বঙ্গ-নিউজঃ নতুন বছরের শুরুতেই পুলিশ সপ্তাহের আয়োজনে সেবা, সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য চারটি ক্যাটাগরিতে পুলিশ সদস্যদের পদক দেওয়া হয়। মর্যাদাপূর্ণ এই পদকের সংখ্যা গত দু’বছর ধরে হুট করে অব্যাহত হারে বাড়ানোয় সমালোচনাও কম হয়নি। অভিযোগ ওঠে নির্বাচনে ‘ বিশেষ ভূমিকার’কারণে ২০১৯ সালে ৩৪৯ জন পুলিশ সদস্যকে বিপিএম-পিপিএম পদক দেওয়া হয়েছিল। তবে এ বছর সে ধারা থেকে বের হয়ে স্বাভাবিক পথেই হাঁটছে পুলিশ সদর দফতর। এ কারণে এবার মাত্র ১২০ জন পুলিশ কর্মকর্তা এ পুরস্কার পেতে যাচ্ছেন। সংস্থাটির নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, এবার যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করে পদক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর থেকে বৃহস্পতিবার ১২০ জনের তালিকা পাঠানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। আগামী ৫ থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিতব্য পুলিশ সপ্তাহ- ২০২০ এই পদক দেওয়া হবে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
পদক নিয়ে পুলিশ সদর দফতর সংশ্লিষ্ট কেউ সরাসরি মন্তব্য করতে রাজি হননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, অতিরিক্ত আইজিপি মঈনুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের পদক কমিটি তালিকা চূড়ান্ত করার কাজ করছে। গেজেট প্রকাশ হওয়ার আগ পর্যন্ত চূড়ান্ত করে কিছু বলা যাবে না।
পুলিশ সদর দফতর ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বছর জুড়ে ভালো কাজ, গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণ ও সাহসকিতাপূর্ণ কাজের জন্য চারটি ক্যাটাগরি বাংলাদেশ পুলিশ পদক- বিপিএম সাহসিকতা ও সেবা এবং প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক- পিপিএম সাহসিকতা ও সেবা পদক দেওয়া হয়। গত বছর রেকর্ড সংখ্যক এই পুরস্কার দেওয়া হয়। বিশেষ করে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে পুলিশ কর্মকর্তাদের ভূমিকার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল। এ কারণেই একযোগে দেশের ৬৪ জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) ও রেঞ্জ ডিআইজি ও মেট্রোপলিটন এলাকার কমিশনাররা সবাই পদক পান।
সূত্রটি আরও জানায়, চলতি বছর পদক দেওয়ার ক্ষেত্রে দু-একটি বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া গত বছর যারা এই পদক পেয়েছেন এবার তাদের তালিকার বাইরে রাখা হয়েছে। এছাড়া গত বছর রেকর্ড সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে পদক দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হওয়ার কারণে এবার এই সংখ্যা এক শ’র মধ্যে সীমিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে পদক আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে ১২০ জনের নামের তালিকা চূড়ান্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আগামী সপ্তাহে এ সংক্রান্ত গেজেট আকারে প্রকাশিত হবে।
২০১৮ সালে সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য ১৮২ জনকে বিপিএম- পিপিএম পদক দেয়া হয়েছিল। এর আগে যথাক্রমে ২০১৭ সালে ১৩২, ২০১৬ সালে ১২২, ২০১৫ সালে ৮৬ ও ২০১৪ সালে ১০৫ জন কর্মকর্তা বিপিএম- পিপিএম পদক পান। তবে জাতীয় নির্বাচনের পর পর ২০১৯ সালে সেটি এক লাফে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল। খোদ পুলিশ কর্মকর্তারা অনেকেই বলেছেন, গত বছর পদকের সংখ্যা অতিরিক্ত মাত্রায় বেশি এবং গণহারে হওয়ার কারণে এটি গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছিল। আর একই বছরে তুলনামূলক যোগ্যতা বেশি থাকার পরও এত পদকের মধ্যেও নিজের নাম খুঁজে না পয়ে ক্ষুব্ধও ছিলেন অনেক পুলিশ কর্মকর্তা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এবারের পদকপ্রাপ্তদের মধ্যে অন্যান্যবারের মতো বৃহৎ ইউনিট হিসেবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদস্যরা সর্বাধিক প্রায় ৫০টি পদক পেতে যাচ্ছেন। এর মধ্যে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখার কারণে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের আনুমানিক ২০ জন, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ১০ সদস্য এবং বাকি প্রায় ২০ জন ডিএমপির সদর দফতর ও ক্রাইম জোনের সদস্য বলে জানা গেছে। বাকি ৭০ টি পদকের মধ্যে পুলিশের অন্যান্য দুই বড় ইউনিট র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান- র্যাব, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন- পিবিআই, অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডিসহ অন্যান্য ইউনিটের সদস্যরা পেতে যাচ্ছেন। তবে অধিকাংশ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা গত বছর পদক পাওয়ার কারণে দু-একজন বাদে তাদের এবার পদক তালিকায় বাদ রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছর বিপিএম সাহসকিতার জন্য এককালীন এক লাখ টাকা ও প্রতি মাসে বেতনের সঙ্গে দেড় হাজার টাকা, বিপিএম সেবার জন্য এককালীন ৭৫ হাজার টাকা ও প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। এছাড়া পিপিএম সাহসিকতার জন্য এককালীন ৭৫ হাজার টাকা ও প্রতিমাসে দেড় হাজার টাকা এবং পিপিএম সেবার জন্য এককালীন ৫০ হাজার টাকা ও প্রতিমাসে এক হাজার টাকা করে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ৯:৫০:১৩ ৬৯৬ বার পঠিত # #পুলিশ #পুলিশ সপ্তাহ