বঙ্গ-নিউজঃ ক্লাস ফাঁকি দিয়ে নগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অবাধ ঘোরাফেরার চিত্র উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। নগরীর সিআরবি, ডিসি হিল, চেরাগীর মোড়, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, শিশুপার্ক, ফয়’স লেকসহ বিভিন্ন বিনোদন স্পটগুলোতে তাদেরকে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে। এদের বেশিরভাগই উঠতি বয়সের ছেলেমেয়ে। ক্লাসে না গিয়ে ওইসব স্পটে শিক্ষার্থীরা আড্ডায় মগ্ন হচ্ছে। প্রকাশ্যে ধূমপান ছাড়াও জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন আপত্তিকর ঘটনায়। যা দেখে উদ্বিগ্ন হচ্ছে সাধারণ মানুষ। দেখা গেছে, এদের বেশিরভাগই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের এ প্রবণতা ঠেকাতে মাঠে নেমেছে পুলিশ। সর্বশেষ গতকাল রোববার বেলা ১১ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত শুধুমাত্র সিআরবি এলাকায় অভিযান চালিয়ে স্কুল কলেজ পড়ুয়া ২৬ জন শিক্ষার্থীকে আটক করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। পরে অভিভাবকদের জিম্মায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। পুলিশের এমন কর্মকাণ্ডকে ইতিবাচক বলছেন সিআরবিতে আসা লোকজন। ওসি কোতোয়ালী মোহম্মদ মহসীন অভিভাবকদের সামনে শিক্ষার্থীদের এমন কাণ্ড থেকে বিরত থেকে ক্লাস-পড়ার টেবিলে ফেরার আহ্বান জানান। পাশাপাশি অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন।
ওসি মহসীন আজাদীকে বলেন, স্কুল-কলেজ ফাঁকি দিয়ে আড্ডাবাজির মাধ্যমে অপরাধের প্রাথমিক পর্বটা শুরু হয়। লেখা-পড়ার মূলস্রোত থেকে তারা দূরে সরে যায়। ধীরে ধীরে তারা মাদক, সন্ত্রাসের পথ বেছে নেয়। তাই সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধে প্রত্যেক অভিভাবককে খোঁজ রাখতে হবে তাদের ছেলে বা মেয়েটা স্কুল-কলেজে গেল কি-না। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে শিক্ষার্থী অনুযায়ী খোঁজ রাখতে হবে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন ক্লাসে গিয়ে নোটিশ করা জরুরি। পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। সচেতনতা মূলক বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। কিন্তু পুলিশের একার পক্ষে সামাজিক এ অবক্ষয় দূর করা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, তারা আমার ছোট ভাই বোনের মতো। আইন সম্পর্কে অবগত নয়। তাই তাদের প্রমাণ দেখিয়েছি যে, সিএমপি অধ্যাদেশে ৮৮ (ঘ) ধারায় সুস্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত সন্তোষজনক কারণ ব্যতীত কোনো রাস্তায়, প্রাঙ্গণে বা অন্য কোনো স্থানে ঘোরাফেরা করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ আইন তাদের অনেকেই জানে না। আমরা প্রথম অবস্থায় তাদের আটক করে থানায় এনে অভিভাবকের জিম্মায় দিচ্ছি এবং ডাটাবেইজে তাদের তথ্যাবলী সংযুক্ত করছি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, অভিভাবকদের নজরদারি না থাকায় পড়ালেখায় ফাঁকি দিয়ে ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়াচ্ছে এরা। কেউ কেউ সুযোগ বুঝে ইউনিফর্ম খুলে রাখছে ব্যাগে। বিশেষ করে ক্লাস চলাকালীন নগরীর বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে সময় কাটাচ্ছে এসব শিক্ষার্থী। এমনকি কলেজ-স্কুলের ইউনিফর্ম পরে যুগল আড্ডা দিতেও দেখা যাচ্ছে।
গতকাল কোতোয়ালী থানায় আটককৃত শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, তারা একান্তে সময় কাটানোর জন্য নিরাপদ জায়গা হিসেবে সিআরবি বেছে নিয়েছিল। বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থী এখানে সময় কাটায়। অভিভাকরা বিষয়টি টেরই পান না।
সিএমপির থানা পুলিশ এবং গোয়েন্দা শাখা যৌথভাবে শিক্ষার্থীদের ক্লাস ফাঁকি দেওয়া এবং আড্ডাবাজি নিয়ে ইতোমধ্যে ১৬ থানা এলাকায় কাজ করছে। নগরীতে বিশেষ করে অল্পবয়সীদের এ ধরনের আড্ডার স্পটগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী কোতোয়ালী থানা এলাকায় সবচেয়ে বেশি ৩২টি স্পট চিহ্নিত হয়েছে। সবচেয়ে কম স্পট আছে বাকলিয়া থানা এলাকায় ৫টি। ওইসব স্থানে মূলত স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা কোন সময়, কেন আড্ডা দেয়, আড্ডার বিষয়বস্তু কী, ক্লাস ফাঁকি দিয়ে আড্ডা চলছে কি না, আড্ডায় নিষিদ্ধ কিছু ব্যবহার করছে কি না, তা মনিটরিং করছে পুলিশ। এসব আড্ডাস্থল থেকে কী ধরনের অপরাধ হয়, তাও চিহ্নিত করা হয়েছে। অভিযান চলাকালীন অভিযুক্তদের অপরাধ কতটা তা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। প্রথম অবস্থায় তাদের মা-বাবাকে ডেকে সন্তানকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। সাথে মুচলেকা নেওয়া হচ্ছে যে, ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ তার দ্বারা হবে না। আবার তাদের পকেটে যদি মাদক বা অস্ত্র পাওয়া যায় তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন আজাদীকে বলেন, মা-বাবা সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত থাকেন। ভাবেন সন্তান মানুষ হচ্ছে। কিন্তু মা-বাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা সময় কাটায় বিভিন্ন পার্কে কিংবা রাস্তার মোড়ে। গায়ে স্কুলের ইউনিফর্ম, সাথে বইয়ের ব্যাগ। নিত্য দিন স্কুল-কলেজ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন স্থানে নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখছে না। ঝুঁকে পড়ছে নানা অসামাজিক কর্মকাণ্ডেও। এই বিষয়ে অভিভাবক, মা-বাবাদের আরো সচেতন হতে হবে। শিক্ষক-অভিভাবকদের সমন্বয়ে ছেলে-মেয়েদেরকে সচেতন করতে হবে। ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে আমি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং সামাজিক অনুষ্ঠানে গিয়ে এ ব্যাপারে মতবিনিময় করছি, অভিভাবকমণ্ডলীর পাশাপাশি সন্তানদের সাথেও কথা বলছি।
বাংলাদেশ সময়: ১০:৩৫:০৯ ৫৫৪ বার পঠিত # #এ্যাকশনে #ক্লাস ফাঁকি #পুলিশ