বঙ্গ-নিউজঃরাজধানীর বিজয়নগরের মোহাম্মদী ইলেক্ট্রিক ওয়্যারস এন্ড মাল্টি প্রডাক্টস (এমইপি) লিমিটেড এর প্রতারণায় হাবিবুর রহমান ভূঞা নামে কিশোরগঞ্জের এক পরিবেশক এখন নিঃস্ব। সারাজীবনের সঞ্চয়, ফসলি জমি, দু’টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও গাছ বিক্রি করে এবং জমি বন্ধক ও এনজিও ঋণ নিয়ে লাভের আশায় বিনিয়োগ করে তিনি আজ সর্বস্ব খুঁইয়েছেন। এমনকি কোম্পানির কাছে জামানত হিসেবে রাখা ১০ লাখ টাকাও ফেরত পাচ্ছেন না।
কোম্পানির কাছে ধর্ণা দিয়েও প্রতিকার না পেয়ে তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবে সপরিবারে চার দিন আমরণ কর্মসূচি পালন করেছেন। কিশোরগঞ্জেও মানববন্ধন এবং জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালন করেছেন। এতে প্রতিকার দূরে থাক উল্টো কোম্পানির পক্ষ থেকে মামলা-হয়রানির হুমকি দেয়া হচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে জামানতের টাকা ফেরতসহ কোম্পানির প্রতারণার প্রতিকার চেয়ে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন হাবিবুর রহমান ভূঞা। বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) দুপুরে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের গৌরাঙ্গবাজার সেগুনবাগিচা এলাকায় কিশোরগঞ্জ নিউজ কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে এমইপি কোম্পানির প্রতারণার শিকার পরিবেশক হাবিব ট্রেড লিংক এর স্বত্ত্বাধিকারী মো. হাবিবুর রহমান ভূঞা, তার স্ত্রী নাদিরা বেগম, কলেজপড়–য়া মেয়ে নওরিন সুলতানা নিশাত এবং জেএসসি পরীক্ষার্থী ছেলে তানভীর আহসান উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে হাবিবুর রহমান ভূঞা জানান, চুক্তিপত্রের মাধ্যমে ২০১৫ সালের ৮ই জুন থেকে তিনি মোহাম্মদী ইলেক্ট্রিক ওয়্যারস এন্ড মাল্টি প্রডাক্টস (এমইপি) লিমিটেড এর সাথে কিশোরগঞ্জ জেলার পরিবেশক হিসেবে ব্যবসা শুরু করেন। চুক্তিপত্রের শর্ত অনুযায়ী পরিবেশক হিসেবে তিনি কোম্পানির কাছে ১০ লাখ টাকা জামানত দেন।
কিশোরগঞ্জ জেলায় শুরুর দিকে এমইপি পণ্যের কোন বাজার চাহিদা না থাকায় প্রায় দুই বছর দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে এবং প্রচুর টাকা লোকসান দিয়ে তিনি এমইপি পণ্যের চাহিদা তৈরি করেন। এরপরই শুরু হয় কোম্পানীর প্রতারণার খেলা। তাকে না জানিয়েই কোম্পানি জেলার আরো দুইটি জায়গায় পরিবেশক নিয়োগ করেন।
বিষয়টি নিয়ে কোম্পানির সাথে কথা হলে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে তাকে কোম্পানীর লোকজন অনুরোধ করে ব্যবসা চালিয়ে নিতে বলেন। এ পরিস্থিতিতে তিনি দুঃশ্চিন্তায় হার্ট অ্যাটাক করেন। কোম্পানীর কিছু অসৎ ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা লাভের প্রলোভনে তাকে পর্যায়ক্রমে সাড়ে ৩২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করায়।
এজন্যে তাকে সারাজীবনের সঞ্চয়, ফসলি জমি, দু’টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও গাছ বিক্রি করে এবং জমি বন্ধক ও এনজিও ঋণ নিতে হয়। কিন্তু লাভ দূরের কথা লোকসান দিতে দিতে তিনি আজ নিঃস্ব হয়ে দিশেহারা।
হাবিবুর রহমান ভূঞা অভিযোগ করেন, দুই বছর পর পর চুক্তিপত্র নবায়ন করার কথা থাকলেও বার বার আশ্বাস দিয়েও কোম্পানি চুক্তিপত্রটি আর নবায়ন করেনি। কোম্পানির বিক্রয় কর্মীর প্রায়ই পয়েন্ট থেকে পণ্য চুরি, বিল চুরি, ট্রেড অফারের নামে কমিশন চুরি করে হাতেনাতে ধরা পড়লে কোম্পানিকে জানিয়েও প্রতিকার মিলেনি।
এরকম পরিস্থিতিতে চুক্তিপত্র ভঙ্গ করে হাবিবুর রহমান ভূঞার সাথে ব্যবসায়িক লেনদেন শেষ না করেই কোম্পানির অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে কোন ধরনের পূর্বনোটিশ না দিয়ে আরেকজনকে পরিবেশক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে দেয়।
হাবিবুর রহমান ভূঞা বলেন, মার্কেটে আমার টাকা বাকি পড়ে আছে। রিপ্লেস পণ্য পড়ে আছে। এছাড়া কোম্পানির কাছে ১০ লাখ টাকা জামানত পড়ে আছে। কোম্পানির সাথে অসংখ্যবার যোগাযোগ করে এসব ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করলেও কোম্পানি আমলেই নিচ্ছে না।
একদিকে লোকসান দিতে দিতে আমি নিঃস্ব আর অন্যদিকে কোম্পানির পিছনে ধর্ণা দিতে দিতে আমি দিশেহারা। এখন স্ত্রী-পুত্র-কন্যা নিয়ে আমি অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছি।
সংবাদ সম্মেলনে হাবিবুর রহমান ভূঞা ও তার পরিবারের সদস্যরা পরিবারটিকে বাঁচাতে এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সুবিচার প্রার্থনা করেছেন।
অভিযোগের ব্যাপারে মোহাম্মদী ইলেক্ট্রিক ওয়্যারস এন্ড মাল্টি প্রডাক্টস (এমইপি) লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম চাকলাদার বলেন, হাবিবুর রহমান ভূঞাকে ঢাকায় এসে হিসাব-নিকাশ করার কথা বলা হলেও তিনি আসছেন না। তিনি না এলে কিভাবে আমরা লেনদেন শেষ করব!
বাংলাদেশ সময়: ১৯:০০:৪২ ১১৫৯ বার পঠিত