বঙ্গ-নিউজঃ নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত দেশের সর্ববৃহৎ প্রকল্প পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো বছর শেষ হওয়ার আগেই ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে রূপ দিতে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত খুঁটির ওপর বসানো হয়েছে ১২টি স্প্যান। ফলে মূল সেতুর অবকাঠামো দৈর্ঘ্যে ২ হাজার ৮৫০ মিটার দৃশ্যমান হয়েছে। আর ৩১ ডিসেম্বর ২০তম স্প্যানটি মাওয়া প্রান্তের ১৮ ও ১৯ নম্বর খুঁটির ওপর স্থাপন করা হলে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো ৩ হাজার মিটার বা তিন কিলোমিটার দৃশ্যমান হবে।
সেতুর দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানান, ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর জাজিরা প্রান্তের ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটির ওপর প্রথম স্প্যান, ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি ৩৮ ও ৩৯ নম্বর খুঁটির ওপর দ্বিতীয় স্প্যান, ১১ মার্চ ৩৯ ও ৪০ নম্বর খুঁটির ওপর তৃতীয় স্প্যান এবং ১৩ মে ৪০ ও ৪১ নম্বর খুঁটির ওপর ৪র্থ স্প্যান, একই বছরের ২৯ জুন ৫ম স্প্যান বসানোর পর জাজিরা প্রান্তে মূল সেতুর অবকাঠামো দৃশ্যমান হয় ৭৫০ মিটার। অপরদিকে ২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর মাওয়া প্রান্তে দু’টি খুঁটির ওপর ৬ষ্ঠ স্প্যান বসানোর পর উভয় প্রান্ত মিলিয়ে মূল সেতুর অবয়ব রূপ নেয় ৯০০ মিটারে।
আর ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি জাজিরা প্রান্তের ৩৬ ও ৩৭ নম্বর খুঁটির ওপর ৭ম স্প্যান স্থাপনে উভয় প্রান্ত মিলিয়ে দৃশ্যমান হয় এক হাজার ৫০ মিটার। ২০ ফেব্রুয়ারি জাজিরা প্রান্তে ৩৫ ও ৩৬ নম্বর খুঁটির ওপর বসানো হয় ‘৬-ই’ নম্বর ৮ম স্প্যান। মূল সেতুর অবকাঠামো দৃশ্যমান হয় এক হাজার ২’শ মিটার। ২১ মার্চ একই প্রান্তের ৩৪ ও ৩৫ নম্বর খুঁটির উপর ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ‘৬-ডি’ নম্বরের ৯ম স্প্যান বসানোর পর অবকাঠামো আরও এক ধাপ বৃদ্ধি পেয়ে দৈর্ঘ্যে রূপ নেয় এক হাজার ৩৫০ মিটারে। ১০ এপ্রিল মাওয়া প্রান্তে ১৩ ও ১৪ নম্বর খুঁটির ওপর বসানো হয় ‘৩এ’ নম্বরের পদ্মা সেতুর ১০ম স্প্যান। সেতুর মূল অবকাঠামো দৃশ্যমান হয়ে দেড় কিলোমিটারে। ২৩ এপ্রিল জাজিরা প্রান্তে ৩৩ ও ৩৪ নম্বর খুঁটির উপর বসানো হয় ১১ তম স্প্যান। এ স্প্যানটি বসানোর পর পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো দৃশ্য হল ১ হাজার ৬৫০ মিটার। ৬ মে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের মাঝামাঝি স্থানে পদ্মা সেতুর ২০ ও ২১ নম্বর খুঁটির ওপর বসানো হয় ১২তম স্প্যান। ২৫ মে মাওয়া প্রান্তের ১৪ ও ১৫ নম্বর খুঁটির ওপর বসানো হয় ১৩তম স্প্যান। ফলে পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো দৃশ্যমান হয়ে উঠে এক হাজার ৯৫০ মিটার।
পরে ১৪ অক্টোবর জাজিরা প্রান্তের ২৮ ও ২৯ নম্বর খুঁটির ওপর স্থাপন করা হয় ১৪ ম স্প্যান এবং ২২ অক্টোবর জাজিরা প্রান্তের ২৮ ও ২৯ নম্বর খুঁটির ওপর ১৫তম স্প্যান বসানো হয়। আর এ স্প্যান বসানোর ২৮ দিনের মাথায় মাওয়া প্রান্তের ১৬ ও ১৭ নম্বর খুঁটির ওপর ১৬ তম স্প্যান বসানোর পর মূল সেতুর অবকাঠামো দৃশ্যমান হয়ে ওঠে ২ হাজার ৪০০ মিটারে। ২৬ নভেম্বর জাজিরা প্রান্তের ২২ ও ২৩ নম্বর খুুঁটির ওপর ‘৪ডি’ নম্বরের ১৭ তম স্প্যান বসানোর পর পদ্মার সেতুর মূল অবকাঠামো ২৫৫০ মিটার বা আড়াই কিলোমিটার দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। ১১ ডিসেম্বর জাজিরা প্রান্তের ১৭ ও ১৮ নম্বর খুঁটির ওপর বুধবার বসানো হয় পদ্মা সেতুর ১৮ তম স্প্যান। ১৮ ডিসেম্বর ১৯ তম স্প্যান বসানো হয় ২১ ও ২২ নম্বর খুঁটির ওপর। মূল সেতুর অবকাঠামো দৈর্ঘ্যে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে ২ হাজার ৮’শ ৫০ মিটারে। আর বছরের শেষ দিন আজ ৩১ ডিসেম্বর মাওয়া প্রান্তের ১৮ ও ১৯ নম্বর খুঁটির ওপর ধূসর রঙের ‘৩-এফ’ নম্বরের ২০ তম স্প্যান স্থাপনের লক্ষ্য রয়েছে। আর স্প্যানটি স্থাপনের পরই পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামোর দৃশ্যমান হয়ে উঠবে ৩ হাজার মিটার।
উল্লেখ্য, ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দ্বিতল পদ্মা সেতুতে সব মিলিয়ে ৪২টি খুঁটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে মাওয়া প্রান্তে ২১টি ও জাজিরা প্রান্তে ২১টি। আর ৪২টি খুঁটির ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। এর মধ্যে ৪০টি খুঁটি থাকবে পানিতে আর ডাঙায় ২টি খুঁটি। ডাঙায় থাকা দু’টি খুঁটি সংযোগ সড়কের সঙ্গে মূল সেতুকে যুক্ত করবে। ছয়টি মডিউলে বিভক্ত থাকবে সেতু। মাওয়া প্রান্তে এক হাজার ৪৭৮ মিটার ভায়াডাক্ট (ঝুলন্ত পথ) থাকবে। জাজিরা প্রান্তে থাকবে এক হাজার ৬৭০ মিটার। বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নিজস্ব অর্থায়নে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে দ্বিতল পদ্মা সেতুর পুরোটাই নির্মিত হবে স্টিল ও কংক্রিট স্টাকচারে। সেতুর ওপরে থাকবে কংক্রিটিং ঢালাইয়ের চাল লেনের মহাসড়ক আর তার নিচ দিয়ে যাবে রেললাইন।
বাংলাদেশ সময়: ২১:২৯:৫৫ ৬৪৮ বার পঠিত # #পদ্মা সেতু #স্প্যান