বঙ্গ-নিউজঃ পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার ডোকলাখালীতে বাস করেন নুরুন্নাহার আক্তার। তিন ছেলেমেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে তাঁর পাঁচজনের পরিবারে সব ধরনের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ হচ্ছে সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে।
তিনি বলছিলেন, সরকারিভাবে সরবরাহকৃত বিদ্যুৎ বেশিরভাগ সময় থাকেনা বললেই চলে।
‘আমাদের গ্রামাঞ্চল তো, কোন সময় বিদ্যুৎ পাঁচদিন থাকে, আবার কোন সময় তিনদিনও থাকে। কারেন্টের চেয়ে অনেক সুবিধা পাইতেছি সোলার পাওয়ারে। কারেন্টে মাসে মাসে বিল দিতে হয়। কিন্তু এটা তো একবারে কেনা যায়। তারপর অনেক দিন থাকে’।
নুরুন্নাহার আক্তার বলছিলেন বাড়িতে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ-এর সংযোগ থাকা সত্ত্বেও তা তিনি ব্যবহার করেন না।
২০০৭ সালে প্রথম সৌর বিদ্যুতের একটি প্যানেল কিনেছিলেন। বাড়ির চালে বসানো সৌর বিদ্যুতের প্যানেল থেকে এখন তার বাড়িতে পাঁচটি বাতি ও একটি ফ্যান চলে।
প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে স্থাপিত একটি সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আজ জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হচ্ছে।
সরকারের ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড-এর তথ্যমতে, বাংলাদেশে গ্রামাঞ্চলে ৬০ লাখের বেশি গৃহস্থালিতে ইতিমধ্যেই সৌর বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ব্যবহৃত হচ্ছে।
বাংলাদেশে এমন পটভূমিতে এই প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে স্থাপিত একটি সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আজ জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হচ্ছে। রাঙামাটির কাপ্তাই-এ অবস্থিত এই সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বুধবার উদ্বোধন করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বর্তমান সরকারের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ। সেই উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারমানবিক ও কয়লাসহ নতুন জ্বালানি ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলছিলেন সৌর বিদ্যুৎের ক্ষেত্রে কী পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে সরকার।
তিনি বলছেন, ‘আমরা ২০৪১ সাল পর্যন্ত কোথা থেকে কিভাবে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করবো তার একটি চিত্র আমাদের রয়েছে। যদি ৪১ সালকে ধরি, ওই সময়ে আমরা সব মিলিয়ে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চাই। আমাদের টার্গেট হল ২০২১ সালে ২৪ হাজার মেগাওয়াট। তার দশ শতাংশ সৌর বিদ্যুৎ থেকে উৎপাদন করবো।’
যে সমস্ত অঞ্চলে জাতীয় গ্রিড লাইন নেই সেখানকার কথা মাথায় রেখে এটি করা হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
পার্বত্য জেলা রাঙামাটির কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকায় ১৯ একর জায়গা নিয়ে এই সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অবস্থান যাতে প্যানেলের সংখ্যা ২৪ হাজারের মতো। প্রায় সাড়ে সাত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে কেন্দ্রটি। দেশে বেসরকারি সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইতিমধ্যেই আরো কয়েকটি রয়েছে।
কিন্তু প্রতিমন্ত্রী নিজেই বলছেন গৃহস্থালির বাইরে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন বা জাতীয় গ্রিডে দেয়ার জন্য যে সংখ্যক প্যানেল বসাতে হয় তাতে প্রচুর জমি দরকার।
বাংলাদেশে এমনিতেই কৃষি জমির সংকট রয়েছে। সেই সাথে বাংলাদেশে জমির দামও অনেক বেশি।
তবুও সৌর বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে ক্ষেত্রে প্রচুর সম্ভাবনা দেখছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শক্তি ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক সাইফুল হক।
তিনি বলছেন, ‘আমাদের জমির দামটা একটু বেশি। কিন্তু সরকার যদি এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনের জন্য ১০০ বা ২০০ টা জায়গা করে দিতে পারে তাহলে এনার্জি প্রসেসিং জোনের জন্য এরকম দশটা, বিশটা, পঞ্চাশটা জায়গা করে দেয়, তাহলে জমির খরচ কমে আসবে। তখন দাম আর বিষয় থাকে না এবং সেটা করা সম্ভব।’
তিনি বলছেন, বাংলাদেশে এখনো অনেক অব্যবহৃত জমি রয়েছে। সেগুলো কাজে লাগানো যেতে পারে।
তার নমুনা হিসেবে তিনি বলছেন, জমির সংকট কাটাতে বিভিন্ন জল বন্দর, বিমান বন্দর, ক্যান্টনমেন্টে খালি পরে থাকা অব্যবহৃত জমির কথা টানলেন তিনি। ভবনের ছাদেও প্রচুর পরিমাণে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
‘বাংলাদেশে সরকারি ক্ষেত্রে রক্ষণাবেক্ষণকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়না। সেজন্য যথেষ্ট বাজেট রাখা হয়না। সরকারি ক্ষেত্রে দায়িত্বে অবহেলারও প্রবণতা রয়েছে।’
তবে অধ্যাপক হক বলছেন সৌর বিদ্যুতের জন্য সূর্যের আলো সবচেয়ে বেশি আহরণ করতে প্যানেলগুলোকে পরিচ্ছন্ন রাখা ও যত্নের সাথে রক্ষণাবেক্ষণ খুব দরকার। সেটি সরকারকে মাথায় রাখতে হবে। সূত্র : বিবিসি
বাংলাদেশ সময়: ২৩:০৯:২৩ ৬০৭ বার পঠিত #বিদ্যুৎ #বিদ্যুৎ চাহিদা #সৌর-বিদ্যুৎ