আম্রপালী এক বর্ষাভেজা দিনে তার ”আম্রকুন্জ “প্রাসাদের বরান্দা থেকে দেখলেন এক বৌদ্ধ তরুণ সন্ন্যাসীকে | তাঁর রূপে মুগ্ধ হলেন বৈশালীর রাজনর্তকী | বৌদ্ধ তরুণ সন্ন্যাসীকে খুব মনে ধরলো আম্রপালীর। ভাবলেন, যেভাবেই হোক একে বশ করতেই হবে। দেশ বিদেশের মন্ত্রী বা রাজাগন তাঁর পায়ের কাছে পড়ে থাকেন | আর এ তো সামান্য এক তরুণ সন্ন্যাসী | এখন প্রশ্ন হলো বর্ষাভেজা দিনে বৌদ্ধ তরুণ সন্ন্যাসী ”আম্রকুন্জ “ এর সামনে কেন ? এ প্রশ্নের উত্তর দেবার জন্য রাজা বিম্বিসারের সম্পর্কে কিছু কথা বলতে হবে।
রাজা বিম্বিসারের রাজ্যে জৈনধর্ম ও বৌদ্ধধর্ম উভয়েই সমসাময়িককালে বিকাশ লাভ করেছিল। মহাবীর জৈন, গৌতমবুদ্ধ এবং রাজা বিম্বিসার প্রায় সমকালীন ব্যক্তিত্ব। রাজা বিম্বিসার বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করলেও জৈনধর্মসহ সে সময়ে প্রচলিত অন্যান্য ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন।
সম্রাট বিম্বিসার গৌতম বুদ্ধ অপেক্ষা পাঁচ বছর ছোট ছিলেন। বোধিলাভের (বোধি অর্থ পরম জ্ঞান) সাত বছর পূর্বে গৌতমের সঙ্গে বিম্বিসারের সাক্ষাত ঘটে। সিদ্ধার্থ সাক্ষাতের সময় গৌতম নিজেকে শাক্য বংশ এর রাজকুমার হিসেবে পরিচয় দিলে বিম্বিসার তাঁকে তার রাজধানীতে বসবাস করার অনুরোধ করেন। গৌতম তা প্রত্যাখ্যান করেন । তিনি রাজা বিম্বিসারকে বলেন, ‘মহারাজ! আমি সুখপ্রার্থী নই। আমি কপিলাবস্তুর রাজা শুদ্ধোদনের পুত্র। বুদ্ধত্ব লাভের আশায় আমি সবকিছু ত্যাগ করে সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করেছি।’ রাজা বলেন, ‘বৎস! আপনার পিতা আমার পরম মিত্র। আপনার উদ্দেশ্য জেনে আমি খুব খুশি হয়েছি। যদি আপনি বুদ্ধত্ব লাভ করেন আমাকে একবার দর্শন দেবেন। আমি আপনার সেবা করব, আপনাকে বন্দনা করব।’ রাজা বিম্বিসারের কথায় সিদ্ধার্থ সম্মতি প্রদান করে সেখান থেকে বের হয়ে যান।
তবে তিনি বোধিলাভ (বোধি অর্থ পরম জ্ঞান) করতে পারলে বিম্বিসারের নিকট ফিরে আসবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থে গৌতম বুদ্ধ বোধিলাভের দুই বছর পরে বিম্বিসারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় রাজা বিম্বিসারের বয়স হয়েছিল ঊনত্রিশ বছর।
সাক্ষাৎ এর দিনই বিম্বিসার বৌদ্ধ সংঘের সহস্রাধিক ভিক্ষুদের বসবাসের জন্য বেণুবন নামক একটি উদ্যানটি গৌতম বুদ্ধকে প্রদান করেন। বিম্বিসারের অনুরোধে বুদ্ধ অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে উপোসথ ব্রত পালনের বিধি প্রচলন করেন। আবার, বিম্বিসারের অনুরোধেই বুদ্ধ বর্ষাকালে পরিব্রাজন না করে একটি নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করে ”সাধনার বর্ষাবাস “নামক রীতি প্রচলন করেন।
রাজা বিম্বিসারের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছিলেন জীবক। তিনি খুবই বিখ্যাত চিকিৎসক ছিলেন। রাজার আদেশে তিনি বুদ্ধ ও ভিক্ষুসঙ্ঘের চিকিৎসা করতেন। তাঁদের স্বাস্থ্য পরিচর্যার বিষয়ে তিনি সর্বদা সচেতন থাকতেন। ভিক্ষুরা আগে পুরাতন ও পরিত্যক্ত কাপড় ধুয়ে শুকিয়ে সেলাই করে পরিধান করতেন। এতে ভিক্ষুদের অনেক রকম রোগ হতো। চিকিৎসক জীবক ভিক্ষুদের নীরোগ জীবন চিন্তা করেন এবং নতুন কাপড় পরিধানের বিধান দিয়েছিলেন। এরপর থেকে রাজা বিম্বিসারও ভিক্ষুদের নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন কাপড় দান করতেন। এভাবে রাজা বিম্বিসার বৌদ্ধধর্মের প্রচার-প্রসারে অবদান রাখেন।
যা হোক রাজা বিম্বিসারের পরামর্শে গৌতম বুদ্ধ ও তার অনুসারীরা বর্ষাকালে কোথাও ভ্রমণ করতেন না।বর্ষায় তাঁরা পরিব্রাজন করতেন না।| আশ্রয় নেন কোনও নগরের উদ্যানে, নগরবাসীর গৃহে ।
সেবার বর্ষায় আম্রপালীর বাসস্থান বৈশালী নগরীতে এসেছেন বৃদ্ধ তথাগত (গৌতম বুদ্ধ কে তথাগত বলা হয়) | সঙ্গে কয়েকশো শ্রমণ(অল্প বয়সী বৌদ্ধ ভিক্ষুকে শ্রমণ বলা হয়)। বর্ষার চারমাস এখানেই কাটাবেন তাঁরা । আজ এক তরুণ সন্ন্যাসী আম্রপালীর দরজায় ভিক্ষা প্রার্থী । বৌদ্ধ তরুণ সন্ন্যাসীকে খুব মনে ধরলো আম্রপালীর। ভাবলেন, যেভাবেই হোক একে বশ করতেই হবে। দেশ বিদেশের মন্ত্রী বা রাজারা তাঁর পায়ের কাছে পড়ে থাকেন | আর এ তো সামান্য এক তরুণ সন্ন্যাসী । আম্রপালী নিজে তাঁকে ভিক্ষা দিলেন । এত বছর আম্রপালী শুধু আহ্বান পেয়েই এসেছেন । তার সামান্য দর্শন পেলেই সবাই ধন্য হয় সেই আম্রপালীই কিনা এ তরুণ বৌদ্ধ ভিক্ষুকে আহ্বান জানালেন তাঁর প্রাসাদে অবস্থান করে বর্ষা অতিবাহিত করতে। কিন্তু সন্ন্যাসী বা বৌদ্ধ শ্রমণদের বিলাসবহুল জীবনযাপনের কোন অনুমতি তাঁদের ছিল না। তথাগত (গৌতম বুদ্ধ) তাদের সে অনুমতি দেন নাই। কিন্তু সুন্দরী রমণীর তাও আবার যেনতেন সুন্দরী রমণী নয় আম্রপালীর মত সুন্দরী রমণীর এ আহবান কেমনে অবহেলা করবে এ তরুণ সন্ন্যাসী ?
এ তরুণ সন্নাসী কি পেরেছিল রুপে যার আগুণ জ্বলে সেই আম্রপালীর মত সুন্দরী রমণীর এ আহবান উপেক্ষা করেতে ? এ প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে আগামী পর্বে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:৪৯:৩৮ ৯১৫ বার পঠিত #bangla news #bangladeshi News #bd news #bongo-news(বঙ্গ-নিউজ) #জাতীয় #শিরোনাম