বঙ্গ-নিউজঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লী সফরকালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পানি বন্টন এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কমপক্ষে ১২টি চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একটানা তৃতীয় বারের মতো সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এটি হবে প্রথম দিল্লী সফর।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বুধবার (২ অক্টোবর) বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লী সফরকালে প্রকৃতপক্ষে কয়টি চুক্তি হতে পারে, এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারবো না, তবে এটুকু বলতে পারবো কমপক্ষে ১০ থেকে ১২টি চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে।
আগামী ৫ অক্টোবর দিল্লীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর এ চুক্তিগুলো স্বাক্ষর হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, আগামী ৫ অক্টোবর নয়াদিল্লীতে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যু এবং সীমান্ত হত্যা ইস্যুটি আলোচনায় স্থান পাবে।
তিনি বলেন, ‘হাসিনা-মোদির বৈঠকে তিস্তার সঙ্গে সকল আন্তঃসীমান্ত নদী নিয়ে একটি ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ভারতের সহায়তা এবং সীমান্ত হত্যা কমিয়ে শূন্যের কোটায় নিয়ে আসাসহ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সকল দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।’
শেখ হাসিনা ৫ অক্টোবর দিল্লীতে রাষ্ট্রপতি ভবনে ভারতের রাষ্ট্রপতি শ্রী রাম নাথ কোবিন্দ্রের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
ভারতের ন্যাশনাল কংগ্রেসের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী ৬ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার আবাসিক প্রাসাদে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠক চলাকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, উভয় দেশ পানি বন্টন চুক্তি অনুসারে গঙ্গার পানির সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিয়ে এক যৌথ উদ্যোগের বিষয়ে আলোচনা করবে।
তিনি বলেন, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর তিস্তাসহ আন্তঃসীমা নদীসমূহের পানি ভাগাভাগির বিষয়ে ‘চুক্তি কাঠামো’ স্বাক্ষরের ব্যাপারেও আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে।
বৈঠক চলাকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত হয়ে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ ভারতের পুরোপুরি সমর্থন প্রত্যাশা করবে।
মোমেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বিলম্ব এতদ্ঞ্চলের স্থিতাবস্থা বিঘিœত হওয়া নিয়েও আমরা আমাদের উদ্বেগের বিষয়ে ভারতকে পুনরাবৃত্তি করবো।’
তিনি বলেন, সীমান্ত হত্যা কমিয়ে শূন্যে নামিয়ে আনা সেই সঙ্গে সীমান্তে চোরাকারবারি রোধের ব্যাপারে উভয় দেশের যোগাযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি সীমান্তরক্ষীদের সহযোগিতা নিয়ে বিভিন্ন উদ্যোগের ব্যাপারেও ঢাকা দিল্লি বৈঠকে আলোচিত হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সীমান্তে আর একটি হত্যাও দেখতে চাই না। বাংলাদেশ ও ভারত উভয় সরকারের, ‘সীমান্তে আর একটিও হত্যা না হওয়ার’ সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে ২০০৩ ও ২০০৬ সালের তুলনায় সীমান্ত হত্যাকাণ্ড নাটকীয়ভাবে কমে এসেছে।’ দুই দেশ বাংলাদেশ ও ভারতের নদী সংযোগ ও সমুদ্র পথ নিয়ে আলোচনা করবে।’ এর ওপর ভিত্তি করে ভারতীয় পণ্য আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রে চিটাগাং ও মোংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহারে স্ট্যান্ডার্ড অপারেশন প্রসিডিওর (এসওপি) স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মোমেন উল্লেখ করেন।
এছাড়াও, যৌথভাবে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি ও বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক বিষয়েও বৈঠকে আলোচিত হবে।
মোমেন বলেন, দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের আগে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর আবাসস্থলে সাক্ষাৎ করবেন।
বাংলাদেশ সময়: ৯:৪০:৪২ ৫০৪ বার পঠিত # #দিল্লী #পররাষ্ট্রমন্ত্রী #প্রধানমন্ত্রীর #ভারত