বঙ্গ-নিউজঃ দেশে লবণের কোনো সংকট নেই। চাহিদার চেয়ে বেশি পরিমাণে লবণ মজুত রয়েছে। অথচ একটি অসাধু চক্র রাজধানীসহ সারাদেশে গতকাল মঙ্গলবার লবণ নিয়ে গুজব ছড়িয়ে একটি আতঙ্ক তৈরি করে। রাজধানীর কোনো কোনো বাজার ও পাড়া-মহল্লার দোকান থেকে রীতিমতো লবণ উধাও হয়ে যায়। আতঙ্কিত ভোক্তারা হুমড়ি খেয়ে পড়ে লবণ কিনতে। কেউ দুই কেজি, কেউ তিন কেজি, আবার কাউকে একসঙ্গে পাঁচ কেজি পর্যন্তও লবণ কিনতে দেখা গেছে। গুজবে রাজধানীতে ৩৫ থেকে ৩৮ টাকার কেজির লবণ ৭০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতেও কোথাও কোথাও বিক্রি হয়েছে। দাম আরো বাড়তে পারে এই আশঙ্কায় প্রয়োজন নেই তারপরও লবণ হাতে অনেককে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে।
ভোক্তাদের অভিযোগ, পেঁয়াজের পর এবার লবণ নিয়ে একটি অসাধু চক্র কারসাজি করে দেশে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরির পাঁয়তারা করছে। পেঁয়াজের ঝাঁজ খানিকটা কমতে না কমতেই এখন লবণ নিয়ে কারসাজিতে ভোক্তারা রীতিমতো উদ্বিগ্ন।
গতকাল তথ্য অধিদপ্তর থেকে জারি করা এক প্রেস নোটে বলা হয়েছে, লবণ নিয়ে কিংবা অন্য কোনো বিষয়ে কোনো ব্যক্তি বা মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অন্য কোনোভাবে গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অপরদিকে, ভোক্তাদের গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয় ও কুটির শিল্প করপোরেশন বলেছে, ২০১৮-১৯ মৌসুমে দেশে রেকর্ড পরিমাণ ১৮ লাখ ২৪ হাজার টন লবণ উত্পাদন হয়েছে। যা গত ৫৮ বছরের লবণ উত্পাদনের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। বর্তমানে দেশে সাড়ে ৬ লাখ টনের বেশি ভোজ্য লবণ মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের লবণ চাষিদের কাছে ৪ লাখ ৫ হাজার টন এবং বিভিন্ন লবণ মিল মালিকদের কাছে ২ লাখ ৪৫ হাজার টন লবণ মজুদ রয়েছে।
এছাড়া সারাদেশে বিভিন্ন লবণ কোম্পানির ডিলার, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছেও প্রয়োজনের অতিরিক্ত লবণ মজুদ রয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, দেশে প্রতি মাসে ভোজ্য লবণের চাহিদা ১ লাখ টন। অথচ মজুদই আছে সাড়ে ৬ লাখ টন। এছাড়া চলতি নভেম্বর মাস থেকে লবণের উৎপাদন মৌসুম শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া ও মহেশখালী উপজেলায় উৎপাদিত নতুন লবণও বাজারে আসতে শুরু করেছে। এ হিসাবে দেশে লবণের কোনো ধরনের ঘাটতি বা সংকট হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
শিল্প মন্ত্রণালয় বলেছে, একটি স্বার্থান্বেষী মহল গুজব রটনা করে অধিক মুনাফা লাভের আশায় লবণের দাম অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালিয়েছে। গতকাল সারাদেশে জেলা প্রশাসনকে এসব বিষয় জানানোর জন্য বিসিকের জেলা কার্যালয়গুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গতকাল কাওরানবাজার সাপ্তাহিক বন্ধ থাকলেও বিকালের দিকে দেখা যায়, ক্রেতাদের বেশ ভিড়। অনেকেই গুজব শুনে লবণ কিনতে এসেছেন। হাবিব নামে একজন ক্রেতা বলেন, তিনি শুনেছেন, দেশে নাকি লবণ পাওয়া যাচ্ছে না। কেজি নাকি ১০০-২০০ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। তবে দোকানে এসেই বুঝতে পারেন পুরোটাই গুজব।
এই বাজারের ‘মায়ের দোয়া’ স্টোরের বাবুল বলেন, লবণের কোনো সংকট আছে বলে আমার জানা নেই। তিনি প্রচলিত দামেই লবণ বিক্রি করছেন। তবে গুজবে অনেকেই লবণ কিনতে আসছেন বলে তিনি জানান। কাওরানবাজারের আরেক লবণ বিক্রেতা মামুন বলেন, মানুষ যেভাবে গুজবের ফাঁদে পড়ে ছোটাছুটি করল তা হাস্যকর।
লবণের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, লবণ নিয়ে কারসাজি দমনে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মাঠে নেমেছে। যারা কারসাজিতে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে গতকাল কক্সবাজারে বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সাধারণ সভায় জানানো হয়, গুজব ছড়িয়ে লবণ শিল্পকে ধ্বংসের অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। কারণ, দেশে লবণের কোণ ঘাটতি নেই। আমাদের কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, গতকাল শহরের একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত সভায় বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল কবির বলেন, অপরিশোধিত লবণ পরিশোধনের পর খাবার উপযুক্ত ও বাজারজাত করতে কেজিতে সর্বোচ্চ এক থেকে দেড় টাকা খরচ পড়বে। সে হিসেবে এক কেজি লবণের দাম হওয়ার কথা সাড়ে পাঁচ টাকার নিচে। মোল্লা সল্টের মহাব্যবস্থাপক আব্দুল মান্নান বলেন, দেশে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি লবণের মজুত রয়েছে। দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। তাছাড়া কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও দাম বাড়ানো হয়নি।
গুজবের পালে হাওয়া দিয়েছে পেঁয়াজ: লবণের সংকট নিয়ে গুজবের পালে হাওয়া দিয়েছে পেঁয়াজ। কারণ, মাত্র চার মাসের ব্যবধানে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজির পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকার বেশি দামে। সরকারের কোনো উদ্যোগই কমাতে পারেনি পেঁয়াজের দাম। এ অবস্থায় মানুষ মনে করেছিল লবণের দামেও লাগাম টানতে পারবে না সরকার। একারণেই একজনের দেখাদেখি আরেক জন ছুটে গেছেন লবণ কিনতে। রাজধানীর অনেক দোকানদার জানান, সারাদিনে তারা যেখানে দুই-তিন প্যাকেট লবণ বিক্রি করতে পারেন না সেখানে মঙ্গলবার ক্রেতারা সব প্যাকেট কিনে নেন।
খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম: এদিকে লবণসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ ও পরিবেশনের জন্য বিসিকের প্রধান কার্যালয়ে একটি কনট্রোল রুম খোলা হয়েছে। কনট্রোল রুমের নম্বর ০২-৯৫৭৩৫০৫ (ল্যান্ড ফোন) এবং ০১৭১৫-২২৩৯৪৯ (সেল ফোন)। গুজবে কান না দিয়ে লবণসংক্রান্ত যেকোনো তথ্যের প্রয়োজনে কনট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ৯:৪২:৩৮ ৭৮৭ বার পঠিত # #অভিযোগ #গুজব #লবণ #সংকট