বঙ্গ-নিউজঃ সারাদেশে বন্যার পানি কোথাও বাড়ছে আবার কোথাও কমতে শুরু করেছে। বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও রেল ও সড়ক পথের অবস্থা খুবই নাজুক। কোথাও কোথাও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এছাড়াও কিছু জায়গায় পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। খাদ্য সামগ্রীর অভাবে মানুষের কষ্ট চরমে।
জামালপুরের বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বন্যার পানি কমতে শুরু করায় ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় জেগে উঠেছে রেল ও সড়ক পথ। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে জেলাবাসী। বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী পৌছাঁতেও কঠিন হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ, জামালপুর-তারাকান্দি রেলরুটে লাইনের পাথার ও মাটি সরে যাওয়ায় ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ, সরিষাবাড়ী-তারাকান্দী ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বিভিন্ন জেলায় ১০.৭৫ কিলোমিটার পাকা রাস্তা সম্পূর্ণ ও ৬০.৫০ কিলোমিটার আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ১৭.২৫ কিলোমিটার কাচাঁ রাস্তা সম্পূর্ণ ও ২০০ কিলোমিটার আংশিক ক্ষতিগ্রস্তসহ ২৮ টি ব্রিজ-কালভার্ট এবং প্রায় ২১ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রেলের সহকারী প্রকৌশলী (জামালপুর) কামরুজ্জামান বলেন, সপ্তাহ খানেকের মধ্যে ট্রেন চলাচল উপযোগী করার চেষ্টা চলছে।
জামালপুরের ইসলামপুরে যমুনার পানি এখনো বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বিপদসীমার ১২৬ সেন্টিমিটার কমায় ইত্যেমধ্যে জেগে উঠেছে ইসলামপুরের মাটি। বন্যায় ১২ ইউনিয়ন ও পৌর সভার ৯০ শতাংশ রাস্তাঘাট-ঘরবাড়ি ধ্বংস্তুপের পরিণত হয়েছে।
বন্যায় সরকারি হিসাবে পাঁচ হাজার ৯০৫টি কাঁচাপাকা ঘরবাড়ি, ৬৪৫ কিলোমিটার রাস্তা, ১০ কিলোমিটার বাঁধ, ৫৫টি ব্রিজ-কালভার্ট ধ্বংসস্তুপের পরিণত হয়েছে। ছয়জন মানুষ, ১৯ হাজার ৬৫০ টি হাঁস-মুরগী ও ২০ হাজার ৪০০ গরু-মহিষের মৃত্যু হয়েছে। পানিতে ভেসে গেছে এক হাজার ২৭৩টি পুকুরের মাছ। ছয় হাজার ২০৫ হেক্টর জমির ফসল, ২৬ হাজার ৯১০টি লেট্রিন ও চার হাজার ৭৬১টি নলকূপ। নিঃস্ব হয়েছেন ৩৬ হাজার ৩৬০ পরিবারের এক লাখ ৮১ হাজার ৮০০ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । এসব মানুষ ২৬টি আশ্রয় কেন্দ্রসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
গাইবান্ধার সব কটি নদীর পানি কমতে শুরু করলেও ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি এখনও বিপদসীমার ওপরে। গাইবান্ধায় বন্যা কবলিত এলাকার রাস্তা-ঘাটের বেহাল দশা। শহর রক্ষা বাঁধসহ ৮টি বাঁধ বন্যার পানির প্রবল বেগে ভেঙ্গে যাওয়ায় কাচা রাস্তাসহ পাকা রাস্তা পানির নষ্ট হয়ে গেছে।
গাইবান্ধা এল.জি .ই.ডির সিনিয়র অফিসার আহসান হাবীব প্রতিবেদককে জানান, জেলার চারটি উপজেলায় প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার পাকা রাস্তা নষ্ট হয়ে গেছে। এ গুলো মেরামত করতে প্রয়োজন ৭৫ কোটি টাকা । ঈদের আগে কোন রাস্তাই মেরামত বা সংস্কার করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এদিকে গাইবান্ধার আপ স্টেশন ত্রিমোহিনী-বাদিয়াখালী-বোনারপাড়া পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ফুট রেলের মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে গত ১৬ জুলাই মঙ্গলবার থেকে একটানা ১২ দিন যাবত লালমনিরহাট-সান্তহার রুটে রাজধানী ঢাকার সাথে সরাসরি ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। উত্তরাঞ্চলের রেল যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বর্ষার শুরুতে বাড়তে শুরু করেছে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার আরিচা পয়েন্টের যমুনা নদীর পানি। বিদপসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় কয়েক দিন। তবে কয়েকদিনের ব্যবধানে দ্রুত গতিতে কমতে শুরু করলেও ফের বাড়তে শুরু করেছে যমুনা নদীর পানি। গত ২৪ ঘন্টায় যমুনা নদীর পানি ৫ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এবারের বন্যায় সিরাজগঞ্জের পাঁচটি উপজেলার ২৮২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ও সাতটি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে গেছে। এছাড়া, জেলায় মোট ৯৩টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। সিরাজগঞ্জে ২ কি.মি. (আংশিক) বাঁধ, ৫ হাজার ৭২১টিউবওয়েল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া, বন্যায় পানিতে পড়ে ৫ব্যক্তি এবং ৩ হাজার ৮৮৫টি হাঁস-মুরগি ও ৪টি গবাদিপশু মারা গেছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার ৩৯টি ইউনিয়নের ৩৮৮টি গ্রামের ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৭৮হাজার ৬৯৮ মানুষ আংশিক ও ১১২৪ হাজার মানুষ সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৩৮১৩ হাজার। আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১৮৫টি।
জেলা শিক্ষা অফিস জানায়, বন্যা কবলিত এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২১৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৬৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। আর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ৬টি প্রাথমিক ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিক মোহাম্মদ ইউসুফ রেজা জানান, জেলার ৫টি উপজেলার ২১৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। বন্যা কবলিত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে কাজিপুরে ৮৬, চৌহালিতে ১৯, সিরাজগঞ্জ সদরে ২৫, শাহজাদপুরে ৬৫ এবং বেলকুচি উপজেলায় ২০টি রয়েছে। সিরাজগঞ্জ সদরে ৪টি, কাজিপুরে ৭টি, বেলকুচিতে ২টি এবং চৌহালিতে ২টি বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. শফিউল্লাহ বলেন, বন্যার পানি প্রবেশ করায় জেলার ৬৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কলেজে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় ৭টি, চৌহালিতে ২১, কাজিপুরে ১৯, শাহজাদপুরে ১০, বেলকুচিতে ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
ডেপুটি সিভিল সার্জন মো. ইমান আলী জানান, এখনো অস্বাভাবিক কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। বন্যার পানি নামার সময় বিভিন্ন অসুখ-বিসুখের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে জেলায় মোট ৯৩টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। পর্যাপ্ত ওষুধপত্র মজুদ আছে।
কুড়িগ্রাম জেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তীত। ৯ লাখ বানভাসি মানুষ পানিবন্ধি রয়েছে। পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, ব্রম্মপুত্র নদীর চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ১৫ সে.মি. ধরলা ১৭ সে,মি. উপর দিয়ে বইছে। তিস্তা ও নুন খাওয়ার নদীর পানি বিপদসীমার অনেক নীচে রয়েছে।
কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা: এসএম আমিনুল ইসলাম জানান, ৫টি ওয়াটার ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়াও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও স্যালাইন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিতরণ করা হচ্ছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শহিদুল ইসলাম জানান, ৫৪২াট শিক্ষা প্রতিষ্টারে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন জানান, বন্যার ফলে পানি বন্ধি মানুষেরা বাড়ী ফিরতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯:৪২:৫৮ ৯০০ বার পঠিত #প্রবলিত এলাকা #বন্যা #বর্ষাকাল #বৃষ্টি