বঙ্গ-নিউজ: গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার মধ্য দিয়ে আসামিরা জঙ্গিবাদের ‘উন্মত্ততা, নিষ্ঠুরতা ও নৃশংসতার’ যে ‘জঘন্য বহিঃপ্রকাশ’ ঘটিয়েছে, তাতে তারা কোনো অনুকম্পা বা সহানুভূতি পেতে পারে না বলে পর্যবেক্ষণ এসেছে বিশ্বজুড়ে আলোচিত এ মামলার রায়ে।
ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান বুধবার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
মামলার সাত আসামিকে সন্ত্রাস বিরোধী আইনের ৬(২)(অ) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সিদ্ধান্ত দেন তিনি। অপরাধে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় এক আসামির খালাসের রায় দেন।
রায়ে তিনি বলেন, “এই ক্ষেত্রে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজাই ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে এবং ভাগ্যহত মানুষের স্বজনেরা কিছুটা হলেও শান্তি পাবে।”
২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ সেই জঙ্গি হামলায় নিহত হন ২২ হন, যাদের সতের জনই বিদেশি। ১২ ঘণ্টা পর কমান্ডো অভিযানের মধ্য দিয়ে সেই সঙ্কটের রক্তাক্ত অবসান ঘটে।
হামলায় সরাসরি অংশ নেওয়া পাঁচ তরুণের সবাই সেই সময়ই মারা পড়ে। হামলায় জড়িত আরও অনেকে পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত হন। জীবিত অবস্থায় গ্রেপ্তার আটজনকেই কেবল বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হয়।
গুলশান হামলায় জড়িতদের অপরাধের মাত্রা তুলে ধরে রায়ে বলা হয়, বাংলাদেশে ‘তথাকথিত জিহাদ’ কায়েমের লক্ষ্যে জননিরাপত্তা বিপন্ন করার এবং আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য জেএমবির একাংশ নিয়ে গঠিত নব্য জেএমবির সদস্যরা গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে ‘নারকীয় ও দানবীয়’ সেই হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
“হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার মধ্য দিয়ে জঙ্গিবাদের উন্মত্ততা, নিষ্ঠুরতা ও নৃশংসতার জঘন্য বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। নিরপরাধ দেশি বিদেশি মানুষ যখন রাতের খাবার খেতে হলি আর্টিজান বেকারিতে যায়, তখনিই আকস্মিকভাবে তাদের ওপর নেমে আসে জঙ্গিবাদের ভয়ালরূপ।”
বিচারক বলেন, “জঙ্গি সন্ত্রাসীরা শিশুদের সামনে এ হত্যাকাণ্ড চালায়। মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য জঙ্গিরা নিথর দেহগুলোকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায়। মুহূর্তের মধ্যে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় হলি আর্টিজান বেকারি।”
পর্যবেক্ষণে তিনি বলেন, কলঙ্কজনক ওই হামলার মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের ‘চরিত্র হরণের চেষ্টা’ করা হয়েছে। বাংলাদেশের বিদেশি নাগরিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। এর ফলে শান্তি ও সম্প্রীতির জন্য পরিচিত বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি কিছুটা ক্ষুণ্ন হয়।
“সে জন্য সাজা প্রদানের ক্ষেত্রে আসামিরা কোনো ধরনের অনুকম্পা পেতে পারে না।”
বেলা ১২টায় আদালতে কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর রায় ঘোষণার আগে এ মামলার আইনজীবী, তদন্ত কর্মকর্তাসহ অন্যদের ধন্যবাদ জানান বিচারক মজিবুর রহমান। তারপর মামলার ঘটনাপঞ্জি সংক্ষেপে বর্ণনা করেন।
ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার ‘সর্বোচ্চ চেষ্টা’ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “রায়ের পর আপনারা প্রতিক্রিয়া জানাবেন। কেউ বলবে, আসামিপক্ষে গেলে ন্যায়বিচার হয়েছে। কেউ অন্যপক্ষে গেলে সেটাকে ন্যায়বিচার বলবে।
“কিন্তু ‘আমার পক্ষে গেলেই ন্যায়বিচার’- বিষয়টা আসলে সেটা নয়।”
রায়ে আসামি জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ, আব্দুস সবুর খান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, হাদিসুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপনকে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি অন্য ধারায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেন বিচারক।
দণ্ডিত আসামিদের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন এবং মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অনুমতির জন্য রায় ও মামলার নথি হাই কোর্ট বিভাগে পাঠাতে বলেন।