বঙ্গ-নিউজঃ সব পূজামণ্ডপের বাতাসেই এখন বিষাদের ছায়া। হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষের ঘরে ঘরে মন খারাপের দিন। ঢাক-কাঁসরের বাদ্যি-বাজনা, রাত্রি উজ্জ্বল করা আরতি ও পূজারি-ভক্তদের পূজা-অর্চনায় কেবলই মা দুর্গার বিদায়ের আয়োজন।
সোমবার দুর্গোৎসবের নবমীতে ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা দেখতে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী রামকৃষ্ণ মিশনে পৌঁছালে তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান মঠ ও মিশনপ্রধান স্বামী পূর্ণাত্মানন্দসহ মিশনের কর্মকর্তারা। এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশে অসাম্প্র্রদায়িক চেতনায় যার যার ধর্ম পালন করার পরিবেশ অটুট থাকবে।’
মঙ্গলবার শুভ বিজয়া দশমী। হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পাঁচ দিনের শারদীয় দুর্গোৎসব শেষ হবে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। মর্ত্যলোক ছেড়ে বিদায় নেবেন মা। অশ্রুসজল চোখে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ বিসর্জন দেবেন প্রতিমা। পাঁচ দিনের সর্বজনীন মিলন মেলা ভাঙবে আজ।
এদিন সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে দশমীবিহিত পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন দেওয়া হবে। এরপর সারাদেশে স্থানীয় আয়োজন ও সুবিধামতো সময়ে বিজয়ার শোভাযাত্রাসহকারে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে। সর্বত্র বিসর্জন শেষে ভক্তরা শান্তিজল গ্রহণ করবেন।
বিসর্জনের উদ্দেশ্যে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গন থেকে কেন্দ্রীয় বিজয়া শোভাযাত্রা বেরোবে বিকেল ৪টায়। এর আগে রাজধানীর ২৩৭টি পূজামণ্ডপের অধিকাংশই এসে জমা হবে পলাশীর মোড়ে। সেখান থেকে সম্মিলিত বাদ্যি-বাজনা, মন্ত্রোচ্চারণ ও পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে শুরু হবে বিজয়ার শোভাযাত্রা। এরপর সদরঘাটের ওয়াইজঘাটের বুড়িগঙ্গা নদীর জলে একে একে বিসর্জন দেওয়া হবে প্রতিমা।
বিজয়া দশমী উপলক্ষে মঙ্গলবার সরকারি ছুটি। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ স্যাটেলাইট টেলিভিশনগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করবে বিশেষ সংখ্যা ও নিবন্ধ। শারদীয় দুর্গোৎসব ও বিজয়া দশমী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বঙ্গভবনে হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন।
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের কেন্দ্রীয় পূজামণ্ডপে দুপুর ১২টায় স্বেচ্ছায় রক্তদান আয়োজিত হবে। বনানী সর্বজনীন পূজামণ্ডপে সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে মহিলাদের সিঁদুর খেলা। ১১টায় আর্ট ক্যাম্পের উদ্বোধন করবেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার। মণ্ডপে মণ্ডপে রয়েছে পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ, ভোগ-আরতিসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানমালা। এ ছাড়া দেশজুড়ে দুর্গোৎসব চলাকালে মণ্ডপে মণ্ডপে আলোকসজ্জা, আরতি প্রতিযোগিতা, স্বেচ্ছায় রক্তদান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হচ্ছে।
সোমবার ছিল শারদীয় দুর্গোৎসবের মহানবমী। উৎসবে মেতেছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষ। দিনটির প্রধান আকর্ষণ ছিল মণ্ডপে মণ্ডপে আরতি প্রতিযোগিতা। সন্ধ্যা ও রাতকে উজ্জ্বল করে ভক্তরা মেতে উঠেছিলেন নানা ঢঙে, আরতি নিবেদনে। সেইসঙ্গে ছিল দিনভর পুরোহিতদের চণ্ডীপাঠ। মণ্ডপে মণ্ডপে ভক্তদের কীর্তন-বন্দনা। সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে দেবীর মহানবমী কল্পারম্ভ ও মহানবমীবিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হয়। পূজা শেষে যথারীতি পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও সন্ধ্যায় ভোগ-আরতি করা হয়।
মহানবমীর দিনও আগের দিনের মতো রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের পূজামণ্ডপগুলোতে মানুষের ঢল নেমেছিল। হাজার হাজার ভক্ত, পূজারি ও দর্শনার্থী মণ্ডপগুলোতে ঘুরে ঘুরে প্রতিমা দর্শন করেছেন। কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোথাও কোথাও মণ্ডপসংলগ্ন সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয় বিকেল থেকেই। এ কারণে নগরীর বিভিন্ন স্থানে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। রাতে যানজট অসহনীয় মাত্রায় পৌঁছে যাওয়ায় পূজারিদের পড়তে হয় ভোগান্তির মধ্যে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি শুভ বিজয়ার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে পৃথক বিবৃতি দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০:২৩:০০ ৫২১ বার পঠিত # #ঢাকের #দুর্গোৎসব #নবমীর #পূজা #মিশন #রামকৃষ্ণ