বঙ্গ-নিউজঃ বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত পরিবারের সবচেয়ে নিঃসঙ্গ প্রাণীটির নাম, বাবা।
মায়েদের আদর আর ভালোবাসা দেখা যায় তাই সহজে উপলব্দিও করা যায়। কিন্তু বাবারা তাদের আদর-ভালবাসা সহজে প্রকাশ করেন না যা এখন আমার সন্তানের বাবাকে দেখেও বুঝতেছি।
বাবারা চোখের পানিও লুকিয়ে রাখেন। হয়তো সেটা বুঝার ক্ষমতা সব সন্তানের হয় না। “বাবা মানে মাথার উপর ছায়া, ভরসা, সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহসিকতা। বাবা মানে আমার সমস্ত পৃথিবীটা আমার”- ক’জন সন্তান বুঝতে পারে এর অর্থ।
বিয়ের আট-দশ-পনের বছর পরে বউয়ের সঙ্গে আর আগের সেই ভালোবাসাটা থাকে না। ভালোবাসাটা অভ্যাসে পরিণত হয়। নিত্যদিন আলু-পেঁয়াজ, বাচ্চার স্কুল-কলেজ ইত্যাদি আলাপে ঘুম নেমে আসে চোখে।
একান্ত নিজের কথা, নিজের ভাবনা, ভালোলাগা কিছু বলার অবকাশ হয় না। বিয়ের শুরুতে অথবা প্রেমিক জীবনে, হয়তো বাচ্চার নাম ঠিক করেছিলেন দুইজন মিলে। রোমান্টিসিজম ছিলো। সন্তান জন্মের পরে একরাশ দায়িত্ব কাঁধে চাপে।
সন্তানের স্কুল-ভালো রেজাল্ট-বিয়ে-বাড়ি-গাড়ি। এসব আলাপেই দুইজন ব্যস্ত থাকেন। এক সময় হয়তো দুপুরে অফিসের ব্যস্ততার ফাঁকে ফোন দিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে নানা অর্থহীন গল্প গুজবে ভালোবাসা খুঁজে পেতেন।
এখন দুপুরে ফোন দিলে হয়তো স্ত্রী বলে উঠেন, ‘ডিপোজিটের টাকাটা জমা দিয়েছো/কারেন্ট বিল, গ্যাস বিল দিয়েছো?’ অথবা ‘তোমার ছেলে এ অন্যায় করেছে’ ইত্যাদি। বাসায় ফিরে দেখেন, স্ত্রী ব্যস্ত বাচ্চাদের হোমওয়ার্ক অথবা পারিবারিক কোন একটা কাজ নিয়ে। যদি স্ত্রীকে বলেন, ‘আসো একটু নিরিবিলি কথা বলি, আমাদের কথা বলি।’ উত্তরে স্ত্রী হয়তো বলে উঠেন, ‘ঢং করার জায়গা পাও না? আমার রান্না আছে! একটু পরে বলবা ভাত দাও।’ কিংবা হয়তো বলে উঠবেন, ‘বাচ্চারা বড় হয়েছে, সে খেয়াল আছে?’
বাবারা যে, কতোটা নিঃসঙ্গ তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ মেলে যখন মায়েদের সঙ্গে তাদের অভিমান পর্যায় চলে। আমাদের বেশিরভাগ সন্তানই মা ঘেঁষা। বাবার সঙ্গে কেমন যেন একটা দূরত্ব থাকে।
সন্তানেরা ভাবে, ‘বাবা প্রাণীটা কেমন। সেই সকালে অফিসে বেরিয়ে যায়, বিকেলে অথবা রাতে ফেরে। অফিস থেকে ফিরে আসার পর ইচ্ছা অথবা অনিচ্ছায় সামাজিক-রাজনৈতিক কর্মকান্ডে কিছুটা হলেও জড়িয়ে পরতে হয়। সন্তানদের সাথে দেখা হলে কেবল পড়ালেখা অথবা পরীক্ষার রেজাল্ট জিজ্ঞাসা করে। এমন কেন এই লোকটা?’ মায়েরা সন্তানকে নিয়ে সংসার নামক পার্লামেন্টে ঐক্যজোট করে অর্থাৎ ঐক্যজোট হয়ে যায়। বাবারা দেখে তার সন্তানেরাও তার পক্ষে নেই। যাদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য তিনি বাবা-মা, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব সবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।
বাবারা তাদের ভাইবোন অথবা আত্মীয়-স্বজন যাদের সঙ্গে বিছানা শেয়ার করেছেন, এক পাতে খেয়েছেন- সেই আপনজনরাও সংসারের চাপে, জমি-বাড়ি-সম্পদ ইত্যাদি বৈষয়িক ঝামেলায় দূরের মানুষ হয়ে যায়। বিভিন্ন কারণে একসময়ের কাছের বন্ধুদের সঙ্গেও সেরকম যোগাযোগ থাকে না। কিংবা থাকলেও নানা রকম সামাজিক অনুষ্ঠান, বৈষয়িক কথাবার্তা, ছেলেমেয়ের রেজাল্টের খবর আদান-প্রদানে আটকে থাকে সেইসব যোগাযোগ।
সহকর্মীদের সঙ্গেও একটা কৃত্রিম গাম্ভীর্য বজায় রেখে চলতে হয়। যাকে বলে প্রফেশনালিজম। কারো সঙ্গে একত্রে বসে, নিজের মনের একান্ত কিছু কথা বলার কেউ থাকে না। কেউ না। মায়েরা হয়তো কথায় কথায় বলতে পারেন, আমি বাপের বাড়ি/বোনের বাড়ি চলে গেলাম। কিন্তু বাবাদের চলে যাবার মতো কোনো জায়গা থাকে না। একরাত কারো বাসায় গিয়ে থাকার মতো কোনো জায়গাও অবশিষ্ট নেই তাদের।
সংগৃহীত
বাংলাদেশ সময়: ১২:৪৬:৪৭ ৫১৩ বার পঠিত