বঙ্গ-নিউজ: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের ব্যয়ের হিসাব নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে না দেওয়ায় বিএনপিসহ ৩৮টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
দলগুলোকে আগামী সাত দিনের মধ্যে চিঠি দিয়ে সতর্ক করবে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি। ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘ভোটের পর আমরা ৯০ দিন অপেক্ষা করেছিলাম। নির্দিষ্ট সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের আয় এবং ব্যয়ের হিসাব দিয়েছে। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো এখনও হিসাব জমা দেয়নি। আমরা তাদের সাত দিনের মধ্যে চিঠি দেব। তারা ৩০ দিনের মধ্যে যেন আয়-ব্যয় জমা দেয়। এরপরও এ সব দল যদি জমা না দেয়, তাদের বিরুদ্ধে আইনত যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সেটি কমিশন নেবে।’
ইসি সচিব জানান, যেহেতু প্রতিটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের একটি রেজিস্ট্রেশন নম্বর আছে, যা নির্বাচন কমিশন থেকে রেজিস্ট্রেশন নিতে হয়। সেহেতু ইসির রেজিস্ট্রেশন বাতিল করারও এখতিয়ার আছে। তিনি জানান, গেল ৩১ মার্চ দল এবং প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয়ের তথ্য জমা দেওয়ার শেষ সময় থাকলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ছাড়া কোন নিবন্ধিত দল এখনও তাদের নিজ দল ও প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব দেয়নি। নিবন্ধিত ৪০ দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ জমা দিয়েছে। এছাড়া একটি দল সময় চেয়েছে। বাকি ৩৮ দল সময় চায়নি, হিসাবও জমা দেয়নি। এ ৩৮ দলের তলিকায় বিএনপিও রয়েছে। ফলে এসব দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে ইসি।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ৪৪ সিসিসি ধারায় বলা আছে, প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে নির্বাচন শেষ হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে তাদের নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব ইসিতে জমা দিতে হবে। ৪৪ডি ধারায় বলা আছে, কোন দল ৯০ দিনের মধ্যে ব্যয়ের হিসাব জমা দিতে না পারলে ইসি তাদের সতর্ক করে নোটিশ দিয়ে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে হিসাব জমা দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারবে। এ সময়ের মধ্য কোন দল হিসাব জমা দিতে ব্যর্থ হলে ইসি তাদের ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে হিসাব জমা দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারবে। কোন দল ওই ধাপেও ব্যর্থ হলে ইসি সে দলের নিবন্ধন বাতিল করতে পারবে।
গেল বছরের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি, জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলই এ নির্বাচনে অংশ নেয়। আইন অনুযায়ী এসব দলের নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব ইসিতে জমা দেওয়ার সময়সীমা ৩১ মার্চ শেষ হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ছাড়া কোন দল এখন পর্যন্ত হিসাব জমা দেয়নি। আরপিওর ৪৪সি ধারা অনুযায়ী, সংসদ নির্বাচনের বিজয়ী প্রার্থীদের নাম গেজেট প্রকাশের পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব বিবরণী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হয়। একই সময়ে হিসাব বিবরণীর একটি অনুলিপি সত্যায়িত করিয়ে ডাকযোগে (রেজিস্টার্ড) ইসিতে পাঠাতে হয়। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের শেষেও প্রার্থীদের অনেকে নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব ইসিতে জমা দেননি। তবে ইসি এসব প্রার্থীর বিরুদ্ধে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে আদালতে মামলা করেছিল।
জানা যায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটি রাজনৈতিক দল সর্বোচ্চ ব্যয় করতে পারে সাড়ে চার কোটি টাকা। আইন অনুযায়ী নির্ধারিত ব্যয়সীমার মধ্যেই প্রার্থী ও দলকে থাকতে হবে। অন্যথায় জেল-জরিমানা হতে পারে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, যে দল থেকে সর্বোচ্চ ৫০ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, সে দল সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারে। সর্বোচ্চ ১০০ প্রার্থীর জন্য দেড় কোটি টাকা ব্যয় করা যায়। সর্বোচ্চ ২০০ প্রার্থীর জন্য তিন কোটি টাকা এবং ২০০’র বেশি প্রার্থী দিলে সংশ্লিষ্ট দল সর্বোচ্চ সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয় করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয় করতে পারবে। কারণ, এ তিন দলের প্রার্থী ছিল ২ শতাধিক যথাক্রমে ২৫৮, ২৪২ ও ২৯০। আর জাতীয় পার্টি ব্যয় করতে পারবে তিন কোটি টাকা। দলগুলো চাঁদা ও অনুদানসহ অন্যান্য খাত থেকে আয় করতে পারে। তবে নির্বাচনে ব্যয় করতে হয় নির্ধারিত খাতে। এগুলো হলো দলীয় প্রধানের ভ্রমণ, পোস্টার, প্রচার কাজের জন্য ব্যয়।
আওয়ামী লীগ একাদশ সংসদ নির্বাচনের ব্যয়ের যে হিসাব দিয়েছে, সেটাতে দেখা যায়, দলটি এবার একাদশ সংসদ নির্বাচনে ব্যয় করেছে ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। দশম সংসদ দলটির নির্বাচনী ব্যয় ছিল প্রায় ২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম জানান, নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনে আইনি বাধ্যবাধকতা মেনে যথাসময়ে ব্যয়ের বিবরণী জমা দেওয়া হয়েছে। এবারও কমিশনে ব্যয়ের হিসাব দাখিল করা হয়েছে। ২০০৮ থেকে ২০১৪ সালে নির্বাচনী ব্যয় কিছুটা বেড়েছিল। এবার কমেছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এবার আমাদের একটি জিনিস উল্লেখযোগ্য, অন্য বছর অনেক সময় দলের মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এবার আর সেটি করা হয়নি। সেদিক থেকে আমাদের ব্যয় কম। আবার এবার আমরা আয় পেয়েছি বেশি; অনেকেই অনুদান দিয়েছেন।’
এইচটি ইমাম জানান, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের ব্যয় নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হয়েছে। দলের প্রার্থীরা আইনের বিধান মতে এরই মধ্যে স্ব স্ব রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ব্যয়ের হিসাব দাখিল করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৪৯:২৬ ৫১৫ বার পঠিত #bangla news #bangladeshi News #bd news #bongo-news(বঙ্গ-নিউজ) #জাতীয় #শিরোনাম