বঙ্গ-নিউজঃ শেষ মুহূর্তের আলোচনায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন ঢাকা-১০ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। তারই ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে নিশ্চিত করেছেন দলের নীতিনির্ধারক একাধিক নেতা।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন ঢাকা দক্ষিণের বর্তমান মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। সেখান থেকে বের হয়ে সমকালকে তিনি জানিয়েছিলেন, এবারও তাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন।
তবে গতকাল শুক্রবার সর্বশেষ পাওয়া খবরের বরাত দিয়ে দলের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসই পাচ্ছেন ঢাকা দক্ষিণে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন। দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক সদস্য সমকালকে আরও বলেছেন, ঢাকা-১০ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালনে বেশ দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন ইমেজের এই নেতার সঙ্গে এলাকার জনগণের নিবিড় সম্পর্কও রয়েছে। প্রতিনিয়তই তিনি জনগণের সুখ-দুঃখে তাদের সঙ্গে একাত্ম হচ্ছেন। এ ছাড়া আইনজীবীসহ সুশীল সমাজ ও এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যেও বেশ গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তার। এ কারণেই দক্ষিণ সিটির মেয়র পদে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশ উজ্জ্বল। তিনি মনোনয়ন পেলে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদে আওয়ামী লীগ সহজেই জয়ী হতে পারবে বলেও বিশ্বাস দলীয় নীতিনির্ধারকদের।
ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস সমকালকে জানান, এমপি হিসেবে (ঢাকা-১০) একটি আসনে কাজ করতে গিয়ে তিনি দেখেছেন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে জনগণের জন্য কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। কিন্তু একটি আসনে কাজ করায় সামগ্রিক উন্নয়ন করা সম্ভব হচ্ছে না, যার কারণে জনগণের ফিডব্যাকও কম। তাই দলের প্রতি নিবেদিত থেকে তিনি এলাকার সার্বিক উন্নয়নের জন্য মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন। দল তাকে মনোনয়ন দিয়ে সেই সুযোগ তৈরি করে দেবেন, এ ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।
এদিকে, দলীয় মনোনয়ন পেলে এবং জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে পারলে ঢাকা দক্ষিণ সিটির উন্নয়নে নিজের পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরতে শুরু করেছেন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। বেসরকারি টিভি চ্যানেল টোয়েন্টিফোরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক আমাদের জন্য একটি উদাহরণ। দলীয় মনোনয়নে নির্বাচিত হলে আনিসুল হকের সফলতার মডেল অনুসরণ করবেন তিনি।
তিনি বলেন, এখানে প্রথমত তার কাজ হবে, সিটি করপোরেশন নাগরিকদের যে সেবাগুলো দিতে বাধ্য, সেগুলো নিশ্চিত করা। এতদিন পরেও আমরা নূ্যনতম নাগরিক সেবাগুলোও মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পারছি না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই আমাদের রাজনীতির মূল প্রেরণা। প্রধানমন্ত্রী দেশের উন্নয়নে এত কিছু করছেন। তিনি চাচ্ছেন ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত বাংলাদেশ হবে। সেই উন্নত বাংলাদেশের রাজধানী কেমন হওয়া উচিত- সেটাই তার (তাপস) পরিকল্পনা হবে। তিনি সুযোগ পেলে এবং মেয়র পদে নির্বাচিত হলে তার প্রথম কাজই হবে সেবাগুলো নিশ্চিত করা। আজকে ডেঙ্গুতে কেন মানুষ মারা যাবে? মশার এমন উপদ্রব কেন হবে? ডেঙ্গু কেন একটা এপিডেমিক হিসেবে দেখা দেবে? এই জায়গাগুলো আগে নিশ্চিত করাই হবে তার কাজ।
পুরান ঢাকার ঐতিহ্যের সঙ্গে মিল রেখে ঢাকা দক্ষিণ সিটির উন্নয়ন ও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেবেন জানিয়ে তাপস বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মূলত ঐতিহ্যবাহী পুরান ঢাকাকে নিয়েই গঠিত। নির্বাচিত হতে পারলে সেই পুরান ঢাকাকে তার নিজস্ব আদলে ও তার ঐতিহ্যবাহী অপরূপ রূপে সাজিয়ে তোলা হবে তার দ্বিতীয় কাজ।
তিনি বলেন, ‘আমরা বাইরের দেশগুলোতে গিয়ে দেখি, সেখানে পুরোনো শহরগুলো যে আছে- তাদের কিন্তু আলাদা একটা রূপ আছে। একটা সৌন্দর্য আছে। আমাদের এখানে কেমন যেন অবজ্ঞা ও অবহেলা! আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রী এমনিতে ঢাকা শহরের অনেক উন্নতি করছেন, মেট্রোরেল হচ্ছে, অনেক আধুনিকায়ন হচ্ছে। তার সঙ্গে ঢাকা শহরের সেই অবয়বটা এবং সেই সুন্দর ও পরিবেশটাও নিশ্চিত করা দরকার। সেগুলো নিশ্চিত করতে পারলে বাইরে থেকে বিদেশিরা কিংবা পর্যটকরা এখানে এলে তারাও সেগুলো দেখে অবশ্যই আনন্দবোধ করবেন, উপভোগ করবেন। এই সুযোগগুলো তৈরি করাও আমার কাজ হবে।’
ঢাকা-১০ আসনের এই সংসদ সদস্য বলেন, নির্বাচিত হতে পারলে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের জন্য পর্যাপ্ত খেলার পরিবেশ বজায় রাখার চেষ্টাও করবেন তিনি। মানুষের নূ্যনতম চাহিদা কিন্তু খুব বেশি নয়। নাগরিক সুবিধাগুলো নিশ্চিত করতে পারলেই মানুষ খুশি হবে বলে তিনি মনে করেন।
এ অবস্থায় আজ শনিবার ঢাকার দুই সিটিতে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত হচ্ছে। এদিন সন্ধ্যা ৬টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকেই নির্ধারণ হবে, মেয়র পদে কোন দু’জন প্রার্থী আগামী ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে লড়বেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে ঢাকার দুই সিটির ১৭২ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল থাকায় বেশ তৎপর রয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, মুজিব বাহিনীর অধিনায়ক ও যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। তার পক্ষে দলীয় মনোনয়ন ফরম গতকাল শুক্রবার জমা দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে। বিকেল পৌনে ৫টায় ব্যারিস্টার তাপসের পক্ষে দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দেন আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদ্যবিদায়ী সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মোর্শেদ হোসেন কামাল, ধানমন্ডি থানা সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ বাবলা, কলাবাগান থানা সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবুল ও কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক অ্যাডভোকেট নূরে আলম উজ্জ্বল।
ব্যারিস্টার তাপস এর আগে বিকেল থেকে তার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী ছাড়াও জনগণের সঙ্গে মেয়র পদের নির্বাচন বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করেন। কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থীও তার সঙ্গে দেখা করতে এলে তাদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন তিনি।
উত্তরে আতিকুল ইসলামের প্রার্থিতা প্রায় নিশ্চিত :ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম আবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাচ্ছেন- এটা এক রকম নিশ্চিত হয়ে গেছে। এই পদে আগে আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রমের নামও আলোচনায় রয়েছে। তবে এ দুই নেতার কেউই দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি। বর্তমান মেয়র আতিকুলের প্রতিই দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘গ্রিন সিগন্যাল’ রয়েছে বলেও দলীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। আতিকুল ইসলাম আগামী নির্বাচনের জন্য এরই মধ্যে প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছেন।
দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা :আগেই দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহকারী ঢাকা উত্তরের বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম গতকাল দলীয় সভাপতির ধানমন্ডি কার্যালয়ে এসে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। উত্তরের মেয়র পদের অন্য প্রার্থীরাও মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন।
অন্যদিকে, দক্ষিণের মেয়র পদের জন্য ব্যারিস্টার তাপস ছাড়াও বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন, ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান এমএ রশিদসহ সব মনোনয়নপ্রত্যাশীর মনোনয়ন ফরমও গতকাল জমা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, গতকাল ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদে নতুন করে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন দলের নবনির্বাচিত আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাজী নজিবউল্লাহ হিরু। তার পক্ষে মনোনয়ন ফরম তোলেন তার ব্যক্তিগত সহকারী অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক। পরে এই মনোনয়ন ফরম জমাও দেওয়া হয়।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন লাভের আশায় মনোনয়ন ফরম বিতরণ ও জমাদান কার্যক্রমের শেষ দিন গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত মোট ২০ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলামসহ উত্তরের মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়েছেন ১২ জন। আর দক্ষিণের মেয়র পদে বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন, দুই এমপি ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ও হাজী মোহাম্মদ সেলিম এবং আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাজী নজিবউল্লাহ হিরুসহ মোট আটজন মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন। এ ছাড়া উত্তর ও দক্ষিণের সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিলিয়ে ১৭২টি কাউন্সিলর পদের জন্য মোট ১২৩৪ প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন, যাদের বেশিরভাগ ফরম জমাও দিয়েছেন।
এদিকে আজ বিকেলে মনোনয়নপ্রত্যাশী সবাইকে গণভবনে চা পানের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বিকেল ৩টা থেকে গণভবনের সবুজ চত্বরে তাদের সৌজন্য সাক্ষাৎ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর সন্ধ্যা ৬টায় গণভবনেই দলের স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১:৩৬:৩০ ৫৯৬ বার পঠিত #আওয়ামী লীগে #ঢাকা দক্ষিণ সিটি #ফজলে নূর তাপস