বঙ্গ-নিউজঃ নাড়ির টানে গ্রামের বাড়ি ছুটতে শুরু করেছে মামুষ। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঘরমুখো হাজার হাজার মানুষের স্রোত এখন দুই প্রধান ফেরিঘাট শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী ও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায়। তাদের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। শুক্রবার ভোর থেকে এ দুই ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় ছিল শত শত যাত্রীবাহী যান। পশ্চিম প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা পশুবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। পদ্মা পারাপারে ছোট-বড় নৌযানেও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের তৎপরতার মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হচ্ছে।
সরেজমিন শুক্রবার শিমুলিয়া ঘাটে দেখা গেছে, ঈদ ঘরমুখো যাত্রীরা প্রচণ্ড গরমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছে। বৈরী আবহাওয়ায় গত দু’দিন পদ্মায় উত্তাল ঢেউ ও তীব্র স্রোত থাকায় ফেরি চলাচল ব্যাহত হয়। শুক্রবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় একটু সময় লাগলেও ফেরি চলাচলে কোনো সমস্যা হয়নি। তবে গত দু’দিনের চাপ এসে পড়েছে শিমুলিয়া ঘাটের এক, দুই ও তিন নম্বর ঘাটে। সেখানে ফেরি পারাপারে যানবাহনের লম্বা সারি। ফেরি পারাপারে অপেক্ষায় থাকা ঢাকা থেকে খুলনাগামী মাসুদ আহমেদ বলেন, মা-বাবার সঙ্গে ঈদ করতে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে যশোর যাচ্ছি। ঘাট এলাকায় এসে এখনও ফেরিতে উঠতে পারিনি। তাদের মতো শত শত ছোট যানবাহন গতকাল দিনভর ঘণ্টার পর ঘণ্টা পারের অপেক্ষায় ছিল।
বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. নাসির জানান, শুক্রবার ভোর থেকেই যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বাড়তে শুরু করেছে। দুপুরে ঘাট এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে আট শতাধিক যানবাহন পারের অপেক্ষায় রয়েছে। চারটি রো রো-সহ ১৭টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, একসঙ্গে গাড়ি আসতে শুরু করায় ফেরিতে লোড-আনলোড করতে একটু সময় লাগছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার ছোট গাড়ি পার করা হয়েছে। যাত্রীবাহী যানবাহনগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপারে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
লৌহজং থানার ওসি আলমগীর হোসাইন জানান, লঞ্চ ও স্পিডবোট ঘাটেও যাত্রীর বাড়তি চাপ দেখা দিয়েছে। তবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। ঢাকা আরিচা মহাসড়ক ও পাটুরিয়া ঘাটে দেখা গেছে, মহাসড়কে সকাল থেকে ধীরগতিতে চলছে গাড়ি। মাঝে মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই স্থানেই আটকে থাকে যানবাহনগুলো। সারাদিন এমন চিত্র দেখা গেছে উথলী মোড় থেকে মানিকগঞ্জ পর্যন্ত। পাটুরিয়া ঘাটে কথা হয় সাতক্ষীরাগামী বাসের যাত্রী আব্দুল মোমিনের সঙ্গে। তিনি জানান, গাবতলী থেকে পাটুরিয়া ঘাটে আসতে তাদের সময় লেগেছে ৭ ঘণ্টা।
ঈদে ঘরমুখো চৌধুরী মহিবুল ইসলাম জানান, তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মাইক্রোবাসে করে ঢাকা থেকে পাটুরিয়া ঘাটে এসেছেন ৮ ঘণ্টায়। সড়কে শৃঙ্খলা না থাকায় এবার ঈদে যাত্রীদের ভোগান্তি হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।
এদিকে ঘাট এলাকায় যানজট কমানোর জন্য কর্তৃপক্ষ পাটুরিয়া লঞ্চ ও ফেরিঘাট এলাকা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ট্রাক টার্মিনালে কাটা লাইনের যাত্রীদের বাস থেকে নামিয়ে দেওয়ায় তারা আও দুর্ভোগে পড়ে। কেউ হেঁটে কেউ ১০ টাকার পথ ৮০ থেকে একশ’ টাকা দিয়ে রিকশায় করে যাচ্ছে। জেলা পুলিশ সুপার রিফাত রহমান শামীম জানান, পাটুরিয়া ঘাটে কোনো ভোগান্তি নেই। তবে মহাসড়কে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে কিছুটা দুর্ভোগে পড়েছে যাত্রীরা।
এদিকে পাটুরিয়া লঞ্চ ঘাটে দুপুরের পর থেকে যাত্রীর প্রচণ্ড ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ভিড় সামলাতে দায়িত্বরতদের হিমশিম খেতে হয়। দুপুর ১টার দিকে লঞ্চ ঘাটে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে পন্টুন থেকে পড়ে যান আলাউদ্দিন নামে এক যাত্রী। তার বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলায়। সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা নদীতে নেমে ছয় মিনিটের মধ্যে তাকে উদ্ধার করেন।
বিআইডব্লিউটিসি আরিচা ঘাটের ডিজিএম আজমল হোসেন জানান, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে ফেরির সংখ্যা বড়িয়ে ২০টি করা হয়েছে। ফলে যানবাহন পারাপারে কোনো ভোগান্তি হচ্ছে না।
ভোগান্তি আছে পদ্মার অন্য প্রান্ত দৌলতদিয়া ঘাটেও। ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে মহাসড়কের দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় যাত্রীবাহী বাস এবং দৌলতদিয়া মডেল হাইস্কুল পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এলাকায় কোরবানির পশুবাহী ট্রাক সিরিয়ালে আটকা পড়েছে।
গরু ব্যবসায়ী লিটন শেখ জানান, ফেরির নাগাল পেতে প্রতিটি যানবাহনকে দুই থেকে তিন ঘণ্টা আটকে থাকতে হচ্ছে। রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ঘাটের নিরাপত্তায় ২৬০ জন পুলিশ সদস্য কাজ করছেন। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পণ্যবাহী ট্রাক। শুধু যাত্রীবাহী বাস ও কোরবানির পশুবাহী ট্রাক পারাপার করায় কমতে শুরু করেছে যানজট।
বাংলাদেশ সময়: ১০:৫৪:৩৬ ৫৪১ বার পঠিত #ঈড #ঈদ-উল আজহা #ঈদযাত্রা #ফেরিঘাট