হতবাক- তাহমিনা বেগম

Home Page » সাহিত্য » হতবাক- তাহমিনা বেগম
রবিবার, ১৯ মে ২০১৯



 তাহমিনা বেগম

আলেয়া মন ভার করে বসে আছে।হঠাৎ করে তাকে দেখতে আসবে পাত্রপক্ষ।সে এবং পরিবারের কেউ জানতো না বিষয়টা।আলেয়ার এক দূর সম্পর্কের বড়

বোনই বিয়েটা এনেছে।আলেয়া অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের
ছাত্রী।সংসারে বাবা-মাসহ দু বোন তিন ভাই। বলা নেই কওয়া নেই হুট করে দেখতে আসা।আলেয়া কিছুতেই
মেনে নিতে পারছে না।আবার স্বল্পবাক,একটু লাজুক
স্বভাবের মেয়ে বলে কাউকে মনের কথা প্রকাশও করতে পারছে না।শুনেছে পাত্র বেশ ভালো চাকুরী করেন।পরিবারও ভালো।

দেখতে দেখতে সময় ঘনিয়ে এলো।আলেয়ার বাবা এরই মধ্যে দু চারজন আত্মীয় স্বজনকে বলেছেন আসার জন্য।সন্ধ্যার সময় আত্মীয় স্বজনসহ পাত্র পক্ষ হাজির। ঘটক আপা এসে বাবা মাকে জানিয়ে গেলেন মেয়ে পছন্দ হলে পাত্রপক্ষ কাবিন করে ফেলবেন।তারা সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন।শুনে আলেয়ার বুকটা কেঁপে উঠলো ভয়ে।একি হতে চলেছে!
মেয়ে বলে তার কোনো কথার দাম নেই! তাকে বিয়েতে
মত আছে কিনা জানতে চাওয়াও হয়নি।

আপ্যায়ন পর্ব শেষ হবার পর ছেলেপক্ষ তাড়া দিল মেয়ে দেখানোর জন্য।আলেয়াকে ওর মা সহ আত্মীয়রা
তাড়া দিল রেডি হওয়ার জন্য।আলেয়া বেঁকে বসলো।
আলেয়া ওর এক খালুকে ভীষণ ভয় পায়। আলেয়া বেঁকে বসেছে শুনে খালু এসে ধমক দিয়ে রেডি হতে বলে গেলেন।অনন্যপায় আলেয়া কোনোরকমে নিজেকে গুছিয়ে পরিচিত আপুর হাত ধরে পাত্রপক্ষের
সামনে হাজির হলো।

একজন মুরুব্বী স্থানীয় লোক আলেয়াকে নরম গলায়
তার পাশে বসতে বললেন।ও জড়সড় হয়ে বসে।নাম কি?কিসে পড়ো বলে দেখি তোমার হাতখানা বলে আলেয়ার হাতটা ধরে অনামিকায় বেশ সুন্দর একটি আংটি পরিয়ে দিয়ে বললেন আমার বউমা খুব পছন্দ হয়েছে।ছেলেকে সাথে নিয়ে এসেছি।কাজী ডাকুন।বিয়ের ব্যবস্থা করুন।আমি দেরী করতে রাজী নই।
আলেয়ার বাবা বুঝছেন না কি করবেন? তিনি হতভম্ব
হয়ে বসে আছেন।ওর এক বোন জামাই কাজী ডেকে নিয়ে আসেন।তিনলক্ষ টাকা কাবিন ধরে কাজী বিয়ে
পড়ালেন।আলেয়া কান্না করতে করতে কাবিন নামায়
সই করে বাধ্য হয়ে।

কথা হয় কিছুদিন পর ধুমধাম করে বিয়ের অনুষ্ঠানের
আয়োজন করে আলেয়াকে উঠিয়ে নেওয়া হবে।এই বলে পাত্রসহ সবাই অনেক রাতে বিদায় নেয়।আলেয়া
কিছুতেই মেনে নিতে পারে না এই হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনা।সারারাত ঘুমায়নি।ঘরময় পায়চারি করে কাটায়।
সকালে মা-বাবাকে ডেকে নিয়ে বলে আমি তালাক দেব।তোমরা বিয়ে দিয়েছ।আমার বিয়ে নাম ঘুচিয়েছে।
আলেয়ার এহেন আচরণে তার বাবা-মা বাকরূদ্ধ।
উনারা অনেক বুঝিয়ে ওকে শান্ত করে।

এভাবে দুমাস কেটে যাবার পর দিনক্ষণ ঠিক করে মহা
ধুমধামে আলেয়াকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।ক্লাবে ওর
বুকফাটা আর্তনাদে বাবা বেহুস হয়ে যান।নিয়তিকে মেনে নিয়ে আলেয়া সংসার জীবন শুরু করে। আলেয়ার স্বামী কর্মসূত্রে বাবা মা থেকে দূরে থাকায় ওকে একা ফ্লাটে থাকতে হয়। কাজকর্ম করার জন্য ১৩\১৪ বছর বয়সী একটা গৃহকর্মী দিয়ে দেন ওর মা।
ভালোভাবেই দিন কাটছিল।এর মধ্যে আলেয়া দুদিনের
জন্য তার মায়ের বাসায় বেড়াতে আসে।মেয়েটিকে রেখে আসে স্বামীর যাতে খেতে অসুবিধা না হয়।

দুদিন বাদে ও বাবার বাসা থেকে নিজ বাসায় আসে।সবই স্বাভাবিক।হঠাৎ আলেয়ার নজর পড়ে মেয়েটির
চুলে রূপার কাঁটা পায়ে মল।আলেয়া মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করে সে এগুলো কোথায় পেল? মেয়েটি অকপটে বলে ফেলল আফা এডি আমারে দুলাভাই কিন্যা দিছে।আরো বলে দুলাভাই কইছে আমারে বিয়া
কইরা হেগো দেশে লয়া যাইব।আলেয়ার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।তার স্বামী তখনও অফিসে।

ভেবে পায়না সে ঐ মুহূর্তে কি করবে?হঠাৎ মাথায় আসলো।সে মেয়েটিকে নিয়ে আবার বাবার বাসায় আসলো।বাবা-মাকে বললো সব ঘটনা।মা-বাবা কপাল চাপড়ালো আর বললো এ কি করে সম্ভব? শুনেছে জামাই এতো ভালো মানুষ। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে।
উনারা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিল মেয়েকে আর পাঠাবেন না।
কিসমতে যা ছিল হয়েছে।এদিকে আলেয়ার স্বামী বাসায় ফিরে ওদের না পেয়ে শ্বশুর বাড়ীতে ফোন করে।
আলেয়ার বাবা-মা জামাইকে কড়া কথা শোনায়।

আলেয়া বাসা থেকে আসার সময় এককাপড়ে বেরিয়ে
আসে এমনকি আলমারীর চাবিটাও আনেনি।আলেয়া
অনেক ভাবলো।তার বিবাহযোগ্য আরেকটি বোন আছে।সে যদি চলে আসে সমাজ তাকে আঙ্গুল দেখিয়ে
বলবে মেয়েটি খারাপ।মাত্র দুমাস হতে না হতেই স্বামীর
ঘর ছাড়লো।বোনের বিয়ের সময়ও প্রশ্ন আসবে ওর বোন স্বামীর ঘর ছেড়েছে কেন? সমাজ একটা মেয়েকে
যেভাবে অঙ্গুলি হেলে দায়ী করে নির্দোষ হয়েও অপরাধী সাজে থাকতে হয়।

বোন, পরিবার, সমাজ সব চিন্তা করে আলেয়া দুদিনের
মাথায় আবার ফিরে যায় মা- বাবার কথা উপেক্ষা করে।আবার নতুন করে সংসার করতে থাকে।কিন্তু তখনও কি জানতো সে তার জন্য আরো চমক অপেক্ষা
করছে!একদিন আলেয়া তার আলমারী গুছিয়ে রাখতে
যেয়ে তার স্বামীর কোটের পকেটে কিছু কাগজ পায়।কৌতুহলবশত সে ওগুলো কিসের কাগজ দেখতে যেয়ে
দেখে তার বিরুদ্ধে স্বামী কোর্টে মামলা করেছে।এগুলো
সে কাগজ।স্পস্ট উল্লেখ করেছে সে নাকি তার ভাইদের দিয়ে স্বামীকে মেরে নগদ দুইলক্ষ টাকা ও বিশভরি
স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়েছে।কাগজ হাতে আলেয়া হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

সমাজে একটা মেয়ে কতোটা অসহায় আলেয়া তার প্রমাণ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬:৪১:০৬   ৮০৭ বার পঠিত   #  #  #




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

সাহিত্য’র আরও খবর


সাধক কবি রামপ্রসাদ সেন: স্বপন চক্রবর্তী
ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা “আমি তো গাঁয়ের মেয়ে ”
৫০ বছরের গৌরব নিয়ে জাবির বাংলা বিভাগ বিশাল ‘সুবর্ণ জয়ন্তী’ উৎসব আয়োজন করেছে
অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা- ‘তোমার খোঁজে ‘
অতুলপ্রসাদ সেন: ৩য় (শেষ ) পর্ব-স্বপন চক্রবর্তী
অতুলপ্রসাদ সেন;পর্ব ২-স্বপন চক্রবর্তী
অতুলপ্রসাদ সেন-স্বপন চক্রবর্তী
অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা ” যাবে দাদু ভাই ?”
বাদল দিনে- হাসান মিয়া
ইমাম শিকদারের কবিতা ‘ছোট্ট শিশু’

আর্কাইভ