গৌতম বুদ্ধের প্রতি ঈর্ষাপরায়ণ ছিলেন অজাতশত্রু ।কিন্তু বুদ্ধ ও বৌদ্ধ ধর্মের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন অজাতশত্রু এর পিতা মহারাজ বিম্বিসার । গৌতম বুদ্ধের প্রতি ঈর্ষাপরায়ণ অজাতশত্রু বিম্বিসারকে হত্যার চেষ্টা করেন। বুদ্ধের অহিংসা মতাদর্শে বিশ্বাসী বিম্বিসার এই ঘটনার পরও তাঁর পুত্র অজাতশত্রু কে ক্ষমা করে দেন। ক্ষমা পাবার পরে অজাতশত্রু আরো ভয়ংকর হয়ে উঠেন। অজাতশত্রু তার পিতা মহারাজ বিম্বিসার ও তাঁর উপদেষ্টামণ্ডলীকে গৃহবন্দী করে নিজেকে মগধের (বিহারের)শাসক হিসেবে ঘোষণা করেন। ৪৯১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গৃহবন্দী অবস্থায় বিম্বিসারের মৃত্যু ঘটে। এই সময় অজাতশত্রু গৌতম বুদ্ধকেও হত্যার চেষ্টা করেন। কথিত আছে অজাতশত্রু তাঁর পিতা মহারাজ বিম্বিসারকে কারাগারে প্রেরণ করার পর তিনি পিতার হাত-পা কেটে তাতে নুন এবং অম্ল মাখিয়ে কষ্ট দেন। এরপর তাঁকে কয়লার আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেন। এই শোকে তাঁর মা মৃত্যুবরণ করেছিলেন। আগেই বলেছি অজাতশত্রু এর পিতা বিম্বিসার ছিলেন গৌতম বুদ্ধের ভক্ত। বিম্বিসারতাঁর অন্তঃপুরে বুদ্ধের পায়ের নাখ ও চুলের উপর একটি স্তূপ নির্মাণ করেছিলেন। অজাতশত্রু বিম্বিসার এর মৃত্যুর পর এই স্তূপে পূজা বন্ধ করে দেন। তিনি এই ঘোষণা দেন যে, বুদ্ধের প্রতি কেউ শ্রদ্ধা নিবেদন করলে তার শিরশ্ছেদ করা হবে। একদিন দাসী শ্রীমতী এই আদেশ লঙ্ঘন করে স্তূপ ধুয়ে সেখানে প্রদীপ জ্বালিয়ে দেন। রাজার আদেশে তার শিরশ্ছেদ করা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত “পূজারিণী” কবিতায় এ ঘটনাটি বর্ণনা করা আছে।
বুদ্ধকে পূজার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করার এই কাহিনি নিয়েই রবীন্দ্রনাথ রচনা করেছেন ‘নটীর পূজা’। মূল কাহিনির শ্রীমতীই রবীন্দ্রনাথের নটী। বিম্বিসার এখানে স্বেচ্ছায় সিংহাসনত্যাগী এবং ছেলের কাছে রাজ্যভার অর্পণকারী। পিতৃহন্তারক অজাতশত্রু এই নাটকে কেবলই রাজা। “পূজারিণী”কবিতাটির মূল ভাব অবলম্বন করে নটীর পূজা নৃত্যনাট্য টি রচনা করা হয়। পরে রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর নটীর পূজা এর কাহিনি অবলম্বনে সিনেমাও বানান।এটি ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পরিচালিত একমাত্র চলচ্চিত্র।
পূজারিণী কবিতা নিয়ে ‘শেষ আরতি’ নামেযাত্রা পালাও রচিত হয়। ইতিহাসকুখ্যাত এ্ অজাতশত্রু আক্রমণ করেছিলেন বৈশালী | তাঁর হাতে বন্দি হন আম্রপালী | বন্দিনী নগরবধূর রূপে মুগ্ধ অজাতশত্রু পুড়িয়ে দিয়েছিলেন গোটা বৈশালী | শুধু আম্রপালীর কারাগার বাদ দিয়ে | নগরবাসীর এই অবস্থা দেখে বিধ্বস্ত হয়েছিলেন বৈশালীর রাজ নর্তকী আম্রপালী | কিন্তু তিনি মগধ রাজাদের কুক্ষিগত হননি | অজাতশত্রু প্রজাদের গৌতম বুদ্ধের কাছে যাওয়া নিষেধ করে দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি পিতাকে হত্যা করার জন্য দারুন মনোকষ্টে ভুগতেন। এই পরিতাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তিনি বুদ্ধের সাথে দেখা করেন। তিনি গৌতম বুদ্ধের সাথে দেখা করে দীর্ঘ আলাপ করেছিলেন । পরিরিশেষে তিনি বুদ্ধের কাছে পিতৃহত্যার কথা স্বীকার করে তার প্রতিকার প্রার্থনা করেছেন। থাক সে সব কথা। আম্রপালীর কথাতেই ফিরে আসি- আম্রপালীর কাছে সবাই প্রেম-ভিক্ষা করতো । কেউ পেত কেউ পেত না। এই আম্রপালী একবার এক সাধারণ (সাধারন বলতে মন্ত্রী-রাজা নয়-অর্থাৎ ক্ষমতাশীন কেউ নয়) মানুষের কাছে প্রেম-নিবেদন করে ব্যর্থ হন। এ ঘটনা আম্রপালীর জীবনের মোড়ই ঘুরে দেয়। শুনবেন সে কাহিনী ?
বাংলাদেশ সময়: ১৩:৩৬:৩২ ২০১৩ বার পঠিত #bangla news #bangladeshi News #bd news #bongo-news(বঙ্গ-নিউজ) #জাতীয় #শিরোনাম