বঙ্গ-নিউজঃ তিন সপ্তাহ ধরে ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে পৃথিবীর বৃহৎ রেইন ফরেস্ট আমাজন। ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ হিসেবে পরিচিত এই বনে রেকর্ড মাত্রার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করছে পুরো বিশ্ব।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, দাবানলের ধোঁয়ার কুণ্ডলীতে ২৭০০ কিলোমিটার দূরের ব্রাজিলের সাও পাওলোর আকাশও ছেয়ে গেছে। দিনের বেলাতেও শহরটিতে নেমে এসেছে অন্ধকার। পার্শ্ববর্তী দেশ পেরুর আকাশেও হানা দিয়েছে দাবানলের ধোঁয়া।
ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘ইনপে’-র সমীক্ষা বলছে, পৃথিবীর ২০ শতাংশ অক্সিজেন সরবরাহকারী আমাজন বনে এ বছর ৭২ হাজার ৮৪৩টি দাবানলের ঘটনা ঘটেছে। গত বছরের এই সময়ের তুলনায় যা ৮৩ শতাংশেরও বেশি, যা আগের সব রেকর্ডকে ছাপিয়ে গেছে।
আমাজনের এই দুরবস্থার জন্য ব্রাজিল সরকারকে দায়ী করছেন পরিবেশ সংরক্ষণবাদীরা। তাদের মতে, ব্রাজিলের কট্টর ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট জায়ের বোলসোনারো কাঠুরে ও কৃষকদের ভূমি সাফ করাকে উৎসাহিত করেছেন।
দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন নদের পাশে প্রায় ৫৫ লাখ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে উঠেছে সুবিশাল এই রেইন ফরেস্ট। জানা-অজানা নানা আদিবাসী গোষ্ঠীর বাসস্থান এই আমাজন জঙ্গলে রয়েছে ১৬ হাজার প্রজাতির গাছগাছালি।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতি মিনিটে একটি ফুটবলের সমান উজাড় হচ্ছে আমাজন। বন উজাড় হওয়ার পেছনে দায়ী করা হচ্ছে ইচ্ছাকৃতভাবে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডকে। এতে ধ্বংস হচ্ছে প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য ও পশুপাখি।
কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারিতে ক্ষমতায় আসার আগে আন্তর্জাতিক হুঁশিয়ারির তোয়াক্কা না-করেই আমাজন অঞ্চলকে চাষ ও খনিজ উত্তোলনের কাজে ব্যবহারের কথা বলেছিলেন তিনি।
এ দিকে বোলসোনারোর দাবি, অহেতুক দোষারোপ করা হচ্ছে তাকে। আগুনের জন্য স্থানীয় চাষিদের দায় দেন তিনি। এমনকি ইনপে’র পরিসংখ্যানকে ‘ভুয়া’ বলে উড়িয়ে দিয়ে এর ডিরেক্টরকেও সম্প্রতি বরখাস্ত করেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট।
এ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার উপগ্রহ চিত্রেও ধরা পড়েছে আমাজনে ঘটতে থাকা ৯৫০৭টি নতুন দাবানলের চিত্র। আমাজনের আগুনের তীব্রতার ছবিও পাঠাচ্ছে নাসার একাধিক স্যাটেলাইট।
বছরের বেশির ভাগ সময় বৃষ্টি থাকা এই অঞ্চলে জুলাই-আগস্ট মাসে কিছুটা শুষ্ক হয়ে ওঠে। তবে স্থানীয় পরিবেশবিদদের ধারণা, প্রাকৃতিক ভাবে এই আগুন লাগেনি।
ব্রাজিলের ফেডারেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের একাংশ বলছেন, শুকনো বাতাসে দাবানল জ্বলে ওঠা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে এবারের দাবানল প্রাকৃতিক কারণে নয় বলে তাদের ধারণা।
গবেষকদের মতে, অনেক সময় চাষের জন্য জমি বা খামার তৈরি করতে ইচ্ছাকৃতভাবে জঙ্গলে আগুন ধরিয়ে দেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। এটিকে দাবানলের কারণ হিসেবে ধারণা তাদের।
আবার কোনো গবেষকেরা এই কারণকে উড়িয়ে দিয়েছেন। কারণ আমাজনে জঙ্গলে এনজিওগুলো আগুন ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করে থাকে স্থানীয়দের। এ ব্যাপারে তারা বেশ সচেতন।
আমাজন শুধু প্রকৃতি আর জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ নয়, খনিজ পদার্থেরও বড় ভান্ডার এই বিশাল বনভূমি। খনিজ পদার্থ অন্বেষণের জন্য আমাজন অরণ্যে লাগাতার জঙ্গল সাফ করে খনন কাজ চালানো হয়।
প্রতি মিনিটে একটি ফুটবল মাঠের মাপের জঙ্গল কাটা হয় আমাজনে। ফলে স্বল্প বৃষ্টিপাতও সেখানে আগুন লাগার অন্য একটি কারণ হতে পারে বলে ধারণা করছেন জলবায়ু বিজ্ঞানীদের একাংশ।
দাবানলের কারণ সম্পর্কে এখনো কোনো নিশ্চিত তথ্য পাওয়া না গেলেও কার্বন ছাঁকনি হিসেবে পরিচিত চিরহরিৎ ওই জায়গা যে এই ঘটনার পর তার কার্যক্ষমতা হারাবে সে বিষয়ে নিশ্চিত প্রায় সমস্ত গবেষক।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:৪০:৩১ ৪৫৮ বার পঠিত #আমাজন #আমাজন জঙ্গল #দাবানল