বন্ধু
আবু তালহা বিন মনির
গভীর রজনী!!!
কোথাও কোনো প্রাণের সাড়া নেই ।ঝি ঝি পোকা গুলোও ডাকতে ডাকতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।
চারদিকে পনপন নিরবতা ।হঠাৎ বুকের বামপাশটা কিভেবে চিনচিন করে উঠল।খুব জোড়ে আঘাত করল ।বুঝতে চেষ্টা করলাম কেন এমন হলো ।
কিন্তু না।কোনো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না ।
আবারও চেষ্টা করলাম ।কিন্তু তাও ব্যর্থ ।
হঠাৎ একটি নীল জোনাকি পোকা উড়ে এসে নাকে বসল।চমকে উঠলাম ।গভীর এ রজনীতে আমি ব্যতীত যখন সবাই গভীর নিদ্রায় তখন এটা কোথা থেকে আসলো !
ধরে নিলাম আমি যে পথের যাত্রী,সেও হয়তো এই পথেরই পথিক।গভীর এ রজনীতে তারও হয়তো আমারি মতো অবস্থা হয়েছে ।তাই হয়তো উড়তে উড়তে চলে এসে আমাকে সঙ্গ দেবার জন্য ।
নীল আলোটা দেখে আমার নাক-মুখে হাসির রেখা ফুটল।এমনিতেই নীল ভালবাসি।তাও যদি গভীর রজনীতেই সেই ভালবাসার রঙটাই সঙ্গ দিতে আসে তাহলে আনন্দের শেষ কোথায়?
নাকের ডগা থেকে তাঁকে হাতের তালুতে নিয়ে আসলাম ।দু- চোখ খুলে দেখতে লাগলাম ।চারদিকে অন্ধকার ।তাই নীল রঙটা খুব উদ্ভাসিত দেখাচ্ছিল ।
অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি পোকাটির দিকে।
অল্পসময়ের মধ্যেই তার সাথে ভাব জমে উঠে।তার সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেল।ব্যস,চলতে থাকে আমাদের গল্প ।প্রথমে আমি থাকে অনেক মজার মজার গল্প শোনাই।কারণ,সে প্রথমেই বায়না ধরেছিল আমি আগে তাঁকে গল্প শোনাব ।তারপর সে আমাকে শোনাবে।নতুন বন্ধুত্ব বলে না করতে পারলাম না ।আমার গল্প শুনে সে অনেক হেসেছিল ।এবার তার পালা।
সে শুরু করেছে তার গল্প ।তার জীবনের গল্প।কতটা কণ্টকময় পথ পাড়ি দিয়ে সে এখানে এসেছে ।প্রতিটি ধাপে ধাপে তার প্রতি অন্যের প্রতি হিংসা কতটুকু ছিল তা বলে যাচ্ছে ।সে কতটুকু অবহেলার স্বীকার হয়েছে।
সে বলে যাচ্ছে-
সে বলে যাচ্ছে আমি ক্লান্ত নই,
আমি এক উদ্যমী পথিক।
অবহেলা আমায় দুঃখ দেয়নি,
শিখিয়েছে এগিয়ে যেতে ।
অযোগ্যতা আর অজ্ঞতা,
আমায় হারতে শিখায়নি।
নতুন কিছু শিখতে দিয়েছে।
একাকিত্ব আমায় ঘ্রাস করেছে,
দিয়েছে নিজেকে উপভোগ করার সুযোগ ।
ব্যর্থতা আমায় থামিয়ে রাখেনি,
দেখিয়েছে সফলতার পথ।
আর আমার সরলতা ,
আমায় নিচু করেনি।
দিয়েছে সবার সম্পর্কে জানার সুযোগ ।
শেষ করে ফেলল তার গল্প ।আমি তখনো তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।খেয়ালই করিনি কখন তার গল্প বলা শেষ হয়েছে।
হঠাৎ অনুভব করতে পারলাম সে আবারও আমার নাকে উড়ে বসেছে ।আমি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসলাম ।
পরক্ষণেই সে বিদায় নিল।বলে গেল আবার দেখা হবে বন্ধু ।
উড়ে উড়ে চলে যেতে লাগল ।আমি অবাক দৃষ্টিতে তার উড়ে চলা দেখছি।হঠাৎ যেন মনে হলো- আমি তাঁকে কি একটা কথা বলব।তাই বন্ধু বলে তাঁকে ডাক দিতে যাই।
যেই মাত্র ডাক দিব,সাথে সাথে ঘুম ভেঙে যায় ।
ঘুম ভাঙতেই নিজের প্রতি একটু রাগ হলো ।কেনই বা ডাক দিতে গেলাম ।পরেও তো বলতে পারতাম।সে তো বলেই গেছে- আবার দেখা হবে বন্ধু ।
মন খারাপ করে আবার ঘুমোতে গেলাম ।কিন্তু ঘুম আসছিল না।বারবার বন্ধুর কথাই মনে পড়ছিল ।মনে পড়ছিল ভালবাসার নীল রঙটার কথা ।
আর ভাবছিলাম বন্ধুর সাথে আবার দেখা হবে কি না।আবারও এসে আমাকে তার জীবনের গল্প শোনাবে কিনা।আমি আশা ছাড়িনি।আবারও বন্ধুর সাথে দেখা হবে এই প্রত্যাশা নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম ।আশা ছাড়িনি একারণেই-বন্ধু তো বলে গেছে আবার দেখা হবে ।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:৩০:২২ ৭১৪ বার পঠিত