তোহা,বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃসেই ১৯৮৬ সালের কথা। টেস্টে ফিরে প্রথম বলেই উইকেট পেলেন ইংলিশ অলরাউন্ডার ইয়ান বোথাম। এরপরই কিংবদন্তী এই ক্রিকেটারকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ‘তোমার পাণ্ডুলিপি কার লেখা?’ বোথামের কথা ভুলে যান। এখন আসলে শহীদ খান আফ্রিদিকে ডেকে জিজ্ঞেস করা দরকার—কে লিখে দিয়েছে এই অকল্পনীয় ক্যারিয়ার চিত্রনাট্যের পাণ্ডুলিপি! রবিবার গায়ানায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে যে পারফরম্যান্স করলেন আফ্রিদি; তাতে ইয়ান বোথাম, সৌরভ গাঙ্গুলিকে হটিয়ে ক্রিকেটের সর্বকালোর সেরা ‘কামব্যাক হিরো’ আফ্রিদিকেই মানতে হবে। মার্চ মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের পর বাদ পড়েছিলে দল থেকে; অনেকে সেই সময় আফ্রিদির ক্যারিয়ার এপিটাফও লিখে ফেলেছিলেন; কিন্তু কাল আরেকবার ক্রিকেট বিশ্বকে বুঝিয়ে দিলেন, তিনি ফুরাননি। ব্যাট হাতে সেই ‘বুম বুম’ চেহারা ধারণ করে প্রথমে ৭৬ রান করলেন। এরপর ১২ রান দিয়ে তুলে নিলেন ৭ উইকেট; ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসের দ্বিতীয় সেরা পারফরম্যান্স। একা আফ্রিদির কাছেই গায়ানা স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ হারলো ১২৬ রানের বিশাল ব্যবধানে। আর পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচ জিতে এগিয়ে থাকলো পাকিস্তান। ইউনুস খান, শোয়েব মালিক, কামরান আকমল; গত কয়েকমাসে দলের সিনিয়র খেলোয়াড়দের বাদ পড়ার পর থেকে শহীদ আফ্রিদির ফিরে আসার মৃদু আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। শেষ ছয় ওয়ানডেতে কোন উইকেট না পাওয়া এক বোলিং অলরাউন্ডারকে অনেকটা বাধ্য হয়েই ফিরিয়ে আনে পাকিস্তানী নির্বাচকরা। আর নামটা আফ্রিদি বলেই তাকে নিয়ে জুয়া খেলাটাও ছিল বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। তবে, ওয়ানডের ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ড পারফরম্যান্স আর সাথে দ্বিতীয় সেরা বোলিং ফিগারের পরে সেই জুয়াতে শেষ হাসিটা হাসলেন আফ্রিদিই। টসে হেরে ব্যাটিংয়ে যাবার পর মুহূর্তের মধ্যেই তাসের ঘরের মতো ধ্বসে পড়তে থাকে পাকিস্তানের ব্যাটিং। নাসির জামশেদ, আহমেদ শেহজাদ, মোহাম্মদ হাফিজ, আসাদ শফিক; প্রত্যেকেই দুই অংকে পৌঁছানোর আগেই সাজঘরে ফিরে যান। আফ্রিদি যখন ক্রিজে নামেন, পাঁচ উইকেট হারিয়ে দলীয় স্কোর তখন ৪৭। এই অবস্থা থেকেই জুটি বাঁধেন অধিনায়ক মিসবাহ উল হকের সাথে। তাদের ১২০ রানের জুটিতে লড়াইযোগ্য একটি স্কোরের দিকে এগিয়ে যায় পাকিস্তান। আফ্রিদি ছাড়াও মিসবাহ করেন ৫২ রান। মিসবাহর এই ধীরগতির ইনিংস নয়, আসলে ৫৫ বলে ৬টি চার ও ৫টি ছক্কায় সাজানো আফ্রিদির দানবীয় ইনিংসে ভর করেই মান বাঁচানো স্কোর করল পাকিস্তান। চারটি উইকেট পান ওয়েস্ট ইন্ডিজের জেসন হোল্ডার। ২২৪ রানের সম্বল নিয়ে কোন দলই আসলে নির্ভার হয়ে বোলিং করতে পারে না; কিন্তু পাকিস্তানকে একাই নির্ভার করে দিলেন আফ্রিদি। সাত ওভার বোলিং করলেন; ১২ রান দিলেন, বিনিময়ে সাতটি উইকেট; আর এমন বিষধর স্পিনে দিশেহারা উইন্ডিজ শিবির। ৪১ ওভারে অল আউট হওয়ার আগে মাত্র ৯৮ রান করতে পারলো। দলে সুযোগ পেয়েই এমন অতিমানবীয় পারফরম্যান্সের পরও পা মাটিতেই থাকছে শহীদ আফ্রিদির, ‘আমি অনেক পরিশ্রম করে নিজেকে এই পারফরম্যান্সের জন্য প্রস্তুত করে তুলেছি। এর জন্য আমি অবশ্যই দেশের মানুষকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’ দলে জায়গা ধরে রাখতে মরিয়া আফ্রিদি আরো বলেন, ‘এখন আমাকে দলে জায়গা ধরে রাখতে লড়াই করতে হবে। আর এর পাশাপাশি দলের জন্য কাজে আসতে চাই। সব দিক থেকে ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করছি।’ আফ্রিদির যত কীর্তি … ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে এখন আফ্রিদিই ৭০০০ রান আর ৩৫০ উইকেট পাওয়া একমাত্র অলরাউন্ডার। আর মাত্র একজন খেলোয়াড়ই ৭০০০ রান ও ৩০০ উইকেট পেয়েছেন। তিনি হলেন শ্রীলঙ্কার সনাথ জয়সুরিয়া। ওয়ানডেতে আফ্রিদি মাত্র অষ্টম বোলার হিসেবে ৩৫০ উইকেটধারী। আর দেশের হয়েও তিনি তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট পাওয়া বোলার। ক্যারিয়ারে তিনবার একই ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন আফ্রিদি। ১৪ জনের এই সংক্ষিপ্ত তালিকায় আর কেউই দ্বিতীয়বার এই কীর্তির দেখা পাননি। সাত ওভার বোলিং করে ১২ রান দিয়ে সাত উইকেট পাওয়া আফ্রিদি এখন ওয়ানডে’র ইতিহাসে দ্বিতীয় সেরা বোলিং ফিগারের মালিক। প্রথম স্থানটি দখল করে আছেন শ্রীলঙ্কার চামিন্দা ভাস। ২০০১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে কলম্বোতে ১৯ রান দিয়ে আট উইকেট নিয়েছিলেন এই পেসার।
বাংলাদেশ সময়: ২২:০৯:৫৪ ৩৭৬ বার পঠিত