বঙ্গ-নিউজঃ দুর্নীতি এ দেশে আগেও ছিল। কিন্তু গত কয়েক দশকে তা রাষ্ট্র ও সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, তা অকল্পনীয়। রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের এমন কোনো স্তর নেই, যেখানে দুর্নীতি জাঁকিয়ে বসেনি। এতে জনকল্যাণে বরাদ্দ করা রাষ্ট্রীয় অর্থের বড় অংশেরই অপচয় হচ্ছে। রাজনীতিও চলে গেছে দুর্নীতিগ্রস্তদের কবজায়। রাজনীতিতে ‘কাউয়া’ ও ‘হাইব্রিডদের’ দৌরাত্ম্য বেড়েছে। ক্রমে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন দেশের জন্য বড় শঙ্কার কারণ হয়ে উঠেছে। এ থেকে মুক্তি পেতেই হবে।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক দিন ধরেই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে নানাভাবে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন, তাতে কাজ হয়নি। অবশেষে তাঁকে কঠোর রূপই প্রদর্শন করতে হয়েছে। দেশব্যাপী দুর্নীতি, মাদক, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযানে নেমেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো। অনেক রাঘব বোয়াল ধরা পড়ছেন অভিযানে, তার মধ্যে ক্ষমতাসীন দল বা সহযোগী সংগঠনগুলোর অনেক নেতাকর্মীও রয়েছেন। অভিযান নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে সাধারণ মানুষ। গত শনিবার নিউ ইয়র্কে প্রদত্ত এক সংবর্ধনাসভায়ও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থান অব্যাহত থাকবে। দুর্নীতি যে-ই করুক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, নিজের দলের হলেও তাকে রেহাই দেওয়া হবে না। আমরা বিশ্বাস করি, দেশ যে সর্বনাশা পথে যাত্রা করেছে, তা থেকে দেশকে আবার সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
দুর্নীতির মহীরুহ যেভাবে বিস্তার লাভ করেছে, তা থেকে দেশ শিগগিরই শতভাগ মুক্ত হয়ে যাবে—এমন আশা করাও যৌক্তিক হবে না। কিন্তু লাগাম তো টানতে হবে। আমাদের দুর্ভাগ্য যে দীর্ঘদিন লাগাম টানার সেই প্রচেষ্টাই ছিল না। দুর্নীতি রোধে সরকারের যেসব ব্যবস্থা থাকে, সেগুলোর পর্যন্ত টুঁটি টিপে রাখা হয়েছিল। এখন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বাংলাদেশ ব্যাংকের দুর্নীতিবিরোধী শাখাগুলো অনেক বেশি সক্রিয়। এরই মধ্যে দুর্নীতির কারণে বড় বড় চাঁই তাদের জালে ধরা পড়ে বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোও সন্ত্রাস-দুর্নীতির বিরুদ্ধে আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি সক্রিয়। এ অবস্থায় দুর্নীতি দমনে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর অবস্থানের কারণে ওই সব সংস্থা বা বাহিনীর অভিযান আরো শক্তিশালী হচ্ছে। ক্যাসিনো, মাদক, সন্ত্রাস ও টেন্ডারবাজির বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ের অভিযানগুলো তারই প্রমাণ। অতীতে কখনো এসব বাহিনী ক্ষমতাসীন দলের দুর্নীতিবাজ নেতানেত্রীদের বিরুদ্ধে এমন অভিযান পরিচালনার সাহস দেখাতে পারেনি, যা এখন তারা করে দেখাচ্ছে। একই সঙ্গে প্রশাসন এবং খোদ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধেও একই রকম কঠোরতা নিয়ে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। যেকোনো মূল্যে আয়ের সঙ্গে সংগতিহীন ব্যয় বন্ধ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর প্রতিটি টাকা যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা হতো, তাহলে দেশ আজ অনেক দূর এগিয়ে যেত। আমরা চাই, দেশের এগিয়ে চলার গতি আরো ত্বরান্বিত হোক। দুর্নীতির মাধ্যমে যাঁরা সেই গতি ব্যাহত করছেন, তাঁদের কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করা হোক।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:৪৯:৫২ ৭৭০ বার পঠিত # #দুর্নীতি #প্রধানমন্ত্রীর