হাসুস’র শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ ওমর ফারুকী শিপনের “ আজ চরিত্রবান ব্যক্তির বড়ই অভাব”

Home Page » সাহিত্য » হাসুস’র শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ ওমর ফারুকী শিপনের “ আজ চরিত্রবান ব্যক্তির বড়ই অভাব”
শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯



বিষয় : প্রবন্ধ।

লেখকের নাম : ওমর ফারুকী শিপন।

 

আজ চরিত্রবান ব্যক্তির বড়ই অভাব৷

 

চারপাশে এখন শুধু ক্ষমতার প্রদর্শন চলছে। হঠাৎ ক্ষমতা পাওয়া লোকগুলো নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা ভুলে ক্ষমতার অপব্যবহার করছে।তারা হয়ত জানে না ক্ষমতা একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে। প্রবল ক্ষমতাধর অগনিত সম্রাটরা আজ শুধু ইতিহাসের পাতায় সীমাবদ্ধ, প্রবল ক্ষমতাশীল হিটলারকে আজো মানুষ ঘৃনাভরে স্মরন করে। তবে সৎ চরিত্রবান ব্যক্তিরা যুগে যুগে সম্মানের সহিত বেঁচে থাকেন মানুষের অন্তরে।

তবে আফসোস আমার চারপাশে তাকিয়ে দেখি আজ চরিত্রবান ব্যক্তির বড়ই অভাব।

 

খুব অল্প বয়সে যখন আমরা স্লোগান দিতাম,” অমুক ভাইয়ের চরিত্র ফুলের মত পবিত্র।”তখন সৎচরিত্র বলতে মনে করতাম ভার্জিনিটি। নারী পুরুষ বিবাহ বর্হিভূত অবৈধ মেলামেশা করলেই চরিত্র নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু আস্তে আস্তে পড়ালেখা করার মাধ্যমে চরিত্র কি বুঝতে পেরেছি আর মনে মনে হেসেছি।কত বোকাই না ছিল সেই বয়সে।

 

সৎচরিত্র বলতে নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা। অন্যকে কষ্ট না দেওয়া, ঘুষ না খাওয়া, সুদকে ঘৃনা করা। অর্থাৎ সমস্ত মানবীয় গুনাবলী যার মধ্যে বিদ্যমান তাকে সৎচরিত্রবান বলে। বর্তমানে ব্যাংক গুলির অর্থ কেলেঙ্কারি দেখে ব্যথিত হই।যদি সৎ ও চরিত্রবান ব্যক্তিরা ব্যাংক গুলোর দায়িত্বে থাকত তাহলে এত অর্থ কেলেঙ্কারির খবর শুনতে হত না।

 

আগে জানতাম লেখাপড়া যারা করে তাদের সামনে অজ্ঞতার দরজাগুলি খুলে যায়।তারা সৎ চরিত্রবান হয়ে থাকেন।তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব তারা যথাযথভাবে পালন করেন।অথচ তারাই আজ পথভ্রষ্ট। ঘুষ,দূর্নীতি অর্থ কেলেঙ্কারিতে তারাই জড়িত।তারমানে ঘুষখোর ও দূর্নীতিবাজরা যথাযথ শিক্ষা লাভ করতে পারেনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে।লেখাপড়া করে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে তারা পৌঁছতে ব্যর্থ।

 

বর্তমানে চারপাশে তাকিয়ে দেখি অভিভাবকরা হাজার হাজার টাকা খরচ করে সন্তানদের হাতে প্রশ্নপত্র তুলে দিয়ে জীবনের শুরুতেই কোমলমতি ছেলেমেয়েদের চরিত্র নষ্ট করে দিচ্ছেন। এই সমস্ত ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে অভিভাবকরা কি আশা করতে পারেন? এরা বড় হলে সবচেয়ে বড় দূর্নীতিবাজ, ঘুষখোর হয় তাতে অবাক হব না। এদের দ্বারা জাতির কোন উপকার না হলেও পরিবারের উপকার ঠিকই হবে।

 

বর্তমানে আমাদের প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থ উপার্জন করা, সুন্দর একটি বাড়ি করা, গাড়ি করা। আর এই অর্থ উপার্জন করতে গিয়ে আমরা নিজের অজান্তেই অবৈধ পথে পা বাড়াই।এইজন্যই পন্ডিত ব্যক্তিরা বলেন,

শুধু অর্থ সম্পদ অর্জনই জীবনের উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ নয়। অন্যায় ও অসৎ পথে অর্থ উপার্জন করে কি লাভ? যে অসৎ পথে অর্থ উপার্জন করে তার মধ্যে আর পশুর মধ্যে পার্থক্য রইল কোথায়?? ন্যায় ও সৎ পথে উপার্জনকারী ব্যক্তি সকলের সম্মান পেয়ে থাকে।

 আমি মহাপুরুষদের জীবনী পড়ে দেখেছি তারা সবাই ছিলেন সৎচরিত্রের অধিকারি।তাদের সৎচরিত্রের কারনে সাধারণ মানুষ মুগ্ধ হয়ে তাদেরকে মহাপুরুষের আসনে বসিয়েছে।

 

মিথ্যা বলা পরিহার করা, অসৎ পথে উপার্জন না করা, অন্যের ক্ষতিসাধন না করা, ঘুষ না খাওয়া,সুদের ব্যবসা না করা,মাদক থেকে দূরে থাকা, অন্যের দুর্নাম না করা সহজ কাজ নয়। তার জন্য নিজের মনের বিরুদ্ধে নিজেকে বিদ্রোহ করতে হয়। নিজের মনকে বহুকষ্টে শাসন করতে হয়। যে নিজের মনকে শাসন করতে পারে তার দ্বারা অন্যের ক্ষতি হতে পারে না।তারাই জগতে মহামানবের আসনে অধিষ্ঠিত হন।

 

আচ্ছা অন্যকে ঠকিয়ে টাকা উপার্জন করে কি লাভ? নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য অবহেলা করে কি লাভ? ঘুষ, সুদের টাকা ধর্মীয় উপাসনালয় দান করে কি লাভ? অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থ দিয়ে পরিবারের ভরণপোষণ করে কি লাভ? অন্যকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে কথা বলে কি লাভ? নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলেই উওর পাওয়া যাবে।

 

নিজাম উদ্দিন আউলিয়া ডাকাতি ও খুন করে সংসারের ভরণপোষণ করতেন। একবার তিনি তার পরিবারের সবাইকে ডেকে বলেছিলেন, আমি অবৈধ পথে অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জন করে তোমাদের ভরণপোষণ করি তোমরা কি আমার পাপের ভাগিদার হবে? সবাই এক বাক্যে বলেছিল, “না আমরা ভাগিদার হবে কেন? তুমি কিভাবে অর্থ উপার্জন করো তা আমাদের দেখার বিষয় নয়। সংসারের কর্তা হিসেবে তোমার দায়িত্ব আমাদের ভরণপোষনের খরচ দেওয়া।” তারপরের ইতিহাস সবার জানা আছে নিজাম উদ্দিন বড় আউলিয়া হয়ে উঠেন।

 

কিছু কিছু লোকের গায়ে ভদ্রলোকী পোশাক কিন্তু তারা অফিসে গিয়ে টেবিলের নিচে টাকা ছাড়া ফাইল সাইন করেন না। তাই বলা যায় ভদ্রলোক মানেই চরিত্রবান না কিন্তু চরিত্রবান মানেই ভদ্রলোক।

 

আমার পাশে একজন দিনমজুর এসে দাঁড়াল তার শরীর ঘর্মাক্ত, আমি নাক না ছিটকিয়ে তাকে যদি বসার জায়গা করে দেই কিংবা এক গ্লাস পানি এগিয়ে দেই তাহলেই আমার সৎচরিত্র অন্যের চোখে পড়বে এতে আমার জাত যাবে না।

 

ড. লুৎফর রহমান বলেন, “অপরের জন্য তুমি প্রান দাও আমি বলতে চাইনে। অপরের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দু:খ তুমি দূর কর,অপরকে একটুখানি সুখ দাও। অপরের সঙ্গে একটুখানি মিষ্টি কথা বল। পথের অসহায় মানুষটির দিকে একটু করুন কটাক্ষ নিক্ষেপ কর - তাহলেই হবে।”

 

চরিত্রবান ব্যক্তিরা সব সময় ন্যায়ের পথে থাকেন। তাদের দ্বারা কোন অন্যায় হতে পারে না। তারা অর্থের নিকট নিজেকে বিক্রি করে দেন না। কিন্তু পরিতাপের সঙ্গে বলতে বলতে হয় আজকাল চরিত্রবান ব্যক্তির বড়ই অভাব।

 


বাংলাদেশ সময়: ১৩:৩৬:২৬   ৮৯৫ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

সাহিত্য’র আরও খবর


সাধক কবি রামপ্রসাদ সেন: স্বপন চক্রবর্তী
ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা “আমি তো গাঁয়ের মেয়ে ”
৫০ বছরের গৌরব নিয়ে জাবির বাংলা বিভাগ বিশাল ‘সুবর্ণ জয়ন্তী’ উৎসব আয়োজন করেছে
অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা- ‘তোমার খোঁজে ‘
অতুলপ্রসাদ সেন: ৩য় (শেষ ) পর্ব-স্বপন চক্রবর্তী
অতুলপ্রসাদ সেন;পর্ব ২-স্বপন চক্রবর্তী
অতুলপ্রসাদ সেন-স্বপন চক্রবর্তী
অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা ” যাবে দাদু ভাই ?”
বাদল দিনে- হাসান মিয়া
ইমাম শিকদারের কবিতা ‘ছোট্ট শিশু’

আর্কাইভ