বঙ্গ-নিউজঃ রাজধানী ঢাকার টিকাটুলির রাজধানী সুপার মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বেশ কিছু দোকান পুড়ে গেছে।
বুধবার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে এ আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তে তা ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের দোকানগুলোয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট সেখানে গিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালায়। একপর্যায়ে সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
অবশ্য পুরোপুরি নেভাতে আরও সময় লেগে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এটি নিছক দুর্ঘটনা নাকি নাশকতার উদ্দেশে কেউ পরিকল্পিতভাবে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে তা নিয়ে গুঞ্জন রয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন ঘটনাস্থলে জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মার্কেটের দোতলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এতে ১৪/১৫টি দোকান পুড়ে গেছে। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্তে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে বিশদ জানা যাবে। নাশকতার কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই বলেও জানান মহাপরিচালক।
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা ও স্থানীয়রা জানান, মার্কেটটির কোনো অংশ একতলা, আবার কোনো অংশে টিনশেড দোতলা করা হয়েছে। ভেতরে দুই সারি দোকানের মাঝে সরু গলি। সেখানে কেউ আটকে পড়েছে কি-না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ঘটনার সময় মার্কেটে লোকজনের উপস্থিতি কম ছিল। টিনশেড হওয়ায় আগুন নেভাতেও বেগ পেতে হয় ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের। মার্কেটে আগুন নেভানোর পর্যাপ্ত সরঞ্জাম ছিল না, পানিও ছিল না। বিশেষ ব্যবস্থায় গাড়িতে করে পানি নিয়ে গিয়ে আগুন নেভানো হয়।
ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা জানান, মার্কেটের দোতলায় বিক্রমপুর ক্লথ স্টোর নামের একটি দোকানে ঝালাইয়ের কাজ চলছিল। সেখানকার আগুনের স্ফুলিঙ্গ পাশের দোকানের ফোমে পড়ে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে জানা গেছে। তবে দোতলায় আগুন লাগায় মার্কেটের নিচতলার দোকানে তা ছড়ায়নি। অবশ্য আগুন নেভানোর সময় পানি পড়ে দোকানগুলোর মালপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মার্কেটের আগুন আতঙ্ক ছড়িয়েছে পুরো এলাকায়। প্রথমে কেউ কেউ পানি ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালিয়েছেন। তবে তাতে সুফল মেলেনি। আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করেছে একটির পর একটি দোকান। কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যায় আকাশ। তখন সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। আগুন নেভানোর কার্যক্রমের কারণে মার্কেট সংলগ্ন সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মতিঝিল থেকে সায়েদাবাদমুখী সড়কে স্থবির হয়ে থাকে যানবাহন। ফলে দুর্ভোগে পড়েন বিভিন্ন গন্তব্যের মানুষ। খবর পেয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উৎসুক জনতাকে সরিয়ে আগুন নেভানোর কাজে সহায়তা করেন।
ফায়ার সার্ভিস কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা পলাশ চন্দ্র মোদক সমকালকে বলেন, প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পাঠানো হলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে পরে ইউনিটের সংখ্যা বাড়ানো হয়। আগুন নেভানোর পর ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে জানা যাবে।
এদিকে পরিকল্পিতভাবে কেউ মার্কেটে আগুন লাগিয়ে দেয় কিনা তা নিয়ে গুঞ্জন রয়েছে। এই মার্কেট থেকে ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ পুরনো। ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, স্থানীয় কাউন্সিলর ময়নুল হক মনজু ও তার অনুসারীরা নিয়মিত চাঁদা আদায় করতেন। চাঁদা না দিলে দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেওয়াসহ নানা হয়রানি, এমনকি নির্যাতন করা হতো। এসব ঘটনায় ২০১৫ সালে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ১০ নেতাকর্মীকে কারাদণ্ড দেন।
সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির অভিযোগে সম্প্রতি কাউন্সিলর মনজুকে গ্রেফতার করে র্যাব। তার গ্রেফতারের খবরে ব্যবসায়ীরা আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেন। সেই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে মনজুর লোকজন মার্কেটে আগুন ধরিয়ে দিয়ে থাকতে পারেন বলে দাবি করছেন কেউ কেউ।
রাজধানী সুপার মার্কেটে আগুন লাগার পর দুর্ঘটনা এড়াতে ওই এলাকার বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখা হয়। মার্কেটের আশেপাশে কয়েকটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। সেগুলোয় রান্নার জন্য গ্যাসের চুলা ব্যবহৃত হয়। আগুনের সংস্পর্শে এসব গ্যাস সংযোগ থেকে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। একইভাবে বিদ্যুৎসংযোগ থেকেও নানারকম সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এসব কারণে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১:১২:৪৭ ৫৮৭ বার পঠিত # #আগুন #মার্কেট #রাজধানী