রী,“পেটের ক্ষুধা আইন বুঝেনা,পেটের ক্ষুধা বুঝে কেবল অন্য আর অন্য সম অন্য কিছু।” তাই মনের কষ্টটা চাপা রাখতে পারলামনা।দেশ সেরা শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে ১২৫০০ টাকা মাসে চাকরি করছি।জীবনে এর চেয়ে সুখ আর কি পেতে পারি বলেন? মাস শেষে যখন দ্বিগুন ধার করে চলতে হয় তখন সুশিক্ষা আর  “না” শিক্ষার মাঝে তফাত বুঝার সময়টুকুও খুঁজে পাওয়া যায়না।আজ যখন শুনলাম প্রাথমিকের বেতন বেড়েছে তখন এমপিও শিক্ষকদের মুখে মুখে একটাই কথা “প্রাথমিকের বেতন বেড়েছে আর মাধ্যমিকের বেতন কমেছে এই লজ্জ্বা কার? প্লিজ মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়া,আপনি শেষ বেলা হলেও ঐ কোমলমতি শিক্ষকদের আপনার একটু দয়ার অংশীদার যেনো বানাতে পারেন আজ এইটুকুই প্রার্থনা করি।জাতীয়করণ, জাতীয়করণ জপতে জপতে মুখে ফেনা তুলে ফেললেও ঐ শিক্ষকরা অনেকেই জানেনা জাতীয়করণের আশ্বাস ভাওতাবাজি ছাড়া কিছুই নয়।অতএব আপনার কাছ থেকে এই মুজিব বর্ষে পর্বতের মুষিক প্রসবের মতো ২০% বাড়ি ভাড়াটাও যদি পায় তাহলেই ঐ শিক্ষকগণ আজীবন আপনাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ রাখবে বলে আমিরমনে করি।নতুবা সময়ই বলে দেবে আপনি কি হিসেবে শিক্ষকদের মনে স্থান পেয়েছেন তথা পাবেন।

 

সবশেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছেও আকুল আবেদন,হে মাননীয় প্রধানন্ত্রী,আপনাকে পেয়ে আমরা ধন্য বেসরকারি শিক্ষক সমাজ।বেসরকারি শিক্ষকদের আজকের অবস্থানে উন্নীত করেছেন আপনিই।তবু ও যেনো সময় এই সমাজটা আজো অবহেলিত সবার কাছেই।তাই আসন্ন মুজিববর্ষে অনেক স্বপ্ন নিয়ে ওরা তাকিয়ে রয়েছে।আমাদের জাতির পিতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নও ছিল শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ। জাতীয়করণ করতে পারলে আপনিই জবেন এই দেশের শিক্ষা বিপ্লবের মাতা।আর জাতীয়করন যদি পারা না-ই যায় তাহলে অন্তত বাড়িভাড়াটুকু হলে বৃদ্ধি করবেন।আশাকরি আমাদের  খালি হাতে ফেরাবেননা এই আশাটুকু রেখেই আজকের লেখাটি শেষ করছি।

 

লেখক

জীবন কৃষ্ণ সরকার

একজন বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক,

সভাপতি, হাওর সাহিত্য উন্নয়ন সংস্থা (হাসুস) বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ সময়: ১৯:৪৮:০৯   ৯৪১ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আজকের সকল পত্রিকা’র আরও খবর


নেতাকর্মীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন হাজী মোহাম্মদ হারিজ খান
সেরে উঠলেন ক্যানসার রোগীরা
আশুলিয়ায় খুশবু রেস্তোরাঁ উদ্বোধন
ধর্মপাশায় ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে শিক্ষকদের কর্মসূচী
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা ও কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে কৃষি পণ্য সরবরাহ
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা ও কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে কৃষি পণ্য সরবরাহ
বিশ্বব্যাপী প্রবাসীদের প্রতি দায়িত্ব পালনে কূটনীতিকদের আন্তরিক হতে হবে: শেখ হাসিনা
শেখ রাসেলের ৫৮ তম জন্ম বার্ষিকী ও জাতীয় ইদুর নিধন
শেখ রাসেলের ৫৮ তম জন্ম বার্ষিকী ও জাতীয় ইদুর নিধন

আর্কাইভ