বঙ্গ-নিউজ: বহুল আলোচিত নাগরিকত্ব বিল তুমুল বিতর্কের মধ্যে ভারতের লোকসভায় পাস হয়েছে।
এই আইন সংশোধনের ফলে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে শরণার্থী হিসেবে যাওয়া অমুসলিমদের ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার ছাড়পত্র পাওয়ার পর নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সোমবার লোকসভায় উঠলে তা নিয়ে প্রবল আপত্তি জানান মুসলমান পার্লামেন্ট সদস্যরা।
শেষে ভোটাভুটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে বিলটি পাস হয় বলে ভারতের গণমাধ্যম জানিয়েছে। বিলটির পক্ষে ভোট পড়ে ৩১১টি, বিপক্ষে ভোট দেন ৮০ জন।
১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধনে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে গিয়ে ভারতে শরণার্থী হওয়া হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ ও পার্সি সম্প্রদায়ের শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা রয়েছে বিলে।
১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে বলা ছিল, অন্তত ১১ বছর ভারতে থাকলে তবেই কোনো ব্যক্তিকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। নতুন বিলে ওই সময় কমিয়ে পাঁচ বছর করা হয়েছে। তবে তাতে বাইরে থেকে আসা মুসলিমদের কথা বলা হয়নি।
এতেই আপত্তি তুলছেন বিরোধীরা। কেন্দ্রীয় সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে বেছে বেছে অমুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের নাগরিকত্ব দিচ্ছে বলে অভিযোগ তোলে তারা।
অল ইন্ডিয়া মজলিসে ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের নেতা আসাদুদ্দিন ওয়াইসি বিলের উপর আলোচনায় বলেন, এর মধ্য দিয়ে ভারতের জনগণের মধ্যে বিভক্তি আনা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এই বিল ভারতের মুসলমানদের রাষ্ট্রহীন করার একটি চক্রান্তই শুধু নয়, এটা জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও বড় হুমকি হিসেবে কাজ করবে।
বক্তৃতার এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ ওয়াইসি বিলের একটি কপি টুকরা টুকরা করে ছিঁড়ে ফেলেন।
আসামের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেস নেতা তরুণ গগৈ বলেন, এটা তার রাজ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দেখা দেবে। কারণ তার রাজ্যের পাশেই রয়েছে বাংলাদেশ।
সংশোধিত আইন আসামের কৃষ্টি ও ঐতিহ্যের পাশাপাশি জনমিতি বদলে দেবে বলে তার আশঙ্কা।
বিরোধীদের বিরোধিতার জবাবে বিল উত্থাপনকারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, মুসলমানদের নাগরিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা পুরোপুরি ভুল। ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব বিলে সংশোধনী করা হয়নি।
কংগ্রেসের সমালোচনা করে বিজেপির এই নেতা বলেন, “আজ এই বিলের প্রয়োজন পড়ল কেন? স্বাধীনতার পর কংগ্রেস ধর্মের নিরিখে দেশভাগ না করলে, আজ এই বিলের প্রয়োজনই ছিল না। আমরা নই, ধর্মের নিরিখে দেশভাগ করেছিল কংগ্রেসই।”
সংশোধিত আইনে তিনটি দেশের শুধু অমুসলিমদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়ার পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে অমিত শাহ বলেন, এর কারণ এই তিন দেশে মুসলমানরা সংখ্যালঘিষ্ঠ নয়। ফলে তাদের ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হতে হয় না।
বিলটি লোকসভায় পাসের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর প্রশংসা করে টুইট করেছেন।
তিনি লিখেছেন, অমিত শাহ বিরোধীদের কথার জবাব যেভাবে যুক্তি দিয়ে দেখিয়েছেন, যেভাবে আইনটি সংশোধনের যৌক্তিকতা তুলে ধরেছেন, তা প্রশংসনীয়।
এ বিল আগে একবার পার্লামেন্টে পেশ করা হলেও আসামসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে সেটি পাস করানো যায়নি।
আইনে পরিণত হতে হলে বিলটি এখন সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার অনুমোদন পেতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ৮:৫১:৪১ ৫৩৫ বার পঠিত #আপত্তির মুখে ভারতের নাগরিকত্ব বিল #ভারতে নাগরিকত্ব বিল #ভারতে পাশ নাগরিকত্ব বিল