আমিনুলইসলামবঙ্গ-নিউজ ডটকম:রোমান্সের প্রথম দিন…
মুখ ঘুরিয়ে আমার গলার কাছে নাক ঘষতে লাগলো। আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ালো আমার বাম চোয়ালে। তারপর অন্যদিকে তাকিয়ে বললো, ‘দিয়ে দিয়েছি।’
‘কি দিয়েছো?’
‘যা চেয়েছিলে!’
আমি মুখটা কাছে নিয়ে ওর নাকে নাক ঘষলাম। বোধহয় খুশি হলো ও। আবার আমার বাম চোয়ালের কাছে নাক ঘষতে লাগলো। কিছু না ভেবেই আমি আমার মুখটা ঘোরাতেই আমার ঠোঁটের কাছে ওর ঠোঁট পেয়ে গেলাম। কি ভেবে যেন আমার মুখটা আরেকটু সামনে এগিয়ে দিতেই চুমু খেলাম। ভেবে ছিলাম, মুখ সরিয়ে নেবে। কিন্তু লক্ষ্য করলাম, ও স্থির হয়ে গেছে। ওর কথা জানি না; কিন্তু এটা আমার জীবনের প্রথম চুমু। আবার চুমু খেলাম। এবার আগের চেয়ে দীর্ঘ। হালকা সাড়া পেলাম ওর তরফ থেকে। একটু যেন ওর দিকে আমাকে টানতে চাইলো। আমার ডান হাতে ওর ডান হাত ধরা; অন্য হাত দিয়ে কোমর জড়িয়ে ধরে আছি। থামলাম। ওর শ্বাসপ্রশ্বাস ভারী হয়ে গেছে। কাঁপছে। যেন এটা শীতের কাঁপুনি। মুখ সামান্য খুলে শ্বাস নিলো। আমি আবারো চুমু খেলাম। এবার ওর নিচের ঠোঁটের একাংশ আামার মুখের ভেতর নিয়ে গেলাম। ওর বুকের ভেতরের শব্দও যেন আমি শুনতে পাচ্ছি। এবার মুখের ভেতরটা খুঁজে পাওয়ার জন্য ঠোঁটটা ছেড়ে দিলাম। এই সময় অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো, ‘ছাড়ো।’
আমি মুখ সরিয়ে নিলাম।
‘আমাকে একটু ইজি হতে দাও।’
আমি বিব্রত হলাম। ‘সরি।’
‘না ঠিক আছে।’ একটু হাসলো বোধহয়।
আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম, ‘তুমি এখনও কাঁপছো।’ ডান হাত আরও শক্ত করে ধরলাম।
চুপচাপ বসে আছে। মাঝে মধ্যে কেঁপে উঠছে। ভয় পেলাম, কাঁদছে নাকি? যাহ! তাহলেতো চুমু দেয়া বোধহয় উচিত হয়নি।
ওর মুখটা তোলে চোখ মুছিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলাম। ও হেসে উঠলো। ‘আমি কাঁদছি নাতো!’
ওর কথা বলতে পারবো না। কিন্তু আমি সেদিন বাসায় ফেরলাম টলতে টলতে। আমার জীবনের প্রথম চুমু। আজ প্রথম ভালোবেসে কোন মেয়েকে চুমু দিলাম। আমার বুকটা ভরে গেছে। আমার প্রথম ভালোলাগার মেয়েটার কথা ভুলতে আমার অ-নে-ক সময় লেগেছিলো। বিদেশী সেই এম্বেসডারের কন্যাকে এখনও মনে হয়। কিন্তু আজ আমি যেন নতুন করে জীবন পেলাম। সেদিন আর বাসে করে বাসা ফিরিনি। রিকশায় করে বাসা ফেরলাম। রিকশাওয়ালা যে ভাড়াই চাইলো, না করলাম না! আজ থেকে-তো আমার নতুন জীবন।
ট্রাজেডির সূত্রপাত…
আমি ঠিক করেছি বিয়ের আগে ওকে স্পর্শ করবো না। আপনি বোধহয় বুঝে গেছেন আমি স্পর্শ বলতে কি বুঝিয়েছি! ওকে আমার কাছে ঠিক কাঁচের পুতুলের মতো মনে হয়। আলগে রাখতে হবে নয়তো ভেঙে যেতে পারে। ও আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসে। আমি নিশ্চিত আমার জন্য জান দিতে দ্বিধা বোধ করবে না এই মেয়ে। আমি জানি না, ওর মতো ভালোবাসতে পারছি কিনা। মাঝে মধ্যে মনে হয়, ওর ভালোবাসা আমার চেয়ে বেশি।
কিন্তু আজকে ও খুব কাঁদছে। বার বার বলছে আমাদের বিয়ে নাও হতে পারে। একবার শুধু জিজ্ঞেস করেছিলাম কেন? ও উত্তর দেয় নি। আমার খুব মন খারাপ। তবে ওকে বলেছি, জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে আল্লাহ্’র হাতে। ও উত্তরে কিছু বলে নি।
গাড়ীর ভেতর সারাদিন কেঁদেছে। হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কাঁদার সময় ওর হাত সরিয়ে আনতে হাতের পানি আমার হাতে লেপটে গেলো। আমার হাতে লাগা ওর চোখের পানি যেন আমার কাছে এসিডের মতো মনে হলো। ওর প্রতি কান্নার দমকের সাথে আমার বুকের ভেতরটা যেন দুমড়ে মুচড়ে যেতে লাগলো।
প্রচন্ড কষ্ট পাচ্ছি!
যবনিকাপাত…!
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। আজ চেয়েছিলাম একটি গোলাপ ফুল ওকে দেবো। আজ পর্যন্ত কোন মেয়েকে ফুল দিইনি। অবশ্য শাহবাগ মোড়ে যখন শুনলাম একটি তোড়ার দাম দশটা টাকা; আমার প্রেম কোন দিক দিয়ে যেন উড়াল দিলো। দোকান থেকে চলে আসতে আসতে ভাবছিলাম, আমি জঘন্য টাইপের প্রেমিক। মানুষ তার প্রেমিকার জন্য কি-ই না করে। আর একটি ফুল পর্যন্ত আমি তার জন্য কিনতে পারলাম না!
আজকে ও ওর হবু দুলাভাইয়ের সাথে এসেছে। ছেলেটা বেশ অমায়িক। ভালোই লাগে। আমি ফুলার রোডের পাশের রাস্তার ধারে এসে ওদের খুঁজতে লাগলাম। অনেক জোড়া বসে আছে। হঠাৎ দেখলাম লাল মতো কাপড় পড়া এক মেয়েকে জড়িয়ে রেখেছে সেই ছেলে। গভীর মনে চুমু খাচ্ছে। ধ্বক করে উঠলো বুক! পাঁই করে ঘুরলাম। দ্রুত পা চালিয়ে সেখান থেকে চলে আসার চেষ্টা করলাম। কিছুদূর যাওয়ার পর সে আমাকে ফোন করলো।
‘কোথায় তুমি?’ জিজ্ঞেস করলো গাঢ় কন্ঠ স্বরে।
এক মুহুর্ত ভাবলাম আমি। মনে হলো এভাবে পালানো উচিৎ হচ্ছে না। উত্তর দিলাম ‘এই চলে এসেছি’।
আবার হাঁটা দিয়ে চলে আসলাম। মেয়েটা আমাকে দেখে হাসলো। ওর পাশে বসতে ইচ্ছে করলো না। ছেলেটার পাশে বসতে গেলে ছেলেটা হই হই করে উঠলো।
‘আরে তুমি তোমার প্রেমিকার পাশে বসো। আমার পাশে কেন?’
উপায়ন্তর না দেখে বাধ্য হয়ে মেয়েটার পাশে বসলাম।
মেয়েটা আমার দিকে আমুদে চোখ রেখে বললো, ‘দূরে কেন? আরো কাছে এসো।’
আমার মনের ভেতরটা জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যেতে লাগলো যখন দেখলাম ও এক হাত দিয়ে ছেলেটাকে জড়িয়ে আছে। আজকে ও অনেক সেজে এসেছে। সুন্দর লাগছে ওকে। ঠোঁটে গাঢ় করে লিপস্টিক দিয়েছে। হাতে গহনা পড়েছে। মিষ্টি করে হাসলো আমার দিকে চেয়ে। আমার সামনেই ছেলেটা আবার চুমু দিলো মেয়েটাকে। আমি অন্যদিকে তাকিয়ে থাকলাম। ছেলেটার অশ্লীল কথায় বার বার হেসে গড়িয়ে পড়ছে।
ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘আমাদের সম্পর্কটা তোমার কাছে পরিস্কার হওয়া উচিত। কেননা, ওর সাথে তোমার একটা সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে। আমি ওর বড় বোনকে যেভাবে ভালোবাসি, ঠিক একই ভাবে ভালোবাসি একে। বড়টাকে যেভাবে আমার বউয়ের মতো দেখি একেও সেই একই ভাবে দেখি।’ মেয়েটা শুনে মাথা নিচু করলো। নিজের বুকের কাছে থুতনি লাগিয়ে দিলো। ‘আরে তুমি লজ্জা পাচ্ছো কেন?’ ছেলেটা হেসে উঠলো। এরপর আমার উদ্দেশ্যে বললো, ‘এ কিন্তু খুব ভালো মেয়ে! খুবই ভালো মেয়ে। তুমি একে মন খুলে ভালোবাসতে পারো, বিছানায় নিয়ে আদর করতে পারো; কোন সমস্যা নাই!’
আমি শুনে অন্য দিকে তাকালাম। বুকের ভেতরটা শূন্য লাগছে। কিছুই যেন নাই!
সে আবার মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘তোমার আমার যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে তার জন্য তোমার কোন সমস্যা আছে। আমার আর ওর সাথে একইভাবে সম্পর্ক চালিয়ে যেতে পারবে না?’
‘আমার কোন সমস্যা নাই।’ মেয়েটা মাথা কাত করে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘তোমার কোন সমস্যা আছে?’
আমার কন্ঠ থেকে কেন যেন কোন শব্দ বের হলো না। বহু কষ্টে মুচকি হেসে মাথা নাড়লাম। মেয়েটা সবকিছু বোঝে গেছে এমন ভঙ্গীতে সন্তুষ্ট হয়ে মাথা উপর নিচে নাড়লো।
মনে মনে আমি তখন আল্লাহ্-কে ডাকছি। হে খোদা আমাকে রা করো। এতো সহজে আমার খারাপ হবার কোন ইচ্ছে আমার নেই। ইয়া- আল্লাহ্ কোন ভাবে এখান থেকে আমাকে নিয়ে যাও।
‘আরে তুমি লজ্জা পাচ্ছো কেন? এই মেয়ে তুমি ওর হাত ধরো।’ বলে ছেলেটা মেয়েটার হাত আমার হাতে তুলে দিলো।
আল্লাহ্ জানেন আমার ভেতর তখন কি অবস্থা চলছিলো। স্বাভাবিকের তুলনায় আমার রক্ত চলাচল অনেক দ্রুত বেড়ে গিয়েছিলো। জানিনা, হয়তো হাত কাঁপছিলো থরথর করে। আমার খেয়াল নেই। কিন্তু মেয়েটা আমার হাতে হাত দিয়েই চমকে আমার দিকে তাকালো! নড়ে চড়ে বসলো। একবার ছেলেটার দিকে তাকালো আবার আমার দিকে তাকালো। তারপর হাহ্ হাহ করে হেসে উঠে বললো, ‘আমি বড় খারাপ মেয়ে।’ খিলখিল করে ছেলেটার উপর গড়িয়ে পড়লো।
ছেলেটা আবার ওকে চুমু দিলো। হয়তো কোন কারনে মেয়েটার থেকে চুমুতে সাড়া না পাওয়ায় জিজ্ঞেস করলো তাকে ‘কি হয়েছে?’ মেয়েটা মাথা নাড়লো।
এবার ছেলেটা ওর ডান বুকে হাত দিয়ে বললো, ‘এই মেয়ে তোমার বুক এতো নরম কেন? কি নরম তুলতুলে..’
আমার চোখে কি পানি চলে আসছে? আমি বার কয়েক চোখের পাতা নাড়লাম। হঠাৎ করে আমার ফোন আসলো। ইয়া রাহমানুর রাহিম, তুমি আমাকে রা করেছো। ফোনটা হাতের মুঠোয় ধরে আমি উঠে পড়লাম। কে ফোন করেছে আমি জানি না। নেটওয়ার্কে সমস্যা হচ্ছে। বার কয়েক হ্যালো বলে ফোন কেটে গেলো। এই ধরনের ফোন কলে আমি কখনো ফোন ব্যাক করি না। কিন্তু এই মুহুর্তে আমার কোন কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকা দরকার। আমি আবার ফোন করলাম। নেটওয়ার্কে সমস্যা; ফোন আবার কেটে গেলো। এক মুহুর্ত চিন্তা করলাম। এরপর কাছে গিয়ে বললাম, ‘পত্রিকা অফিস থেকে আমার জরুরী ডাক এসেছে। এখনই মুহাম্মদপুর যেতে হবে।’
ছেলেটা বোধহয় সন্দেহ করলো আমাকে। একবার জিজ্ঞেস করলো, ‘ইমার্জেন্সি?’
আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লাম। মেয়েটার কাঁধের উপর দিয়ে দূরে কোথাও তাকিয়ে বললাম, ‘আমার ছাতাটা দাও।’
ও ছাতার বদলে ওর হাত বাড়িয়ে দিলো। কাঁপা হাতে ওর হাত ধরলাম আমি। ‘দাও, ছাতাটা দাও।’ মাথা নাড়লো মেয়েটি। আদুরে চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো।
ছেলেটা বোধহয় আমার অবস্থাটা এতক্ষ্নে আঁচ করতে পারলো। মেয়েটার কোল থেকে ছাতাটা এগিয়ে দিলো।
আমি ছাতাটা হাতে নিয়ে আর একটি কথাও না বলে উল্টো মুখে রওনা দিলাম।
শেষ…
সেদিন রাত্রে ঘুম আসতে আমার অনেক সময় লেগেছে। বার বার চোখে ভাসছে মেয়েটার ডান বুকটা নিয়ে নাড়াচাড় করছে অন্য আরেকটি ছেলে। যে শরীরে আমি বিয়ের আগে হাত না দিয়ে পবিত্র রাখতে চেয়েছি; সেই শরীর নিয়ে অন্য কেউ খেলছে! আমার বুকের ভেতর থেকে কাঁপুনি এসে আমার পুরো শরীরটাকে কাঁপিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। আমি বিছানায় শুয়ে আছি, এখনও আমার হাত কাঁপছে। ওর ঠোঁট আমার মুখে নিয়েছিলাম, মনে পড়লে ঘৃনায় গা রি রি করে উঠছে। মুখ থেকে শব্দহীনভাবে একটি কথা শুধু বের হয়ে আসলো, ‘নষ্টা মেয়ে!!!!’
বাংলাদেশ সময়: ৯:০৪:১১ ৭৮৯ বার পঠিত #'নষ্টা মেয়ে!!!!'