বঙ্গ-নিউজঃ বাদামি, সাধারণ, প্রক্রিয়াজাত বা কৃত্রিম চিনি। এসব নিয়ে প্রচলিত ধারণাগুলো সব সত্যি নয়।
পুরানো দিনের মানুষগুলোই সুখে ছিল। চা, কফি পান করার সময় নিশ্চিন্তে সাধারণ চিনি গুলে নিতেন। তবে বর্তমান যুগের মানুষগুলো কপালে সে সুখ জোটেনি। সাদা চিনি, বাদামি চিনি, হরেক রংয়ের প্যাকেটজাত চিনি যাদের নাকি আছে হরেক রকমের গুণাগুণ!
মজার ব্যাপার হল কোনোটাই নিশ্চিন্তে গ্রহণ করা যায় না, সবগুলোরই কিছু না কিছু ক্ষতিকর দিক আছে।
হরেক রকমের চিনি নিয়ে এই যে হরেক রকমের গল্প তার কতটুকু সত্য, কতটুকু যৌক্তিক?
পুষ্টিবিজ্ঞানের তথ্যানুসারে স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে জানানো হল বিস্তারিত।
ধারণা: বাদামি চিনি সবচাইতে ভালো
সাদা চালে চাইতে লাল চালের ভাত খাওয়া ভালো- এ বিষয় সম্পর্কে অনেকেই অবগত। আর তারাই ধারণা করে নেয় তাহলে বাদামি চিনি এবং অন্যান্য কম প্রক্রিয়াজাত চিনিও তুলনামুলকভাবে ভালো।
প্রকৃত পরিস্থিতি হল, দুই ধরনের চিনিই একই ধরনের প্রক্রিয়াজাতকরণের মধ্য দিয়ে যায়। কিছু বাদামি চিনি আবার সাদা চিনির চাইতেও বেশি ক্যালরিযুক্ত।
‘ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার (ইউএসডিএ)’য়ের তথ্যানুসারে, এক চা-চামচ বাদামি চিনিতে থাকে ১৭ ক্যালরি, আর সাদা চিনিতে ১৬।
বাদামি চিনির রং ভিন্ন হওয়ার কারণ হতে পারে দুটি। এক পুরোপুরি পরিশোধন করা হয়নি কিংবা প্রস্তুতকারকরা তাতে রং যোগ করেছেন। আর এতে ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়ামের অস্তিত্ব থাকলেও তাদের পরিমাণ খুবই নগন্য। তাই বাদামি চিনিও পরিমাণ বুঝে খাওয়া উচিত।
বেইক করার জন্য আদর্শ ‘কোকোনাট সুগার’
ক্যালিফোর্নিয়ার বেভারলি হিলসের ‘লাইফস্প্যান মেডিসিন’য়ের বিশেযজ্ঞ রেচেল সোয়ানসন বলেন, “আমার রোগীরা এই ‘কোকোনাট সুগার’ নিয়ে প্রশ্ন করেন। কারণ তারা ‘ফুড ব্লগার’দের কাছে এর নাম শুনেছে। তবে এই ধরনের চিনি থেকে কোনো উপকার পেতে হলে তা প্রচুর পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে। আর তাই আমার মতে বেইকিং’য়ে ‘কোকোনাট সুগার’ ব্যবহার আর সাদা কিংবা বাদামি চিনি ব্যবহার একই কথা।”
‘ন্যাচারাল’ লেখা মানে ভালো জিনিস
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্যাকেটের গায়ে ‘ন্যাচারাল’ শব্দটি লেখা থাকলেই যা তা বেশি করে খেতে পারবেন এই ধারণা ভুল। টক দই, ওটমিল, চা ইত্যাদি গ্রহণের সময় মানুষ ‘ন্যাচারাল সুইটনার’ যেমন মধু প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করেন। কারণ তা প্রাকৃতিক। তবে এই ‘ন্যাচারাল’ মানে যে আসলে কি তা এখনই নিশ্চিত করে বলতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)’।
২০১৬ সালে সাধারণ ভোক্তাদের সাহায্যে এই শব্দের নিশ্চিত সঙ্গা বের করা চেষ্টা করে সংস্থাটি। এখন পর্যন্ত যে খাবারে কৃত্রিম বা ‘সিনথেটিক’ কোনো উপাদান নেই তাই ‘ন্যাচারাল’, তার মানে এই নয় যে তা প্রাকৃতিক।
চা-চামচ হোক কিংবা টেবিল-চামচ, মধুতে সবসময়ই চিনির চাইতে বেশি ক্যালরি থাকে।
‘সুগার’ লেখা না থাকলে তা চিনি নয়
‘অর্গানিক ললিপপ’ এক ধরনের লজেন্স, যা অতিরিক্ত খেলে ক্ষতিকর।
বিশেষজ্ঞ লেখক বলি টবডিক্স বলেন, “প্যাকেটের গায়ে ‘অর্গানিক’ লেখা দেখে বিভ্রান্ত হবেন না। বরং ওই প্যাকেটে উপাদানের তালিকা পড়ে জেনে নিন খাবারটিতে কি আছে। তবে তাতেও বিভ্রান্তির অবসান হবে না।
কারণ বর্তমানে ৬০টি ‘এফডিএ-অ্যাপ্রুভব অ্যাডেড সুগার’ আছে, যার মধ্যে আছে সুক্রোজ, ডেক্সট্রোজ, ডেক্সট্রিন, গোল্ডেন সিরাপ, সরঘাম ইত্যাদি। শব্দের শেষে ‘ওএসই’ থাকলেই বুঝে নিতে হবে তা এক ধরনের চিনি।
আর যারা চিনি এড়াতে চাচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে সিরাপ, উচ্চমাত্রায় ফ্রুক্টোজযুক্ত কর্ন সিরাপ, আখের রস সবই নিষিদ্ধ।
বাংলাদেশ সময়: ১:৫৮:৫২ ৪৭৯ বার পঠিত #চিনি #স্বাস্থ্য #স্বাস্থ্য টিপস