বঙ্গ-নিউজঃ বাংলাদেশ চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী জানান, নাটোর, নওগাঁ, জয়পুরহাটসহ দেশের কোথাও চালের দাম মোটেই বাড়েনি। রাজধানীর বাজারে দাম কেন বেড়েছে, তা তার বোধগম্য নয়।
হঠাৎই খুচরা বাজারে সব ধরনের চালের দাম বেড়ে গেছে। চালের ধরনভেদে কেজিপ্রতি ২ থেকে সর্বোচ্চ ২০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। তবে দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলেন, বৃষ্টিতে সরবরাহ কম, চাহিদা অনুযায়ী চাল আসছে না বাজারে, তাই দাম বেড়েছে। এদিকে আড়তদাররা বলেন, একদিকে বৃষ্টি অন্যদিকে পরিবহন খরচ বাড়ায় চালের দামও কিছুটা বেড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
রাজধানীর কয়েকটি খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ২ থেকে ৩ টাকা। ৩৪ টাকা কেজি দরের মোটা চাল (স্বর্ণা) রাজধানীর কোনাপাড়া বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৩৭ টাকা দরে।
গত সপ্তাহে ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া নাজিরশাইল চাল এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। সরু চাল নামে পরিচিত মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬২ টাকা কেজি দরে, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। পাশাপাশি দাম বেড়েছে সুগন্ধি চালেরও। ৯০ টাকা কেজি দরের খোলা কালিজিরা চাল বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। আর প্যাকেটজাত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কালিজিরা চাল বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের চাল ব্যবসায়ী এরশাদ আলী বলেন, ‘ট্রাক ভাড়া বেড়েছে। এছাড়া বৃষ্টির কারণে সরবরাহ কমেছে। এসব কারণে চালের দাম কিছুটা বেড়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বেশি দামে কিনলে কম দামে বিক্রি করব কীভাবে?’ কত দামে কিনেছেন, মেমো আছে কি না জানতে চাইলে এরশাদ আলী বলেন, ‘আমরা মেমো আনি না।’
হঠাৎ চালের দাম বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী বলেন, ‘রাজধানীর বাজারে চালের দাম বাড়ার বিষয়টি আমার কানেও এসেছে। কিন্তু চালের মোকাম হিসেবে পরিচিত উত্তরবঙ্গের নাটোর, নওগাঁ, জয়পুরহাটে চালের দাম মোটেই বাড়েনি। এ সময় চালের দাম বাড়ার কোনো কারণও নেই। তারপরও কেন রাজধানীর বাজারে চালের দাম বেড়েছে, তা আমার বোধগম্য নয়।’
লায়েক আলী আরও বলেন, ‘সরকারের অনেক মন্ত্রণালয় এবং সংস্থা বাজার মনিটরিংয়ে জড়িত। কাজেই এসব মন্ত্রণালয় ও সংস্থা যদি ঠিকমতো বাজার মনিটরিং করে তাহলে এমন পরিস্থিতি হতো না।’
এক প্রশ্নের জবাবে লায়েক আলী বলেন, ‘পরিবহন খরচও সেভাবে বাড়েনি। কাজেই এমন অজুহাতও গ্রহণযোগ্য নয়। তারপরও বলব, যদি পরিবহন খরচ বাড়ে সে কারণে প্রতিকেজি চালের দাম বাড়তে পারে সর্বোচ্চ ২৫ পয়সা। এর বেশি নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘নওগাঁ বা জয়পুরহাটে যে চাল আমরা ২৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি, সেই চাল রাজধানীতে কী কারণে ৩৭ টাকায় বিক্রি হয়? আর কুষ্টিয়ায় বিক্রি হওয়া ৪৪ টাকা কেজি দরের মিনিকেট চাল রাজধানীতে কী করে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়?’
এদিকে জানতে চাইলে বাবুবাজার-বাদামতলী চাল আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও লক্ষ্ণী ভান্ডারের মালিক মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘খুচরা বাজারে চালের দাম বাড়ার কোনো কারণ আমার জানা নেই। চালের দাম বাড়ার বিষয়টি আমার বোধগম্য নয়। পাইকারি পর্যায়ে আমরা দাম বাড়াইনি। খুচরা বাজারে তো আমাদের কোনো হাত নেই।’
বাংলাদেশ ট্রাক মালিক সমিতির (সায়েদাবাদ) সদস্য রমজান আলী বলেন, ‘বগুড়া, নওগাঁ বা জয়পুরহাট থেকে ঢাকায় ট্রাক ভাড়া আগের মতোই আছে। চালের দাম কেন বেড়েছে তা আমরা জানি না। আমরা দেশের কোনো অঞ্চলের ট্রাক ভাড়া বাড়াইনি। এছাড়া ট্রাক ভাড়া বাড়ানো বা কমানোর বিষয়টি কারও হাতে নেই। চাহিদার ওপর নির্ভর করে ট্রাক ভাড়া বাড়ে-কমে।’
এ বিষয় জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে সরকারের মনিটরিং টিম কাজ করছে।’ কারসাজি করে কেউ চালের দাম বাড়ালে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১৯:১৭:২৮ ৭১৫ বার পঠিত #চাল #দাম বৃদ্ধি