বঙ্গ-নিউজঃ বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছে ভারত। এ ছাড়া সীমান্তের ফেনী নদী থেকে পানি প্রত্যাহার করে ত্রিপুরার সাবরুমে সরবরাহ করতে পারবে প্রতিবেশী দেশটি। বঙ্গোপসাগরের নিরাপত্তায় দুই দেশ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে।
দিল্লিতে গতকাল শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে এসব ব্যাপারে চুক্তি হয়েছে। সই হওয়া সাত চুক্তির মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতের পণ্য আমদানি-রফতানির বিধিবিধান বা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি), ফেনী নদী থেকে এক দশমিক ৮২ কিউসেক পানি প্রত্যাহার করে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাবরুম শহরে সরবরাহ, উপকূলীয় নজরদারির জন্য বাংলাদেশে রাডার স্থাপন, বাংলাদেশকে দেয়া ভারতের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) বাস্তবায়ন, হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক, যুব সংক্রান্ত সহযোগিতার সমঝোতা স্মারক এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচির নবায়ন।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ইন্ডিয়া ইকোনমিক সামিটে যোগ দিতে গত বৃহস্পতিবার চার দিনের সফরে দিল্লি যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল স্থানীয় সময় সাড়ে ১১টায় দিল্লির হায়দরাবাদ হাউজে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হন তিনি। বৈঠকের পর ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে যৌথ উদ্যোগে সম্পন্ন হওয়া তিনটি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী। এগুলো হলো ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনে স্বামী বিবেকানন্দ ভবন, খুলনায় ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টারের কার্যক্রম এবং ভারতের উত্তরাঞ্চলে বাংলাদেশ থেকে এলপিজি গ্যাস আমদানি সংক্রান্ত একটি উন্নয়ন প্রকল্প।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিভিন্ন প্রথাগত খাতে সহযোগিতার ক্ষেত্র ব্যাপকভাবে বেড়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন নতুন ও অপ্রথাগত খাত যেমনÑ সমুদ্র অর্থনীতি, পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার, মহাকাশ গবেষণা, ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ রফতানি, সাইবার সিকিউরিটির মতো বিষয়ে উভয় দেশের সহযোগিতা সম্প্রসারিত হয়েছে। এসব বহুমুখী সহযোগিতার ফলে আমাদের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিশ্ববাসীর সামনে সুপ্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কের দৃষ্টান্ত হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। ভবিষ্যতে দুই দেশের সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে প্রধানমন্ত্রী এমন আশা প্রকাশ করেন।
বৈঠকের ব্যাপারে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে নরেন্দ্র মোদি বলেন, বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ককে মূল্য দেয় ভারত। বিশ্বের দুই বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশীর মধ্যে সহযোগিতার অনন্য উদাহরণ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক। আমাদের আজকের এই আলোচনা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে আরো জোরাল করবে। আমাদের বিশেষ এই বন্ধুত্বের লক্ষ্য হলো দুই দেশের জনগণের কল্যাণ ও অগ্রগতি।
বিকেলে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকালে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করেন। প্রধানমন্ত্রী আজ রোববার কংগ্রেসের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধির সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। রাতে তিনি ঢাকায় ফিরবেন।
বৈঠকের পর একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালে দুই দেশের সম্মতি অনুযায়ী তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তির জন্য বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন। নরেন্দ্র মোদি জানান, এ ব্যাপারে যত দ্রুত সম্ভব চুক্তি সইয়ে তার সরকার সব অংশীদারদের সাথে কাজ করছে। দুই প্রধানমন্ত্রী ধরলা, দুধকুমার, মনু, খোয়াই, গোমতী ও মুহুরী নদীর পানিবণ্টন নিয়ে একটি রূপরেখা চুক্তির খসড়া দ্রুত সম্পাদন করার জন্য যৌথ নদী কমিশনের কারিগরি কমিটিকে নির্দেশ দেন। ১৯৯৬ সালের গঙ্গা চুক্তি অনুযায়ী পানির সর্বোত্তম ব্যবহারের জন্য গঙ্গা-পদ্মা ব্যারাজ নির্মাণের সমীক্ষার লক্ষ্যে যৌথ কারিগরি কমিটি গঠন ও টার্মস অব রেফারেন্স প্রণয়নে গত আগস্টে দুই দেশের পানিসম্পদ সচিব পর্যায়ের বৈঠকে অর্জিত অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন তারা।
দুই প্রধানমন্ত্রী পারস্পরিক অর্থনৈতিক সুবিধার জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান আকাশ, নদী, রেল ও সড়ক যোগাযোগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। দুই নেতা বাংলাদেশ ও ভারতের সামরিক বাহিনীর মধ্যে জোরাল সম্পর্কের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। এ জন্য এবং সামরিক বাহিনীকে দেয়া ভারতের ৫০ কোটি ডলারের লাইন অব ক্রেডিট ব্যবহার দ্রুততর করতে উভয়ে সম্মত হন। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে একমত পোষণ করেন হাসিনা ও মোদি।
এ ছাড়া যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক, সীমান্ত নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা, উভয়ের জন্য লাভজনক বাণিজ্যিক অংশীদারিত্ব, কানেক্টিভিটি বৃদ্ধি, উন্নয়ন সহযোগিতা সুসংহত করা, জ্বালানি খাতে সহযোগিতা বাড়ানো, শিক্ষা ও যুব খাতে সহযোগিতা সম্প্রসারণ এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অংশীদারিত্বের ওপর আলোকপাত করা হয়।
শেখ হাসিনাকে ‘ঠাকুর শান্তি পুরস্কার’ প্রদান : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আঞ্চলিক শান্তি ও সমৃদ্ধি বজায় রাখতে তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মর্যাদাপূর্ণ ‘ঠাকুর শান্তি পুরস্কার-২০১৮’ প্রদান করা হয়েছে। কলকাতা এশিয়াটিক সোসাইটি এই পুরস্কার প্রদান করে।
কলকাতা এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ইশাহ মোহাম্মদ ভারতের রাজধানীর হোটেল তাজমহলে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও কলকাতা এশিয়াটিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক সত্যব্রত চৌধুরী।
এর আগে অন্যান্যের মধ্যে বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা ও প্রখ্যাত অর্থনীতিক অমর্ত্য সেনকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে অনুষ্ঠানে সম্মাননাপত্র পাঠ করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১:১১:৪৪ ৭৯৯ বার পঠিত # #খুলনা #চট্টগ্রাম #ঢাকা #নরেন্দ্র মোদি #ফেনী #শেখ হাসিনা