বঙ্গ-নিউজঃ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে রমনা থানায় দায়ের করা দুই মামলায় রিমান্ডের আবেদন শুনানি মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) আজ।
আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) নিজাম উদ্দিন জানান, গত ৯ অক্টোবর এ তারিখ নির্ধারণ করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। এর আগে ৭ অক্টোবর (সোমবার) সম্রাটের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদকের আইনে দায়ের করা দুই মামলার ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। তবে ৯ অক্টোবর দিন ধার্য থাকলেও ওই দিন সম্রাট অসুস্থ থাকায় রিমান্ড শুনানির জন্য পরবর্তী তারিখ ১৫ অক্টোবর ঠিক করেন আদালত।
গত ৭ অক্টোবর সম্রাটের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা দুটি দায়ের করেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-এর নায়েব সুবেদার আব্দুল খালেক।
উভয় মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, মতিঝিল, আরামবাগ, ফকিরাপুল ও পল্টনসহ রাজধানীতে ১০টি ক্লাবে ক্যাসিনো ব্যবসা ছিল সম্রাটের। সবার কাছে তিনি ‘ক্যাসিনো সম্রাট’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। পাশাপাশি দলীয় পদ অপব্যবহার করে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি করতেন। কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে তাকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করতো তার ক্যাডাররা। সম্রাটের কার্যালয় থেকে র্যাব অবৈধ অস্ত্র, মাদকসহ নির্যাতন করার ইলেকট্রিক শক মেশিন উদ্ধার করে। মাদক মামলায় সম্রাটের পাশাপাশি তার সঙ্গে আটক আরমানকেও আসামি করা হয়েছে।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন স্পোর্টস ক্লাবের আড়ালে ক্যাসিনো ব্যবসা চালানোর অভিযোগে অভিযান শুরু করে র্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় ওই দিনই গ্রেফতার করা হয় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে, দুদিন পর গ্রেফতার করা হয় যুবলীগ নেতা ও ‘টেন্ডার কিং’খ্যাত জিকে শামীমকে। অভিযানের প্রথম দিন থেকেই আলোচনায় আসে ইসমাইল হোসনে চৌধুরী সম্রাটের নাম। এরপর গত ২৩ সেপ্টেম্বর অন্যদের সঙ্গে সম্রাটেরও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশের পাশাপাশি ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়। সম্রাটকে গ্রেফতার করা হবে কিনা, তা নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হওয়ার মধ্যেই ৬ অক্টোবর ভোরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে আটক করা হয় তাকে।
সম্রাটের বিরুদ্ধে দায়ের করা অস্ত্র মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সম্রাটকে জিজ্ঞাসাবাদে ও স্থানীয় তদন্তে জানা গেছে, ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি হিসেবে ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে রাজধানীর বিভিন্ন ক্লাব পরিচালনা করতেন। তার নিয়ন্ত্রণে ক্লাবগুলোয় ক্যাসিনোসহ জুয়ার আসর বসতো। জুয়া খেলা থেকে তিনি বিপুল অর্থ-সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। তিনি নিজেও ক্যাসিনো খেলায় সিদ্ধহস্ত। প্রতিমাসে ক্যাসিনো খেলার জন্য তিনি সিঙ্গাপুর যেতেন। সবার কাছে তিনি ‘ক্যাসিনো সম্রাট’ হিসেবে পরিচিত। মতিঝিল, আরামবাগ, ফকিরাপুল, পল্টনসহ ১০টি ক্লাবে ক্যাসিনো কারবারের তিনি জড়িত ছিলেন। পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডও করতেন তিনি। তার রয়েছে বিশাল ক্যাডার বাহিনী। অবৈধ উপার্জন করে তিনি এই ক্যাডার বাহিনী চালাতেন। ভিন্নমত পোষণকারী কিংবা কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে সম্রাটের ক্যাডার বাহিনী তাদের ওপর ইলেকট্রিক টর্চার মেশিন ও লাঠি দিয়ে নির্যাতন করতো। বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। কয়েকটি মামলায় তিনি জেল হাজতেও ছিলেন। সম্রাটের অন্যতম সহযোগী কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদ ও খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
মাদক ও অস্ত্র মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সম্রাটের দেখানো মতে তার কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে ৭.৬৫ বোরের একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, পাঁচ রাউন্ড গুলি, দুটি ইলেকট্রিক টর্চার মেশিন, দুটি লাঠি, ১৯ বোতল বিদেশি মদ, চার প্যাকেট তাস, ছয়টি নীল রঙের প্যাকেট থেকে এক হাজার ১৬০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, র্যাবের একটি দল জানতে পারে, চলমান ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে অন্যতম পলাতক আসামি ক্যাসিনো সম্রাট গ্রেফতারের ভয়ে কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতে যাওয়ার জন্য কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম এলাকায় লুকিয়ে আছেন। এই সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরওয়ার আলম ও নিজাম উদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে গিয়ে আলকরা গ্রামের কঞ্জুশ্রীপুর গ্রামের মনির চৌধুরীর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে সম্রাট ও আরমানকে গ্রেফতার করা হয়। আরমানকে মাদক সেবনরত অবস্থায় পাওয়া যাওয়ায় তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে তাৎক্ষণিক ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আর সম্রাটের কাকরাইলের কার্যালয়ে অস্ট্রেলিয়ান ক্যাঙ্গারুর চামড়া পাওয়ায় তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দণ্ড দেয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ৮:০৪:৩৬ ৫৮১ বার পঠিত