
বঙ্গ-নিউজঃ মানুষ চাঁদ নিয়ে রোমাঞ্চিত যুগ যুগ ধরে। চাঁদ সবসময় ছিল রহস্যময়, অধরা। চাঁদে পৌঁছানোর স্বপ্ন নিয়ে মানুষ কাটিয়েছে শতাব্দীর পর শতাব্দী। এই রহস্যভেদ করতে মানুষ তার মেধা ও প্রযুক্তির চূড়ান্ত ব্যবহার করেছে। ধাপে ধাপে বাধা অতিক্রম করে জয় করেছে চাঁদকে। ২০ জুলাই ২০১৯ চন্দ্র বিজয়ের ৫০ বছর পূর্ণ হলো। এই অভিযান পরিচালনায় কারও প্রাণ হারিয়েছে, ভেঙেছে অসংখ্য নভোযান। চন্দ্রজয়ের সেই অভিযান নিয়েই আজকের রকমারি-
প্রথম যেদিন পা পড়ল চাঁদে
চাঁদে যাবে মানুষ, জল্পনা-কল্পনা চলছে আমেরিকায়। ফ্লোরিডার সৈকতে অজস্র মানুষের ভিড়। এখান থেকেই যাত্রা শুরু করবে অ্যাপোলো। আর্মস্ট্রং, অলড্রিন আর কলিন্স বসে আছেন অ্যাপোলো ১১-এর ভিতরে। রকেটের ইঞ্জিন ছাড়তেই ধীরে ধীরে অ্যাপোলো-১১
উপরের দিকে উঠতে শুরু করল। তারপর অ্যাপোলোর লুনার মডিউল ইগলে চড়ে নির্দিষ্ট গতির তুলনায় বেশ দ্রুত চাঁদের দিকে ছুট ছিলেন তারা। কন্ট্রোলের দায়িত্বে ছিলেন অলড্রিন। দীর্ঘ যাত্রা শেষে ১৯ জুলাই অ্যাপোলো-১১ চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করল। আগেই ঠিক করা ছিল চন্দ্রযানের প্রথম অংশ কমান্ড মডিউল চাঁদের কক্ষপথে থাকবে কিন্তু চাঁদের মাটিতে নামবে না। অপর অংশ লুনার মডিউল নামবে চাঁদের মাটিতে। চাঁদের বুকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পাখি অবতরণ করছে, অনেকটা এমন ধারণা থেকেই লুনার মডিউলের নাম ঈগল রাখা হয়। ২০ জুলাই লুনার মডিউল ঈগল কলাম্বিয়া থেকে পৃথক হয়ে নিল আর্মস্ট্রং এবং এডউইন অলড্রিনকে নিয়ে চাঁদের দিকে রওনা করে। কমান্ড মডিউল কলাম্বিয়ায় থেকে যান মাইকেল কলিন্স। ঈগলের নেভিগেশন ও গাইডেন কম্পিউটার স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঈগলকে চাঁদে অবতরণ করানোর দায়িত্বে ছিল। ঈগল যখন পা রাখল চাঁদের বুকে ঘড়িতে
সময় তখন ২০ জুলাই ১৯৬৯, কেন্দ্রীয় মান সময় (সেন্ট্রাল স্ট্যান্ডার্ড টাইম) তিনটা ১৭ মিনিট। নিল আর্মস্ট্রং বিশ্ববাসীর উদ্দেশে ঘোষণা করলেন, হিউস্টন, ট্র্যাংকুইলিটি বেইস থেকে বলছি, ঈগল চাঁদে নেমেছে। ঈগলের মই বেয়ে নামতে শুরু করলেন আর্মস্ট্রং। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ধারা অনুযায়ী, কোনো অচেনা জায়গায় মিশনে কমান্ডার প্রথমে প্রবেশ করেন না। তাই কমান্ডার হিসেবে আর্মস্ট্রং নন, বরং পাইলট অলড্রিনেরই প্রথম চাঁদে পা রাখার কথা। কিন্তু নাসার হস্তক্ষেপে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, সিনিয়র হওয়ায় আর্মস্ট্রংই এই সম্মান পাবেন। নিল আর্মস্ট্রং চাঁদে নামার সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর অলড্রিনও নেমে আসেন। তিনিও ছবি তোলা, শিলা সংগ্রহ ইত্যাদি করে আড়াই ঘণ্টা পার করেন। অলড্রিনই প্রথম ঈগলে প্রবেশ করেন, তাকে অনুসরণ করেন আর্মস্ট্রং। পৃথিবীর তুলনায় চাঁদে সবকিছুর ওজন প্রায় ছয় ভাগ হালকা। ঈগলে ওঠার আগে দুজনেই দুই ব্যাগে করে নিয়ে নেন সাড়ে একুশ কেজি ধুলা-বালি, পাথর ইত্যাদি। চাঁদের অতিথিরা দিয়েও এসেছেন বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, আমেরিকার পতাকা, পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম গোলার্ধের মানচিত্র, একটি সিলিকন মেসেজ ডিস্ক, যার মধ্যে রেকর্ড করা আছে পৃথিবীর ৭৩টি দেশের প্রধানসহ আমেরিকার কয়েক প্রেসিডেন্টের বাণী। লুনার মডিউলের মইয়ে বেঁধে সাড়ে পাঁচ ডলারে কেনা নাইলনের পতাকাটি নেওয়া হয়েছিল চাঁদে। আর্মস্ট্রং ফিরে এসে বলেছিলেন, গোটা অভিযানে সবচেয়ে কঠিন কাজ ছিল চাঁদের বুকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা বসানো। চাঁদে বায়ুম-ল না থাকায় পতাকাটি সোজা হয়ে থাকতে পারত না। তাই পতাকার ওপরের অংশে একটা অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি টিউব সেলাই করে দেওয়া হয়, যাতে ছেড়ে দেওয়ার পর পতাকাটি ঝুলে না পড়ে। টিউবটি পুরোপুরি টানা না হওয়ায় পতাকাটা একটু ভাঁজ হয়েছিল। এতে করে মনে হচ্ছিল, পতাকাটি যেন বাতাসে দুলছে। এটাই দেখতে এত ভালো লাগছিল যে, এভাবেই ছবি তোলা হয়। ২৪ জুলাই ১৯৬৯, চন্দ্র বিজয়ীরা পৃথিবীতে ফিরে আসেন। ওয়েক দ্বীপ থেকে প্রায় ২৬৬০ কিলোমিটার আগে সাগরে অবতরণ করেন তারা। উদ্ধারকারী জাহাজ
মার্কিন বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস হর্নেট তাদের অবতরণস্থল থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে ছিল। হেলিকপ্টারের সাহায্যে তাদের ইউএসএস হর্নেটে নিয়ে আসা হয়। এর মধ্য দিয়েই শেষ মানুষের প্রথম চন্দ্র অভিযান।
চাঁদ স্পর্শের আগে
চাঁদে পৌঁছাতে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি বিজ্ঞানীদের। নভোচারীদের যান রকেটকেই নিয়ন্ত্রণ করা শুধু নয়, উদ্দেশ্য সাধনে সফল হওয়াটা ছিল একটি বড় বিষয়। চাঁদে সফল অভিযান করার আগে তথ্য সংগ্রহের জন্য একাধিক অভিযান পরিচালনা করেছে নাসা। তবে অনেক অভিযানই আলোচনা থেকে হারিয়ে গেছে শুধু চাঁদের বুকে নামতে না পারার জন্য। এসবের মধ্যে উল্লেখ করা যেতে পারে Pioneer-4(সোভিয়েত ইউনিয়ন) এর কথা। এটি ছিল প্রথম মহাকাশযান যা বহির্জাগতিক কোনো স্থানে অবতরণে সক্ষম হয়। এটি চাঁদের কোনো চৌম্বকক্ষেত্রের সন্ধান লাভ করতে পারেনি। এদিকে Ranger-7(মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) সফলভাবে উচ্চমানের ৪ হাজার ৩০৮টি ছবি পাঠাতে সক্ষম হয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের Luna-9 প্রথম মহাকাশযান আবার বহির্জাগতিক কোনো পৃষ্ঠদেশে নিয়ন্ত্রিতভাবে অবতরণে সক্ষম ছিল। এটি চাঁদের বেশ কিছু ছবি পৃথিবীতে পাঠায়। তবে Luna-10 (সোভিয়েত ইউনিয়ন) বহির্জাগতিক কোনো কক্ষপথে সফলভাবে পৌঁছানো মহাকাশযান হিসেবে প্রথম স্থানে রয়েছে। কক্ষপথে থাকা অবস্থায় এটি চাঁদের তেজস্ক্রিয়তার সীমা, মহাজাগতিক রশ্মির তীব্রতা এবং চাঁদের দুর্বল চৌম্বকক্ষেত্রের পাঠ নেয়। প্রায় দুই মাস ধরে (৩০ মে, ১৯৬৬ পর্যন্ত) ৪৬০ বার এটি চাঁদকে প্রদক্ষিণ করে এবং তথ্য সরবরাহ করে।
Orbiter-1(মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) সফলভাবে চাঁদের কক্ষপথে জায়গা করে নেওয়ার পর চাঁদের পৃষ্ঠের প্রায় দুই মিলিয়ন মাইল পর্যন্ত উচ্চমানের ছবি পৃথিবীতে পাঠায়। যার মধ্যে সম্ভাব্য অ্যাপোলো যানের অবতরণের ক্ষেত্রের ছবিও ছিল। ৭৭ দিনে এটি চাঁদকে ৫২৭ বার প্রদক্ষিণ করার পর চন্দ্রপৃষ্ঠে বিধ্বস্ত হয়, যা ছিল পূর্বনির্ধারিত। কারণ চাঁদের কক্ষপথে থেকে অ্যাপোলো অভিযানকে যাতে এটি বাধাগ্রস্ত করার সুযোগ না পায়। Luna-11(সোভিয়েত ইউনিয়ন) নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে পরীক্ষার জন্য নকশা করা হয়েছিল। যা ২৭৭ চাঁদকে প্রদক্ষিণ শেষে ১ অক্টোবর ১৯৬৬ তারিখে মিশন শেষ করে। Luna-12(সোভিয়েত ইউনিয়ন) অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ছিল চন্দ্রপৃষ্ঠের ছবি তোলা এবং এটি সফলভাবে তা সম্পন্ন করে। এটি ১ হাজার ১০০ ছবি তুলতে সক্ষম হয়। ৬০২ বার চাঁদকে প্রদক্ষিণ শেষে ১৯ জানুয়ারি, ১৯৬৭ তারিখে এটি মিশন শেষ করেছিল।
কল্পকাহিনি
চাঁদ নিয়ে যেমন আছে গল্প আবার আতঙ্কও কম নেই
চাঁদে অভিযান নিয়ে কল্পকাহিনির শেষ নেই। পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব তিন লাখ চুরাশি হাজার চারশ তিন কিলোমিটার। এত কাছে তবু এত দূরে থাকা চাঁদকে নিয়ে তাই মানুষের ভাবনার জগৎ ছিল রঙিন আবার আতঙ্কের। ১৮৬৫ সালে জুলভার্ন লেখেন ‘ফ্রম আর্থ টু দি মুন’। তার এই কল্পকাহিনিতে একটি মহাকাশযান আমেরিকার ফ্লোরিডা থেকে যাত্রা শুরু করে চাঁদে অ্যাডভেঞ্চার করে প্রশান্ত মহাসাগরে অবতরণ করে, অনেকটা অ্যাপোলো-১১ এর মতোই। ১৯০১ সালে প্রকাশিত হয় এইচজি ওয়েলস-এর ‘দি ফার্স্ট ম্যান অন দ্য মুন’। এই গল্পে
মানুষ এক ধরনের পদার্থ ব্যবহার করে, যা নাকি নিজে থেকেই বাতাসে ভাসতে পারে। আইজ্যাক আসিমভ একটি কল্পকাহিনি লেখেন ১৯৩৯ সালে। কাহিনি অনুযায়ী ঘটনা ঘটে ১৯৭০ সালে। আর্থার সি ক্লার্কও ১৯৫১ সালে লিখেছিলেন ‘প্রিলিউড টু স্পেস’। এ ছাড়াও আরও অনেকেই চাঁদে অভিযান নিয়ে গল্প-উপন্যাস লিখেছেন। এসব কল্পকাহিনি লেখকদের অনেকের লেখা বই থেকে তৈরি হয় চলচ্চিত্র। এ ছাড়া বিভিন্ন ডকুমেন্টারি ফিল্মও নির্মাণ করা হয়েছে। তেমনই একটি হচ্ছে ‘এ ট্রিপ টু দি মুন’, যা ছিল নির্বাক চলচ্চিত্র।
চাঁদের মালিকানা কার?
চাঁদের দখল নিয়েও হতে পারে লড়াই
মহাকাশ অভিযান শুরুর পরপরই মহাকাশের নানা বস্তুর মালিকানার বিষয়টি একটি ইস্যু হয়ে ওঠে। নাসা প্রথম মনুষ্যবাহী মহাকাশযান চাঁদে পাঠানোর সময় জাতিসংঘে বহির্জগতের মহাকাশ চুক্তি নামের একটি চুক্তিপত্র গ্রহণ করে। ১৯৬৭ সালের ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্য।
এতে বলা হয়, পৃথিবীর বাইরের মহাশূন্যে, চাঁদ এবং অন্যান্য যেসব বস্তু রয়েছে, সেখানে কোনো দেশ দখল বা অন্য কোনোভাবে নিজেদের সম্পত্তি বলে দাবি করতে পারবে না। কিন্তু ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র মহাশূন্যে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বাণিজ্যিক কর্মকা- চালানোর সুযোগ রেখে একটি আইন অনুমোদন করে। সেখানে চাঁদের কথা উল্লেখ না করে যে কোনো গ্রহাণু থেকে নাগরিকদের খনি সম্পদ আহরণের অধিকার দেওয়া হয়। ২০১৭ সালে লুক্সেমবার্গ তাদের নিজস্ব আইন অনুমোদন করে যেখানে মহাশূন্যে অধিকার করা কোনো বস্তু বা সম্পত্তির মালিকানার স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ফলে চাঁদের দখল নিয়ে প্রভাবশালী দেশগুলোর মধ্যে হতে পারে লড়াই। এ ছাড়াও মহাকাশে অভিযান এবং আরও বেশি অর্থ লাভের সম্ভাবনায় কোম্পানিগুলোকে সহায়তা করতে আগ্রহী হয়ে উঠছে অনেক দেশ।
অভিযানে প্রথম প্রাণী লাইকা
পৃথিবীর কক্ষপথ পরিক্রমণের প্রথম প্রাণী
লাইকা নামের একটি রুশ কুকুর প্রথম জীব হিসেবে পৃথিবীর কক্ষপথ পরিক্রমণের সৌভাগ্য অর্জন করেছিল। ১৯৫৭ সালের ৩ নভেম্বর উৎক্ষেপণ করা সোভিয়েত নভোযান স্পুতনিক ২ এ চড়ে এটি মহাকাশ ভ্রমণ করেছিল। লাইকার পাশাপাশি আরও দুটি কুকুরকে এই মহা অভিযানের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। শেষ পর্যন্তলাইকাই নির্বাচিত হয়। লাইকার মূল নাম ‘কুদরিয়াভকা’। সে একটি মেয়ে কুকুর।
অত্যধিক চাপ এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে উৎক্ষেপণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই লাইকা মারা গিয়েছিল। তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় কোনো সমস্যা হওয়ার কারণে এমনটি হয় বলে ধারণা করা হয়েছিল। এই মহাকাশ অভিযানের কয়েক দশক পর লাইকা মৃত্যুর প্রকৃত কারণ মানুষকে জানানো হয়েছিল। লাইকা পুরো ভ্রমণের সময় বেঁচে না থাকলেও এর
মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছিল যে, পৃথিবীর কক্ষপথে উৎক্ষেপিত মহাকাশযানে ওজনহীন থাকা সত্ত্বেও যাত্রীর পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব। এর মাধ্যমে মনুষ্যবাহী নভোযান প্রকল্প শুরু হতে পেরেছিল। কোনো জীবের ওপর মহাকাশের পরিবেশের প্রভাব কি রকম হয় তাও লাইকার মাধ্যমে জানা গিয়েছিল।
চাঁদে গিয়েছেন যারা
চাঁদে অবতরণকারী প্রথম মানুষ হিসেবে পৃথিবীর ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন নিল আর্মস্ট্রং। তিনি ১৯৩০ সালের ৫ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রথম মহাকাশ অভিযান ছিল ১৯৬৬ সালে জেমিনি-৮ নভোযানের চালক হিসেবে। এ অভিযানে তিনি ও ডেভিড স্কট মিলে সর্বপ্রথম দুটি ভিন্ন নভোযানকে মহাকাশে একত্রে যুক্ত করেন। তারপর অ্যাপোলো-১১ চন্দ্র অভিযানে ২০ জুলাই ১৯৬৯ সালে নিল সর্বপ্রথম চাঁদে পা রাখার সম্মান অর্জন করেন। এর সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর ড. এডউইন ইউগিন বাজ অলড্রিন সহযাত্রী হিসেবে চাঁদের বুকে পা রাখেন। তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী মার্কিন বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল, পাইলট ও নভোচারী। ৩৯ বছর বয়সে তিনি এই অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন। নিউজার্সির মন্টকেয়ার উচ্চবিদ্যালয় থেকে শিক্ষাজীবন শেষ করেন ১৯৪৬ সালে। চার্লস পিট কনরেড চাঁদে পা রাখা সৌভাগ্যবান মানুষের একজন। তিনি শুধু একজন নভোচারীই নন, তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের নেভি অফিসার। অ্যাপোলো-১২ মিশনের অভিভাবক এ মানুষটি খুব সাধারণ জীবনাচারের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। চাঁদের বুকে পা রাখা মানুষের মধ্যে তৃতীয়জন ছিলেন তিনি। অ্যাপোলো ১২ ছাড়াও বহুল আলোচিত স্কাইল্যাব ২ মিশনেও তিনি অধিনায়কত্ব করেন। অ্যালেন বিন হাঁটেন চাঁদের বুকে। অ্যাপোলো-১৪ তে করে এডগার মিচেল, অ্যাপোলো-১৫ তে করে অভিযান চালান ডেভিড স্কচ ও জ্যামস ইরোয়িন। চাঁদের বুকে ১৬ মাইল চন্দ্রযান চালিয়েছেন জন ইয়ং। চার্লস ডিউক চাঁদের উঁচু স্থান শনাক্তকরণ কাজে অংশ নেন। ইয়ুজিন কারমান এখন পর্যন্ত সর্বশেষ ব্যক্তি যিনি চাঁদের বুকে সবার শেষে হেঁটেছিলেন ১৯৭২ সালে। এবং অ্যাপোলো ১৭ অভিযানে ব্যবহৃত লুনার মডিউলের পাইলট ছিলেন হেরিসন স্কমিট।
এখনো রয়ে গেছে বহু বিতর্ক
১৯৬৯ সালের জুলাই মাসে প্রথম চাঁদে গিয়ে যখন নেমেছিলেন মার্কিন নভোচারীরা। সেই ঘটনা বিশ্বজুড়ে দেখেছেন কোটি কোটি মানুষ। কিন্তু পৃথিবীতে এখনো এমন বহু মানুষ আছেন যারা বিশ্বাস করেন, মানুষ আসলে কোনোদিন চাঁদে যায়নি। এ নিয়ে তৈরি হয়েছে অনেক বিতর্ক। মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে জরিপ চালিয়েছে। তাদের জরিপে সব সময় দেখা গেছে, চাঁদে মানুষ যাওয়ার ব্যাপারটিকে সাজানো ঘটনা বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় পাঁচ শতাংশ মানুষ। চাঁদের অভিযান যে সাজানো ঘটনা, এই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রথম প্রচার করেন সাংবাদিক বিল কেসিং। চাঁদে মানুষ যাওয়ার ব্যাপারটিকে পুরোপুরি ধাপ্পাবাজি মনে করেন যারা, তারা এর সপক্ষে বেশ কিছু যুক্তি তুলে ধরেন। এরা মনে করেন মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সেরকম প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ তখনো ছিল না, যেটি সফল অভিযানের জন্য দরকার ছিল। অভিযোগকারীদের মতে, তারা সোভিয়েত ইউনিয়নকে মহাকাশ অভিযানে টেক্কা দেওয়ার জন্য হয়তো চাঁদে সফল অভিযান চালানোর নাটক সাজিয়েছে। কারণ মহাকাশ অভিযানে সোভিয়েত ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে এগিয়ে ছিল। এমনকি তারা চাঁদের বুকে একটি যান ক্র্যাশ ল্যান্ড করিয়েছিল। নিল আর্মস্ট্রং চাঁদের বুকে পা দিয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কিন্তু ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ডালপালা ছড়াতে থাকে। ১৯৭৬ সালে বিল কেসিং এর লেখা একটি বইয়ে এই বিতর্ক আরও দৃঢ় রূপ পায়। নাসার একটি ঠিকাদার কোম্পানির জনসংযোগ বিভাগে তিনি কিছুদিন কাজ করেছিলেন। তার বইটির নাম ছিল, ‘উই নেভার ওয়েন্ট টু মুন : আমেরিকাস থার্টি বিলিয়ন ডলার সুইন্ডল। লেখকের মূল বক্তব্য হচ্ছে, মানুষ কখনো চাঁদে যায়নি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আসলে তিন হাজার কোটি ডলারের প্রবঞ্চনা করা হয়েছে। বিতর্ককারীদের প্রশ্ন, চাঁদে তো বাতাস নেই, তাহলে সেখানে মার্কিন পতাকা উড়ল কেমন করে। তাদের আরও প্রশ্ন, কেন এই ছবিতে চাঁদের আকাশে কোনো তারাম-ল দেখা যাচ্ছে না। বাস্তবে ছবিতে উজ্জ্বল আলো এবং অন্ধকারের একটা বিরাট পার্থক্যই চোখে পড়ে। এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে নাকচ করতে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার মাইকেল রিক বলেন, নিল আর্মস্ট্রং এবং বাজ অলড্রিন যখন পতাকাটি খুঁটি দিয়ে চাঁদের মাটিতে লাগাচ্ছিলেন, তখন সেটি কুঁচকে গিয়েছিল। আর যেহেতু পৃথিবীর তুলনায় চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ছয় গুণ কম, তাই কুঁচকানো পতাকাটি সেরকমই থেকে গিয়েছিল।
বাংলাদেশ সময়: ২০:৩৫:০৪ ৮৯৩ বার পঠিত #চন্দ্র বিজয় #চাঁদ #৫০ বছর