বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় ১৯৪৭ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। পিতা বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান এবং মাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা। টুঙ্গিপাড়াতেই তিনি বাল্যশিক্ষা গ্রহণ করেন এবং ১৯৫৪ সাল থেকে ঢাকায় পরিবারের সাথে মোগলটুলির রজনী বোস লেনের বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে উঠেন। শেখ হাসিনা ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট (কিছু বিপথগামী সেনা অফিসার)এক সামরিক অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা বাদে পরিবারের সকল সদস্যকে হত্যা করা হয়। বোনদ্বয় সেইসময় পড়াশোনার জন্য জার্মানিতে ছিলেন । দীর্ঘ প্রায় ৬ বছর পর ১৯৮১ সনের ১৭ই মে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা। দেশে ফিরেই তিনি দলকে সংগঠিত করেন এবং সর্বসম্মতিতে দলের সভানেত্রীর দায়িত্ব গ্রহন করেন।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ যখন সুসংগঠিত ঠিক আবারও শুরু হয় তাঁর বিরোদ্ধে ষড়যন্ত্র ও জীবন নাশের হুমকি। অধিকন্তু পিতার মতো বরাবরই তিনিও ছিলেন ঘাতকের ষড়যন্ত্রের টার্গেট। একবার নয়, দুইবার নয়, শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছিল। তাঁকে এবং আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার জন্য ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট ঢাকায় আওয়ামী লীগের এক জনসভায় গ্রেনেড হামলা করা হয়। উক্ত হামলায় ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হন এবং নেত্রী শেখ হাসিনা সহ প্রায় ৩০০ লোক আহত হয়। ঐ হামলায় নিহতের মধ্যে মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আইভি রহমান অন্যতম। বাংলাদেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত নৃশংস সহিংসতার যেসব ঘটনা ঘটেছে, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনা তার একটি।
সকল বাধাবিপত্তি ও দেশী-বিদেশী চক্রান্ত উপেক্ষা করে অবশেষে দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের জুন মাসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে। দীর্ঘ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে আওয়ামী লীগকে ষড়যন্ত্র করে ২০০১-২০০৮ পর্যন্ত ক্ষমতার বাহিরে রাখা হয়। আবারও শুরু হয় দলীয় নেতাকর্মীদের উপর অমানসিক নির্যাতন, হামলা-মামলা, সংখ্যালগুদের উপর হামলা ও ব্যাপক হত্যাকাণ্ড। সারাদেশে ছাত্রদল, জামাত-শিবিরদের তাণ্ডব জাতি দেখেছে নিজ চক্ষে। ২০০৭ সনের ১/১১ এ সেনাশাসিত সরকার আবারও আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করতে চেয়েছে, শেখ হাসিনাসহ অগণিত নেতাকর্মীকে জেলে আটক করেছে, হত্যা, নির্যাতন, হামলা মামলা দিয়েছে কিন্ত কোন কিছুই আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করতে পারেনি উপরন্ত সময়ের সাথে সাথে আওয়ামী লীগ আরও শক্তিশালী হয়েছে এবং মানুষের আশ্রয় ও শেষ ঠিকানায় পরিণত হয়েছে। শত বাধাবিপত্তি, জুলুম, নির্যাতন উপেক্ষা করে ২০০৮ সনে সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখাগরিষ্ঠতা পায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। পরবর্তীতে ২০১৩ ও ২০১৮ সনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলটি নিরঙ্কুশ সংখাগরিষ্ঠতা নিয়ে এদেশের মানুষের সেবা করার সুযোগ পায় এবং শেখ হাসিনা ৪র্থ বারের মত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
জননেত্রী শেখ হাসিনা এদেশের মানুষকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে এবং ধাপে ধাপে তার বাস্তবায়ন করছে। দেশের মানুষ ডিজিটাল বাংলাদেশ, তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন, শিক্ষার আধুনিকায়ন ও কর্মমুখী শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী ও এর আওতা বৃদ্ধি, খেলাধুলায় ব্যাপক উন্নয়ন, দারিদ্র দূরীকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা, গড় আয়ু, মাথা পিছু জাতিয় আয় বৃদ্ধি, মেগা প্রকল্পসমুহ ইত্যাদির যেমন স্বপ্ন দেখেছিল ঠিক তেমনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানুষের স্বপ্নের বাস্থবায়ন করেও দেখাচ্ছে। বার বার মৃত্যুকে খুব কাছে থেকে দেখা, বাবা-মা, ভাই, আত্মীয় স্বজনের মৃত্যুর শোক নিয়ে বেঁচে থাকা, জেল জুলুম সহ্য করা, অগণিত নেতাকর্মীর দুঃখ কষ্ট ও বিপদে কাছে থাকা নেত্রীর নাম শেখ হাসিনা। অসংখ্য দেশী-বিদেশী সম্মানসূচক পদকে ভূষিত হওয়া এবং বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে সম্মানিত করা, স্বল্প সময়ে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা তথা এদেশের মানুষকে স্বপ্ন দেখানো নেত্রীর নাম শেখ হাসিনা। আজ ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, মৃত্যুর হাত থেকে বার বার বেঁচে যাওয়া নেত্রীর ৭৩তম জন্মদিন। শুভ জন্মদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ড. মোহাম্মদ আলমগীর কবীর
অধ্যাপক ও সাবেক প্রভোস্ট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:২০:৫৪ ১৩৭৭ বার পঠিত #জন্মদিন #মমতাময়ী নেত্রী শেখ হাসিনা